প্রতিবেদন
পাঠকের চিঠি : মানুষ বাঁচুক নিজের মত, ধর্ম নিয়ে - বন্ধ হোক সাম্প্রদায়িক হামলা, হত্যা
stop communal attacks

ভারতে একদিকে যখন কৃষকদের নেতৃত্বে চলছে মোদী-শাহের দেশ বেচার বিরুদ্ধে আন্দোলন, অন্যদিকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উগ্র ধর্মান্ধতা। বাংলাদেশেও অতি সম্প্রতি এর বিপরীত সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র ও হামলা সংগঠিত হল। তারপর আবার সেই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমবঙ্গে হামলা লাগানোর চেষ্টা, তারপর শিখ সম্প্রদায়ের কট্টর ও গোঁড়া গোষ্ঠীর সিঙ্ঘু বর্ডারে আন্দোলনরত দলিত কৃষক লখবির সিং-কে হাত পা কেটে খুন, জলপাইগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সফরকালে ময়নাগুড়িতে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর অশান্তি লাগানোর চেষ্টা সহ ঘটনা পরম্পরায় দীর্ঘ হচ্ছে এই তালিকা। সম্প্রতি ময়নাগুড়ির ঘটনাই যদি লক্ষ্য করা যায়, আমরা দেখেছি বিজেপি সমর্থকেরা জড়ো হয়ে সাম্প্রদায়িক জিগির তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ তাড়া করলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর সেদিনই সন্ধ্যা ৭.৩০টা নাগাদ বাঁকালি বাজারে প্রায় ৫০ জনের মত বাহিনী ‘হিন্দু বাঁচাও, মুসলিম তাড়াও’ শ্লোগান দিতে দিতে বাজারের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে। তারপরে বার্ণিশ এলাকার গোলারবাড়ি গ্রামে মসজিদ ও সংলগ্ন মাদ্রাসার সামনে একটি মিছিল নিয়ে এসে আওয়াজ তোলা হয়, ‘মুসলিম তাড়াও, দেশ বাঁচাও’ ইত্যাদি। সেখানে উপস্থিত সংখ্যালঘু নমাজীদের বলা হয় যে মাইক ব্যবহার করে আজান দেওয়া যাবেনা। এই কথা বলে পরিকল্পিতভাবে বচসা তৈরি করা হয় এবং মিছিল থেকে ঢিল, পাটকেল ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় মানুষজনের ওপর হামলা নামানো হয়। স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষকের খোঁজ চলতে থাকে। সেই সময় স্থানীয় মুসলিম জনগণ প্রতিরোধ করলে তারা পালিয়ে যায়। এবং কিছুটা দূরে গিয়ে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। ঢিলের আঘাতে ঘটনাস্থলে তিনজন সংখ্যালঘু গ্রামবাসী আহত হয়। আহত দু’জনকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তৃতীয় ব্যক্তি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে গুরুতর আঘাত নিয়ে চিকিৎসাধীন। এলাকায় গত রাত থেকে পুলিশ ও আরএএফ মোতায়েন করা হয়েছে। তবুও এলাকাজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে।

সিঙ্ঘু বর্ডারে আমরা দেখেছি কিভাবে আন্দোলনরত কৃষকেরা নিহাঙ্গ গোষ্ঠীর আক্রমণের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন, অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন এবং উক্ত গোষ্ঠীর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। কিন্তু প্রশ্নটা গভীরে। কারা এই নিহাঙ্গ? ১৬৯৯ সালে শিখ সৈন্যদল খালসার উৎপত্তি হয়। তারপর উক্ত দল দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। নিহাঙ্গ-এর উৎপত্তি এর অঙ্গাঙ্গীভাবেই। এরা বরাবর অত্যন্ত আগ্রাসী এবং কঠোর ধর্মীয় নিয়মাবলীর অনুসরণকারী। কট্টর এই গোষ্ঠী অত্যন্ত বেপরোয়া এবং পার্থিব কোনও কিছুর কাছেই মাথা নোয়াতে নারাজ।

লক্ষ্য করে দেখুন এই খুন, রক্ত কোনোটাই কিন্তু অধিকারের দাবিতে নয়। কোনোটাই কিন্তু জীবন-জীবিকা রুজি-রুটির জন্য বা শাসকের বিরুদ্ধে নয়।

বরং এই ধর্মীয় জিগির মানুষকে তার অধিকারের দাবিতে সরব হওয়া থেকে ভুলিয়ে রাখে, বিরত রাখে। পেটে খিদের আগুন জ্বললেও মাথার গেরুয়া ফেট্টি জ্বলতে থাকে। স্বার্থসিদ্ধি হয় ফ্যাসিস্টদের, মৌলবাদী শক্তির। ধর্ম বা ধর্মীয় সংস্থাসমূহ যখন রাষ্ট্র বা দেশের চালিকাশক্তির সঙ্গে যুক্ত হয় তখন তা উৎপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। সমাজ কাঠামোকে চালায় ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতিতে। আর রাষ্ট্র যখন শাসকশক্তির দ্বারা এরকম পক্ষপাতদুষ্ট হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় বিদ্বেষ-বিভাজনপ্রসূত সংখ্যাগুরুবাদের ‘স্বাভাবিকীকরণ’। ফলশ্রুতিতে, রক্ত, খুন, দেশের সম্পদ ধ্বংস, ব্যক্তিজীবন ও অধিকারে হস্তক্ষেপ, নির্যাতন সহ একের পর এক অন্ধকার নেমে আসে। ধিক্কার এই ঘটনা ও প্রবণতাকে। মানুষ বাঁচুক নিজের মত-ধর্ম নিয়ে, সাম্প্রদায়িক হামলা হত্যা বন্ধ হোক!

- সৌমি জানা

খণ্ড-28
সংখ্যা-38