খবরা-খবর
আসানসোলে নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকী কনভেনশন থেকে পার্টিতে ঐক্যবদ্ধ হলেন কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তি
Convention in Asansol

“ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে বাংলা বামপন্থাকেই চায়। তৃণমূল প্রচার করেছিল বাংলা ‘নিজের মেয়েকে চায়’ — এটা ঠিক নয়। এখানে রয়েছে বামপন্থী মেজাজ, বামপন্থী ঐতিহ্য। তবে এতদিন যেভাবে চলেছে সেই ব্যাকরণের বাইরে আজকের সময়কালে শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, দলিত আদিবাসী, ছাত্র-যুব সহ অন্যান্য বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে সংগ্রামী বামপন্থাকে এগিয়ে যেতে হবে। জলবায়ুর প্রশ্ন, বেকারত্বর প্রশ্ন, মানবাধিকার রক্ষা যেখানে বামপন্থার গোড়ার কথা হয়ে উঠবে।”

আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনের পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত কনভেনশনে এ কথা বললেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।

গত ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক নভেম্বর বিপ্লবের ১০৪তম দিবসে আয়োজিত এই কর্মসূচি থেকে সিপিআই(এমএল) এসওসি (স্টেট অর্গানাইজিং কমিটি) সংগঠন লিবারেশন যোগ দিল। শুরুতে লাল পতাকা উত্তোলন ও শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান হয়। তারপর পার্টিতে যুক্ত হওয়া নেতৃবৃন্দ মঞ্চে দাঁড়িয়ে লাল পতাকা হাতে তুলে ধরে ব্যক্ত করেন ঐক্যের অঙ্গীকার। যার মধ্যে অন্যতম উখড়া এলাকার দীর্ঘদিনের সুপরিচিত শ্রমিক নেতা সোমনাথ চ্যাটার্জী, ঝাড়গ্রাম-গোপীবল্লভপুর-জঙ্গলমহলের প্রতিষ্ঠিত আদিবাসী নেতা লেবাচাঁদ টুডু, মেদিনীপুর শহরে পৌরকর্মী আন্দোলনের নেতা তপন মুখার্জি, পূর্ব বর্ধমান জেলার আউসগ্রাম-গলসি গ্রামাঞ্চলের কৃষক সংগঠক বদরে আলম, মোজাম্মেল হক সহ এক সারি কর্মী ও সংগঠক সহ কয়েকশত সংখ্যক সদস্যরা। এদের স্বাগত জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এই কনভেনশন থেকে বেশ কয়েকজন দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কমরেড আমাদের পার্টির সাথে ঐক্যবদ্ধ হলেন। ঐক্যের এই প্রক্রিয়া সকলের মধ্যেই নতুন আশা জাগাচ্ছে।”

আসানসোল সহ সমগ্র এলাকায় কনভেনশনের প্রচার হয়েছিল বেশ নজরকাড়া। এর প্রভাবে বেশ কিছু সংখ্যক বামপন্থী মানুষ আগ্রহের সাথে কনভেনশনে আসেন। শুরুতে বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য কমিটি সদস্য অতনু চক্রবর্তী, জয়তু দেশমুখ। সঞ্চালনা করেন পার্টির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক সুরিন্দর কুমার। সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কার্তিক পাল, সলিল দত্ত প্রমুখ। কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেন বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, হুগলী, হাওড়া জেলা থেকে আগত কয়েকশত কর্মী ও নেতৃবৃন্দ। বক্তব্য রাখেন সোমনাথ চ্যাটার্জী। তিনি বলেন, “আজকের দিনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্তিত্ব নিয়ে থেকে লাভ নেই। পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করতে লিবারেশনের মতো বৃহৎ সংগঠনের সাথে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।”

November Revolution Anniversary

 

লেবাচাঁদ টুডু বলেন, “জল-জঙ্গল-জমির অধিকারের লড়াইয়ের সাথে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে যুক্ত করেই আমরা এগিয়ে যাবো। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ভারতের বুকে প্রকৃত এক কমিউনিস্ট পার্টি। এই পার্টির নীতি আদর্শ ও শক্তি দেখে আমি সাহস ও ভরসা পাচ্ছি। তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বিকাশের লক্ষ্যে আমরা এই পার্টিতে যোগ দিলাম। এ রাজ্যের মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম জেলার বিরাট একটা অংশ যাকে জঙ্গলমহল বলা হয় সেখানে একটি উন্নয়ন পর্যদ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখানকার আদিবাসী জনগণের যে স্বতন্ত্র বিশেষ পরিচিতি রয়েছে তার কোনও স্বীকৃতি নেই। আদিবাসী জনগণের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। তাই আমরা তাঁদের জন্য স্বশাসনের দাবি জানাচ্ছি। জমি, ফসলের দাম, কাজ, ন্যায্য মজুরি — এই সমস্ত দাবিতে আমরা বড় বড় কৃষক আন্দোলন করেছি। আজ সেই আন্দোলনকে আরও ব্যাপক ও তীব্রতর করে তুলতে হবে।” বক্তব্য রাখেন দলিত সংগঠনের নেতা শক্তিপদ বাদ্যকার। তিনি আম্বেদকারের আদর্শ ও কমিউনিস্ট মতাদর্শকে সমন্বয় করে দলিত গরিবদের জাগরণ ও সমাজের আমূল-পরিবর্তনের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। আসানসোল এলাকার সুপরিচিত বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন নেতা সি কে দাস ’৬০-’৭০ দশকের স্মৃতিচারণা করে বলেন, সে সময় আমরা সাড়া জাগানো শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছিলাম। সমগ্র শিল্পাঞ্চলে বামপন্থার একটা শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু আজ নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যাছে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বিরাট মাত্রায় জনসমর্থন লাভ করছে। বামপন্থা এক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। বামপন্থীদের মধ্যে সরকারি ক্ষমতার মোহ, এমএলএ-এমপি-কাউন্সিলার-মেয়র প্রভৃতি পদের মোহ, সেগুলিকে রক্ষা করার জন্য আপসমুখী চরিত্র বিকাশ লাভ করেছে। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আজ পু্ঁজিবাদী শক্তি বিপুল মাত্রায় প্রচার চালিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাকে মোকাবিলা করার উপযুক্ত পাল্টা প্রচার সংগঠিত করতে হবে, এ কাজে উপযুক্ত কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। মানুষ বিকল্প চাইছে, ত্রুটি দুর্বলতা কাটিয়ে আমাদের যথাযোগ্য নেতৃত্বের ভুমিকা নিতে হবে।

সব শেষে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, আজ নভেম্বর বিপ্লবের ঐতিহাসিক দিন। এর গৌরবময় ইতিহাস কোনোদিনই ম্লান হবে না, যা থেকে আমরা অবশ্যই শিক্ষা নেব। রাশিয়ার মতো পিছিয়ে পড়া দেশে কমিউনিস্ট শক্তি কিভাবে বিপ্লব সংগঠিত করেছিল, গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা তারা জাগিয়ে তুলেছিল, কি বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। যে অধিকারের জন্য আজকে আমরা লড়াই করছি — খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সামাজিক নিরাপত্তা, মহিলাদের সমানাধিকার, কাজের অধিকার; আমাদের দেশে যে বুনিয়াদি দিকগুলির কোনও স্বীকৃতি নেই রাশিয়ার বুকে ১০৪ বছর আগে সেগুলি মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটাও বাস্তব সেই সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত আজ আর নেই। সেটা কেন পড়ে গেল বুঝে নিতে হবে। বাইরের কোনও আক্রমণ থেকে নয়, ভেতর থেকেই কোথাও সেই সম্ভাবনা বা গতি থমকে গিয়েছিল। সেখানে গণতন্ত্রের প্রশ্নটা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজ ২১ শতকে পৃথিবীর যেখানেই সমাজতন্ত্র গড়ে উঠবে তারা রাশিয়া থেকে এই শিক্ষা নেবে।

কিন্তু এর পাশাপাশি এটাও দেখা যাচ্ছে আজকের দুনিয়ায় পুঁজিবাদ মানবজাতির সংকট মোকাবিলা করতে পারছে না। যেমন তারা অতিমারী মোকাবিলা করতে পারছে না। খোদ আমেরিকার অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই, সবটাই ইনসিওরেন্স কার্ড ভিত্তিক। কার্ড তো চিকিৎসা দেবে না, সেখান থেকে বেসরকারি ব্যবসায়ীরা টাকা পেয়ে যাবে। কিন্তু চিকিৎসার জনমুখী কোনও ব্যবস্থাপনা আদৌ গড়ে উঠছে না। আজ জলবায়ু নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর কখনও একাধিকবার ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। এর কারণ প্রাকৃতিক কোনও বিষয় নয়, যে আর্থিক ব্যবস্থা চলছে তার মধ্যেই এর কারণটা রয়েছে। অর্থাৎ পুঁজিবাদ মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। কিন্তু এর বিকল্প কি? আজ কোনও দেশ হয়তো মডেল হিসাবে নেই, কিন্তু মানুষই বিকল্প গড়ে তুলবে। সংকট মানেই সম্ভাবনা। সেখানে রুশ বিপ্লব অবশ্যই অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমাদের দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনে অনেকগুলি ধারা ছিল তাদের অনেকেরই অনুপ্রেরণা ছিল নভেম্বর বিপ্লব।

আজ আমাদের দেশের পরিস্থিতির বিকাশ নানা দিক থেকে অভূতপূর্ব, যা আমরা কোনোদিনই ভাবিনি। যেমন আগামী ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করা হবে। দেশের বর্তমান শাসক বিজেপি ঘটা করে “অমৃত মহোৎসব” পালন করছে। যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিল, প্রকাশ্যে ব্রিটিশের দালালি করেছিল তারা এখন ইতিহাসের জবরদখল করতে চাইছে। এদের হাত থেকে ইতিহাসকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। ইতিহাসকে জানা বোঝা, তাকে বাঁচিয়ে রাখার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই বিশেষ পরিস্থিতিকে আমরা ফ্যাসিবাদ বলছি। ইতালিতে ফ্যাসিবাদ জন্ম নেয়, জার্মানিতে সমাজতন্ত্রের নাম নিয়ে ফ্যাসিবাদ ছিল, যার ভয়াবহতা আমরা জানি, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। সেই ফ্যাসিবাদের অনুগামীরা আজ আমাদের দেশে শাসন ক্ষমতায়। এই আরএসএস ১০০ বছর আগে জন্ম নিয়েছিল। তার প্রতিষ্ঠাতা গোলওয়ালকার হিটলারের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিল। তাই ফ্যাসিবাদের সাথে ওদের গাটছড়াটা নিছক আজকের নয়, জন্মসূত্রে পাওয়া। ফ্যাসিবাদ কোনও রাজনৈতিক স্বাধীনতাই দেবে না।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা বলা যায়, যা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সেখানে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে বিরোধিতায় পথে নেমেছে। কিন্তু ত্রিপুরার বুকে যে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাবলী ঘটছে সেটা সম্পূর্ণ রাজ্যের বিজেপি সরকারের প্রশ্রয়ে ঘটছে। একেই আমরা ফ্যাসিবাদ বলছি। অর্থাৎ প্রকাশ্যে খোলাখুলিভাবে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা, মিথ্যাচার চালিয়ে যাওয়া।

Communist Revolutionary Forces unite in the party

 

এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহসের দরকার। একজন ব্যাক্তিও এই সাহস দেখাতে পারে। যেমন ৮৪ বছর বয়সী ফাদার স্ট্যান স্বামী দেখাতে পেরেছিলেন। তাই সাহসের কোনও বয়স নেই। অনেকে বলেন আন্দোলন কোথায়? নেতৃত্বের জন্য মানুষ অপেক্ষা করে না, তারা আন্দোলনের পথে এগিয়ে যায়। যেমন পাঞ্জাবের কৃষকরা, হরিয়ানার কৃষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় কাঁটাতার-পেরেক দিয়েও ওরা কৃষকদের ঠেকাতে পারেনি। এক বছর হতে চলল, লক্ষ লক্ষ কৃষক রাস্তায় ছাউনি করে আন্দোলন জারী রেখেছে। এটাই বিরোধী পক্ষ। চলমান প্রতিরোধের বিরোধীপক্ষ। নাগরিক আইন সংশোধন করে ধর্মের নামে নাগরিকদের বিভাজনের বিরুদ্ধে শাহিনবাগে এমনই লড়াই গড়ে উঠেছিল। রাজ্যে রাজ্যে, জেলায় জেলায় সে লড়াই ছড়িয়ে পড়েছিল। রোহিত ভেমূলার প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার পর জয়ভীম ও লাল সেলাম স্লোগান একসাথে রাজপথ কাঁপিয়ে শাসকের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। ছাত্ররা আম্বেদকর ও ভগত সিংকে একসাথে মিলিয়ে নতুন স্লোগান তুলে পথে নেমেছিল। জাতপাত নির্মূলীকরণ নিয়ে আম্বেদকরের বিপ্লবী ভাবনা স্বাধীনতা আন্দোলনের ময়দান থেকে উঠে এসেছিল। তাই আজকের দিনে যেমন বড় সংকট বড়ো মাত্রায় আক্রমণ নেমে আসছে পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বড় মাত্রায় জনগণের প্রতিরোধ। রাঁচীতে আমরা আদিবাসী জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রামকে দেশব্যাপী সংগঠিত করার লক্ষে এক আদিবাসী কনভেনশনের আয়োজন করেছি। আদিবাসীরা হলেন ফ্রন্টলাইন প্রতিরোধের শক্তি। তারা প্রকৃতির সবচেয়ে কাছে থাকে। তাই প্রকৃতিকে লুঠ করার বিরুদ্ধে সবার আগে তারাই রুখে দাঁড়াবে। কর্পোরেটদের জল-জঙ্গল-জমি লুঠের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সর্বভারতীয় সংঘর্ষ মোর্চা গঠন করা যায় কিনা সেই প্রচেষ্টা আমরা চালাচ্ছি।

আমাদের সামনে আগামী কর্তব্য হল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শগত ভাবে এবং সাহসের সাথে রুখে দাঁড়াতে হবে। কৃষক ও শ্রমিকদের যে বড় বড় গণআন্দোলনগুলি গড়ে উঠছে, দেশ বিক্রীর বিরুদ্ধে যে যে প্রতিরোধ সংগঠিত হয়ে চলেছে সেগুলির সাথে যুক্ত থাকতে হবে। এ জন্য আমাদের মনের প্রসারতা রাখতে হবে। ধৈর্য সহকারে ঠান্ডা মাথায় সকলকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ফ্যাসিবাদকে ঠেকাতে একা বামপন্থীরা পারবে না। তাই বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতেই হবে।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্ষমতা দখলে মরীয়া হওয়া একটা বড় বিপদ হিসাবে সামনে এসেছিল। কিন্তু বাংলা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ রাজ্যের বুকে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে, যে গৌরবময় অতীত রয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই বাংলা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, যুব, মহিলাদের আন্দোলনের উপর দাঁড়িয়ে আবারও বামপন্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। পাশাপাশি ব্যাপকতম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচনের বাইরে এবং ভেতরে এই ঐক্য গড়ে উঠবে। ৫০০ কৃষক সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ ও দর্শনের লোক এক সাথে লড়াইয়ের ঐক্য গড়ে তুলেছে যা আজকের সময়ে অভূতপূর্ব ভাবে দেখা যাচ্ছে। এর সাথে বামপন্থার আদর্শ ও সাহসকে মেলাতে হবে। কেবল পুরানো সূত্র ধরে এটা এগুবে না। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চয়ই শিক্ষা নেব, কিন্তু আজকের লড়াইয়ের জন্য নতুন উৎসাহ, উদ্দীপনা, অঙ্গীকার নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। এই আসানসোল শিল্পাঞ্চলে সংগঠিত ক্ষেত্র ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, পাবলিক সেক্টর চরম সংকটের মুখে। আজকের সময়ে শ্রমিকশ্রেণি নতুন ভাবে গড়ে উঠছে৷ ঠিকা কন্টাক্ট শ্রমিক, গিগ ওয়ার্কার, শিক্ষিত যুবকরা, মিড-ডে-মিল, আশা, অঙ্গনওয়ারী প্রকল্প কর্মীরা শ্রমিক আন্দোলনে নতুন নতুন উপাদান হিসাবে সামনে এসেছে। এদের সংগঠিত করার কাজে এগিয়ে যেতে হবে। আসানসোল এলাকা, যেখানে এক দিকে সন্ত্রাস, হিংসা দেখা গেছে অপর দিকে সম্প্রীতির বার্তা উঠে এসেছে। নিজের ছেলেকে হারানোর পরও একজন বাবা সাম্প্রদায়িক হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন, এক উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন, একে ধরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বামপন্থার সামনে শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র-যুব আন্দোলন, জঙ্গল মহলের আদিবাসীদের আন্দোলন, মানবাধিকার রক্ষা এসব কিছুই এজেন্ডা হয়ে উঠবে। আগামী দিনগুলিতে ২০২২ সালের শুরুতে দেশের বুকে কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ডে নির্বাচন আসন্ন।

এগুলি গুরুত্বপূর্ণ, মানুষ সেখানে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো রাস্তার লড়াই। এগুলিতে আমাদের আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। এগুলি আমাদের শক্তি যোগাচ্ছে, নতুন অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করছে। আমাদের নতুন রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে আরও বেশি করে নতুন প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। নভেম্বর বিপ্লবকে বলা হয় সেটা ছিল দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন। বাস্তবে আজও দুনিয়া কাঁপছে। বিপ্লবী সমাধান, আমূল পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। বিপ্লব অবশ্যই সম্ভব, যদি সাধারণ মানুষ একবার রুখে দাঁড়ায়। মুনাফার এক পাহাড়ের নীচে আমরা চাপা পড়ে আছি। আমাদের একটা গন্ডির মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার প্রাসাদটা ভেঙে পড়বেই। আমাদের সবাইকেই বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার সময়কালে জীবনের প্রথম দিনে যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল তাকে আবারও ফিরিয়ে আনতে হবে। সাহসের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। এ সাহসের কোনও বয়স নেই।

খণ্ড-28
সংখ্যা-39