বিবৃতি
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ সহ অন্যান্য মামলা নিঃশর্তে প্রত্যাহার কর!
human rights activists

৩ নভেম্বর পশ্চিম আগরতলা থানার তদন্তকারী আধিকারিক এসআই শ্রীকান্ত গুহ কর্তৃক স্বাক্ষরিত ৪১এ ধারায় দিল্লীর আইনজীবী শ্রীযুক্ত মুকেশ এবং আনসার ইন্দোরির বিরুদ্ধে এক নোটিশ পাঠানো হয়। এই দু’জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নেওয়া হয়। মামলার নম্বর হল,পশ্চিম আগরতলা থানা ২০২১, ডব্লিওএজি-১৮১, তারিখ ০৩/১১/২০২১। ঐ মামলায় ১৫৩এ, ১৫৩বি, ৪৬৯, ৪৭১, ৫০৩, ৫০৪, ১২০বি আইপিসি এবং ইউএপিএ১৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। ত্রিপুরার ইতিহাসে এই প্রথম ইউএপিএ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। অক্টোবরে বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যজুড়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ও সংখ্যালঘু মুসলমানদের মসজিদে আক্রমণের ঘটনা ঘটে। তা নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন সামাজিক মাধ্যমে তথা টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউবে তাদের একান্ত নিজস্ব ও ভিন্নমত প্রকাশ করে। ত্রিপুরা পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগের সাইবার অপরাধ দমন শাখা সামাজিক মাধ্যমে এরকম ১০২টি পোস্ট পরীক্ষা করে এখনো পর্যন্ত ৬৮ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা নথিভুক্ত করেছে বলে খবরে প্রকাশ। ৩ নভেম্বরের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে এই ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়। এই ধরনের পোস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা, উস্কানি দেওয়া সহ গুজব রটনা করে ত্রিপুরা সরকার ও পুলিশের মানহানি করা এবং একইসাথে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক একতা বিনষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিক আগরতলা পশ্চিম থানায় আগামী ১০ নভেম্বর তাদের দু’জনকে ডেকে পাঠিয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক হিংসা ও আক্রমণের ঘটনাবলী খতিয়ে দেখতে এবং পিইউসিএল নামক একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের অংশ হিসাবে এই দু’জন আইনজীবী সহ মোট ৪ জন গত ৩০ অক্টোবর ত্রিপুরায় এসেছিলেন। গোমতী জেলার কাকড়াবন থানার দরগা বাজারে, উত্তর ত্রিপুরা জেলার পানিসাগরে ও রোয়া বাজারে তারা ঘটনাবলী খতিয়ে দেখেন এবং ঊনকোটি ত্রিপুরা জেলার কৈলাশহরে জেলা শাসকের সাথে কথা বলে ৩১ অক্টোবর রাতে তারা আগরতলা ফিরে আসেন। ১ নভেম্বর তারা দিল্লী ফিরে যান। ১ নভেম্বর ফিরে যাওয়ার পূর্বে আগরতলা প্রেস ক্লাবে তারা একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। দিল্লী ফিরে গিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন এবং ফেসবুক লাইভে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ফেসবুক লাইভে তুলে ধরা বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে পুলিশ এই মামলা নিয়েছে বলে অভিযোগ।

lawyers and human rights activists

 

এখানে এটা খুবই স্পষ্ট যে, ভিএইচপি ও বজরং দলের নামে যারা রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় মিছিল থেকে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়াল, সংখ্যালঘু মুসলমানদের জীবন-সম্পত্তির উপর, মসজিদের উপর আক্রমণ সংঘটিত করল, ধর্মীয় গুরু প্রফেট মহাম্মদের নামে বিকৃত শ্লোগান ও উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করল, পুলিশ তাদের এখনো গ্রেপ্তার করেনি। এখনো পর্যন্ত নাকি ১১টি অভিযোগ ও ৪টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারমধ্যে প্রকৃত অপরাধীরা কেউ নেই বললেই চলে। অথচ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছে, যারা ঘটনাস্থলে গিয়ে জনগণের সাথে কথা বলে, প্রকৃত ঘটনা যাচাই করে সত্যিটা তুলে ধরে সাম্প্রদায়িক শান্তি সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করেছে। সংবাদ মাধ্যমে ও সামাজিক মাধ্যমে তারা ভিন্ন ও স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ’র মত দানবীয় কালো আইন প্রয়োগ করেছে। সরকারের নির্দেশে পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য এবং জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এই ধরনের মামলা নিয়েছে। সংবিধান প্রদত্ত ভিন্ন মত ও বিরোধী মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার দাবিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ছাড়া এআর কিছুই নয়। এটা ভয় দেখিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা। তাছাড়া এই ঘটনাবলীর সাথে বাস্তবে এদের কোনোপ্রকার সম্পর্ক নেই এবং ঘটনার সময়ে তারা এখানে ছিলেনও না। তাই পুলিশের আনা এই অভিযোগ মনগড়া, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তাই দিল্লীর আইনজীবীদের উপর থেকে এই মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি দাবি জানায়। বাংলাদেশে সংঘটিত হিংসার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ত্রিপুরায় সম্প্রতি অক্টোবর মাসে রাজ্যজুড়ে পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হিংসা ও সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর আক্রমণের ঘটনায়, বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, উস্কানি ও বিকৃত শ্লোগান অবাধে ছড়িয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক শান্তি সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দাবি জানাচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য দাবি করছে।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির

খণ্ড-28
সংখ্যা-39