রুশ বিপ্লবের প্রেরণা চির অম্লান
Russian Revolution

জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের আমলের (১৮৫৫–১৮৮১) আগে থেকেই রাশিয়া একের পর এক কৃষক বিদ্রোহে আলোড়িত হচ্ছিল। ১৮৫০ থেকে ১৮৬০-র মধ্যে রাশিয়া জুড়ে প্রায় আটশো কৃষক বিদ্রোহ হয়। ১৮৩৫ থেকে ১৮৬১-র মধ্যে বিদ্রোহীরা দুশো তিরাশি জন জমিদার বা কুলাককে খতম করে। এই বিদ্রোহের পুরোভাগে ছিল নারোদনিক বা জনগণের বন্ধুরা। রাশিয়ায় সামন্ততন্ত্রের দ্রুত অবক্ষয় দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু তার জায়গায় আধুনিক পুঁজিবাদ তখনো সেভাবে বিকশিত হয়ে ওঠেনি। ছাত্র-যুব এবং জনগণের প্রগতিশীল অংশ সামন্ততন্ত্র এবং জার শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ছিল এবং তা প্রায়শই ব্যক্তিহত্যার পথ বেছে নিত। জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ ও ঘৃণার বাতাবরণে ভরা রাশিয়ায় লেনিন বেড়ে উঠছিলেন। লেনিন ও তাঁর নেতৃত্বাধীন রুশ মার্কসবাদীরা অবশ্য নারোদনিকদের ব্যক্তিহত্যার পথ একেবারেই সমর্থন করেননি। তাঁরা মার্কসবাদের এক স্বতন্ত্র পথে জারতন্ত্রের অবসানের কথা ভেবেছিলেন, যা বলশেভিক বা কমিউনিস্ট মতবাদ হিসেবে খ্যাত। ১৯০৫ সালে যে বড়সড় বিপ্লব হয় তারফলেই রাশিয়ায় জার বাধ্য হন জনগণের ভোটাধিকারে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমুলক একটি সংসদীয় ব্যবস্থা (রাশিয়ান দ্যুমা) প্রবর্তন করতে। জারের নিয়ন্ত্রণাধীন পার্লামেন্ট বা দ্যুমা প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে রাশিয়ায়। এগুলির মধ্যে চরম জার সমর্থক বা জারিস্টরা যেমন ছিল, তেমনি ছিল মধ্যপন্থী অক্টোব্রিস্টরা, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক কাদেতরা। আর ছিল জার শাসনের বিরোধী নারোদনিকদের উত্তরসূরী সোশ্যালিস্ট রেভোলিউশনারী (এসআর) এবং রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টি (আরএসডিএলপি) যা কালক্রমে লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিক ও মার্তভের নেতৃত্বাধীন মেনশেভিক হিসেবে দু’ভাগ হয়ে যায়।

১৯১৭-র রুশ বিপ্লবের প্রস্তুতির কালক্রম অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা দেখি লেনিন ও বলশেভিকরা বারবার অসংখ্য বিতর্কের মধ্যে দিয়ে বিপ্লবী মার্কসবাদী মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক ধারার সঙ্গেই শুধু নয়, মার্কসবাদীদের নিজেদের মধ্যেও নানা প্রশ্নে চলেছে এই বিতর্ক। এই বিতর্ক একদিকে যেমন তাত্ত্বিক, মতাদর্শগত, দার্শনিক; তেমনি অন্যদিকে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট কার্যক্রম নেওয়ার সঙ্গেও বিশেষভাবে সংযুক্ত ছিল।

জার বিরোধী কার্যকলাপের জন্য লেনিনকে যেতে হয়েছিল নির্বাসনে। নির্বাসনপর্বেই তিনি ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’ বইটি লেখার কাজ শেষ করেন। রাশিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশ নিয়ে এই অসামান্য গবেষণায় লেনিন দেখান যে রাশিয়ার পুঁজিবাদ শুধু শিল্পে নয়, কৃষিতেও জোরদার হচ্ছে। রাশিয়ার সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে শ্রমিকশ্রেণীর সংখ্যাল্পতা সত্বেও লেনিন তাদের মধ্যেই এক মহাশক্তিকে দেখতে পেয়েছিলেন। বিপ্লবী আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃস্থানীয় ছিলেন ভূমিকাকে তিনি সামনে নিয়ে আসেন। একই সঙ্গে লেনিন প্রলেতারিয়েতের সঙ্গে কৃষক সম্প্রদায়ের ঐক্যের আবশ্যিকতার ওপর জোর দেন। কারণ তাছাড়া আসন্ন বিপ্লবে জয়লাভ সম্ভব ছিল না। ১৯০২ সালে লেনিনের সুবিখ্যাত বই ‘হোয়াট ইজ টু বি ডান’ বা ‘কী করিতে হইবে’ প্রকাশিত হয়। এই বইতে লেনিন পার্টি গঠনের মূল নীতি সম্পর্কে আলোচনা করেন।

মেনশেভিক মতবাদের বিপদের দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে লেনিন লেখেন ‘ওয়ান স্টেপ ফরওয়ার্ড টু স্টেপ ব্যাক’ বা ‘এক কদম আগে, দু’কদম পিছে’ নামে তাঁর অতি পরিচিত বইটি। প্রলেতারিয়েতের পার্টির ধরন-ধারণ বিষয়ে লেনিন এই বইতে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “প্রলেতারিয়েতের সংগ্রাম পার্টি সাফল্যের সঙ্গে শুধু তখনই পরিচালনা করতে পারে যখন তার সমস্ত সভ্য একক বাহিনীতে ঐক্যবদ্ধ, একই সংকল্প, কর্ম ও শৃঙ্খলায় সংহত, যখন তা বৈপ্লবিক তত্ত্বে সশস্ত্র।”

১৯১২ সালে রাশিয়ায় চতুর্থ রাষ্ট্রীয় দ্যুমার নির্বাচন হয়। এরআগে তৃতীয় দ্যুমার নির্বাচনের সময়েই লেনিন নির্বাচন বয়কটের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছিলেন। সেই সময় লেখা ‘এগেইনস্ট বয়কট’ প্রবন্ধেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বয়কটের সিদ্ধান্ত কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে নিতে হয় তার মূল নীতিমালা তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই ইউরোপের বিভিন্ন সমাজ গণতান্ত্রিক দলগুলো নিজ নিজ দেশের যুদ্ধস্বার্থ তথা জাতীয় বুর্জোয়াদের লেজুড়বৃত্তি শুরু করে। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ভেঙে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের যে নতুন সময়ে দুনিয়া প্রবেশ করল তাকে বিশ্লেষণ করে লেনিন লেখেন ‘ইম্পিরিয়ালিজম: দ্য হায়েস্ট স্টেজ অব ক্যাপিটালিজম’ (সাম্রাজ্যবাদ: পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়) নামক কালজয়ী রচনাটি। এই বইতে লেনিন দেখান সাম্রাজ্যবাদের আমলে দেখা দেয় বড় বড় একচেটিয়া কারবার ও পুঁজিপতিদের জোট। এই সাম্রাজ্যবাদকে তাই লেনিন বলেন একচেটিয়া পুঁজিবাদ। লেনিন দেখান কীভাবে পুঁজিবাদ ক্রমশ হয়ে উঠেছে প্রতিক্রিয়াশীল, সমাজের বিকাশের পথে এক মহা বিঘ্ন। মানবসমাজের সামনে অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটা অথবা উপনিবেশ, একচেটিয়াদের বিশেষ সুবিধা, সব ধরনের জাতীয় পীড়নে অভ্যস্ত হয়ে পড়া। সাম্রাজ্যবাদ মানবসমাজকে এক বিশেষ অর্থে সমাজতন্ত্রের কাছাকাছি নিয়ে আসে।

lenin in rush revolution

 

১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বলশেভিক পার্টির আহ্বানে রাশিয়ার শ্রমিকেরা একটি রাজনৈতিক সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই আহ্বান অভূতপূর্ব সাফল্যলাভ করে এবং এতে যোগ দেয় দুই লক্ষের বেশি শ্রমিক নারীপুরুষ। ধর্মঘট বেড়ে ওঠে এক পরাক্রান্ত রাজনৈতিক শোভাযাত্রায়। “স্বৈরতন্ত্র ধ্বংস হোক। যুদ্ধ শেষ হোক। রুটি চাই।” এই স্লোগান নিয়ে রাজধানীর শ্রমিকেরা পথে নামে। ১৫ মার্চ ১৯১৭ রাষ্ট্রীয় দ্যুমার সাময়িক কমিটির প্রতিনিধিরা জারের সাথে সাক্ষাৎ করে সিংহাসন ত্যাগ করতে বলে। জার স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়। রাশিয়ায় সম্পন্ন হয় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব।

জারতন্ত্রের পতনের পর যে বুর্জোয়া সরকার ক্ষমতায় আসীন হয় তা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিলেও যুদ্ধ বন্ধ করার পক্ষপাতী ছিলনা। লেনিন বলেন বিপ্লবের প্রথম পর্যায়টিই কেবল সমাপ্ত হয়েছে এবং তার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা গেছে বুর্জোয়াদের হাতে। তিনি শ্লোগান তুললেন সোভিয়েতগুলির হাতে সমস্ত ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। বলশেভিকদের সভায় প্রলেতারিয়েতের কর্তব্য নির্দেশ করে ১৯১৭-র ১৭ এপ্রিল তিনি একটি বক্তৃতা দেন। এটি ‘এপ্রিল থিসিস’ নামে বিখ্যাত। এখানে তিনি বললেন ক্ষমতা যাওয়া চাই শ্রমিক শ্রেণি ও গরীব কৃষকের হাতে। সব ক্ষমতা চাই সোভিয়েতের হাতে। তিনি বোঝালেন কেবল সোভিয়েতগুলির রাজই পারে জনগণের জন্য শান্তি, কৃষকদের জমি এবং ক্ষুধিতদের রুটি দিতে।

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ডাক দেওয়ার পর বুর্জোয়া রাষ্ট্রের প্রতি পার্টির মনোভাব কী হবে এবং প্রলেতারিয়েতের হাতে ক্ষমতা এলে কী ধরনের রাষ্ট্র গঠিত হবে — সেই সময়ের সেইসব জ্বলন্ত প্রশ্নকে কেন্দ্র করে লেনিন লেখেন ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ বা ‘স্টেট অ্যান্ড রেভোলিউশন’ নামে তার বিখ্যাত বইটি। লেনিন সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমকে বিকাশের দুই পর্যায় হিসেবে গণ্য করেন ও সে সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতির চাকা আবার উল্টোদিকে ঘুরতে থাকে। জেনারেল কার্ণিলভ বলশেভিকদের চূর্ণ করার লক্ষ্য নিয়ে সৈন্য পাঠিয়েছিলেন পেত্রোগ্রাদ অভিমুখে। কার্নিলভের বাহিনীর বিরুদ্ধে শ্রমিক জনগণের সংগ্রামে বলশেভিকরা নেতৃত্ব দিল। কয়েকদিনের মধ্যেই কার্নিলভ বাহিনী বিধ্বস্ত হল। এই বিজয়ের মধ্যে দিয়ে জনগণের ব্যাপক অংশ সবেগে বাঁক নিতে শুরু করল বলশেভিকদের দিকে।

১৯১৭’র ৬ নভেম্বর প্রাভদার ছাপাখানায় হামলার হুকুম দিল সাময়িক সরকার। পাল্টা বার্তা পাঠাল যুদ্ধ জাহাজ ‘অরোরা’, সাময়িক সরকারের রক্ষীদের পেত্রোগ্রাদে ঢুকতে দেবে না। বৈপ্লবিক সাঁজোয়া বাহিনীগুলো মিলিত হতে থাকল বিপ্লবের হেড কোয়ার্টার স্মোলনি ইন্সটিটিউটের কাছে। লেনিন চিঠি লিখলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অভ্যুত্থানে বিলম্ব মানে সত্যিই মৃত্যু। ৭ নভেম্বর সকালে অভ্যুত্থানকারীদের দখলে যায় টেলিফোন, টেলিগ্রাফ ভবন, রেডিও স্টেশন। সব রেলসেতু, রেলস্টেশন এবং রাজধানীর অতি গুরূত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান। ৭-৮ নভেম্বর মধ্যরাত্রের পর অভ্যুত্থানকারীদের হাতে এলো প্রধান ডাকঘর, নিকোলায়ভস্কি স্টেশন আর বিদ্যুৎ স্টেশন। সকালে নৌ বহরের নাবিকরা দখল করল রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক। দখল হল ওয়ারশ স্টেশন। যুদ্ধ জাহাজ ‘অরোরা’ এসে দাঁড়াল শীতপ্রসাদে কামান দাগার আওতার মধ্যে। সকালের মধ্যেই শহর চলে এলো অভ্যুত্থানকারীদের হাতে। ৮ নভেম্বর সকালে সামরিক বৈপ্লবিক কমিটি গ্রহণ করল লেনিনের আবেদন — রাশিয়ার নাগরিকদের প্রতি ঘোষিত হল সাময়িক সরকারের উচ্ছেদ ঘটেছে।

‘আরোরা’ থেকে শীত প্রাসাদে গোলাবর্ষণ শুরু হল, সাময়িক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কেরেনস্কিরা পালিয়ে গেলেন। রাতে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ভরা জোয়ারে স্মোলনিতে শ্রমিক ও সৈনিকদের দ্বিতীয় সারা রুশ সোভিয়েত কংগ্রেসের উদ্বোধন হল। ৯ নভেম্বর রাতে সাময়িক সরকারের মন্ত্রীরা গ্রেপ্তার হলেন। ১০ নভেম্বর ভোরে শেষ হল সারা রুশ সোভিয়েত কংগ্রেস। ঘোষিত হল শান্তির ডিক্রি, ভূমির ডিক্রি, বলা হল — অবিলম্বে জমির ওপর জমিদারি মালিকানা উচ্ছেদ হবে। গঠিত হল বিশ্বের প্রথম শ্রমিক-কৃষকের সরকার, জন কমিশার পরিষদ। লেনিন নির্বাচিত হলেন তার প্রধান। জন্ম হল পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশের।

বিভিন্ন ডিক্রি জারি করে জনগণের দীর্ঘকালীন দাবি দাওয়াগুলির সমাধানের কাজ শুরু হয় সরকার প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই। জমি, শান্তি ও রুটির শ্লোগানে বলশেভিকরা জনগণকে সংগঠিত করেছিল। নতুন সরকারের প্রথম পদক্ষেপ ছিল জমি ও শান্তির জন্য ডিক্রি জারি করা। ‘শান্তির ডিক্রি’র মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরুর ডাক দেওয়া হয়। ‘জমির ডিক্রি’র মাধ্যমে খোদ কৃষককে জমির ওপর অধিকার প্রদান করা হয়। এরপর একে একে জারি করা অন্যান্য ডিক্রিগুলো ছিল আট ঘন্টা শ্রমসময়, শ্রমিকদের হাতে কারখানার নিয়ন্ত্রণ, শ্রেণিভেদ ও সামাজিক মর্যাদাভেদ নিষিদ্ধকরণ, ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ, সেনাবাহিনীতে কর্মরত সমস্ত সেনার সমান অধিকার প্রদান, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, অবৈতনিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যরক্ষা এবং সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের নতুন ইউনিয়ন গঠন ইত্যাদি সম্পর্কিত।

রুশ বিপ্লব ছিল খাঁটি গণবিপ্লব। বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিলোপ ঘটে এর মধ্য দিয়ে। মানব ইতিহাসে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় প্রলেতারিয়েতের একনায়কত্ব, স্থাপিত হল শ্রমিক কৃষকের রাষ্ট্র। নভেম্বর বিপ্লব শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক ক্ষমতার বদল ছিলনা। রাশিয়ার জনগণের জীবনে এক গভীর সামাজিক অর্থনৈতিক রদবদল সূচিত করে এই বিপ্লব, শুরু হয় দেশের বৈপ্লবিক পুনঃনির্মান — নতুন সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের সূত্রপাত। একটি পিছিয়ে পড়া দেশে দ্রুত উন্নতি কীভাবে হতে পারে, একটি চরম বৈষম্য ও বিভাজনে জর্জরিত সমাজ কীভাবে সাম্য, ন্যায় ও প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে — সোভিয়েত সমাজতন্ত্র তা সারা বিশ্বকে হাতেকলমে দেখিয়েছে। ভারত সহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে কমিউনিস্ট পার্টিগুলি গড়ে উঠেছে। পরবর্তীকালে চিন, ভিয়েতনাম বা কিউবার বিপ্লব এখান থেকে প্রেরণা সংগ্রহ করেছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতিয়তাবাদী আন্দোলনকে রুশ বিপ্লব নানাভাবে প্রেরণা দিয়েছে, প্রভাবিত করেছে। ভারতের সমাজের আমূল রূপান্তর, কৃষক, শ্রমিক, সমস্ত মেহনতি মানুষ, নারী, দলিত, আদিবাসীদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সবার সমান অধিকার, বৈষম্য ও শোষণের অবসানের জন্য যে লড়াই চলমান, রুশ বিপ্লব আজও তাকে প্রতিনিয়ত প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে।

- সৌভিক ঘোষাল

খণ্ড-28
সংখ্যা-38