কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতায় অ্যাপোয়ার বিবৃতি
AIPWA Statement

১৮ বছর বয়সীরা সরকার বেছে নিতে পারেন — অথচ, তারা বিয়ে করবেন কিনা, কখন করবেন এবং কাকে করবেন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না, কেন?

মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ করার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাবটি একটি কুপরামর্শ এবং তা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।

সকল প্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর হওয়া উচিত। একইভাবে পুরুষদেরও বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৮ বছর করা উচিত। আমরা ১৮ বছর বয়সীদের সরকার বেছে নেওয়ার জন্য এবং দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার জন্য সক্ষম মনে করি। তাই আমাদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে তারা তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এবং বিয়ে করবেন কিনা, কখন বা কাকে বিয়ে করবেন তা বেছে নিতেও যথেষ্ট সক্ষম।

অল্পবয়সে মাতৃত্বের কারণে অল্পবয়সী মেয়েদের ও শিশুদের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি যুবতী মহিলাদের শিক্ষা‍য় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ কমায়। পরিবার ও অভিভাবকরাও অনেক সময়, ইচ্ছার বিরুদ্ধে, জোর খাটিয়ে মেয়েদের বাল্যবিবাহ করতে বাধ্য করে। কিন্তু বিয়ের বয়স ২১এ উত্তীর্ণ করার মাধ্যমে নারীদের দীর্ঘস্থায়ী রক্তাল্পতা, অপুষ্টি এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়াকে রোখা সম্ভব নয়। দারিদ্রের অবসানেই এই সমস্যাগুলির সমাধান রয়েছে।

বাস্তবে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ-মূলক আইনের বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ। বাল্যবিবাহ আটকাতে কিশোরী বয়স থেকেই মেয়েদের স্বাধিকার ও স্বায়ত্ত্বতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন গড়ে তোলা জরুরি। অন্য কথায়, যাদের পরিবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েতে বাধ্য করছে, সেই মেয়েদের জন্য সরকারের প্রাথমিকভাবে উচিত হেল্পলাইন এবং সহায়তা প্রদান করা। সরকারের সামাজিক প্রচারাভিযানে বিনিয়োগ করা উচিত যাতে নারীদের নিজেদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করার এবং নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে ওঠে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল প্রাপ্তবয়স্কদের, লিঙ্গ নির্বিশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকতে হবে যে তারা কাকে, কীভাবে ও কখন জীবনসাথী হিসাবে বেছে নেবেন।

২০১৩-১৪ সালে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দিল্লীর ট্রায়াল কোর্টে রুজু করা ৪০ শতাংশ ধর্ষণের মামলা আদপে ধর্ষণের মামলাই নয় বরং সম্মতিক্রমে বিয়ে করার ঘটনা। যেখানে যুবতী মেয়েরা নিজের পছন্দের সাথীকে বিয়ে করার জন্য তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের হিংসা ও জোর-জবরদস্তির থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। ভারতে খাপ পঞ্চায়েত, সম্প্রদায়ের হর্তাকর্তা ব্যক্তি, প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও সঙ্ঘী গুন্ডারা আন্তঃবর্ণ এবং আন্তঃধর্মীয় দম্পতিদের বিশেষত তরুণ দম্পতিদের আক্রমণ করার জন্য কুখ্যাত। এক্ষেত্রে, প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের প্রায়শই অনৈতিকভাবে ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ বলে অভিহিত করা হয় এবং ‘শেল্টার হোম’এ বন্দী করা হয়। শেল্টার-হোমের বন্দী জীবন থেকে এই মেয়েরা তখনই স্বাধীনতা পেতে পারে যখন তারা আন্তঃবর্ণ বা আন্তঃবিশ্বাসের সম্পর্ক ত্যাগ করতে এবং পরিবারে ফিরে যেতে সম্মত হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিবাহের আইনি বয়স বাড়ানোর প্রস্তাবটি আসলে পারিবারিক নীতি-পুলিশী ও জবরদস্তির হাত শক্ত করবে। সেক্ষেত্রে, প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের অধিকারকে খারিজ করতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধমূলক আইনকে ব্যবহার করেই পরিবার ও সম্প্রদায়ের গা-জোয়ারি চলবে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব আদপে নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে নয়, এটি শুধুমাত্র সেই শক্তিগুলির ক্ষমতায়ন করবে যারা নারীর আত্মমর্যাদা আর স্বাধিকারকে পিষে ফেলতে হিংসা সংগঠিত করে।

সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নারীর স্বাধিকার বিরোধী এই প্রস্তাব অবিলম্বে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়; পরিবর্তে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধমূলক বর্তমান আইনটি সংশোধন করে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাধিকারের মর্যাদা দেওয়ার দাবি করে — যাতে ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সী সমস্ত ব্যক্তি তাদের জীবনের সমস্তক্ষেত্রে পূর্ণ স্বায়ত্ততা উপভোগ করতে পারেন।

সভাপতি রতি রাও, সাধারণ সম্পাদক মীনা তেওয়ারি, সম্পাদক কবিতা কৃষ্ণান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতি প্রকাশ করেছে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি।

খণ্ড-28
সংখ্যা-45