মোদীর ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পের ৮০ শতাংশ খরচই বিজ্ঞাপনে
Save Betty

মোদী সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’। এই প্রকল্পকে হাতিয়ার করেই সারাদেশের শিশুকন্যাদের সার্বিক বিকাশের অঙ্গীকার করেছে মোদী সরকার। সেই প্রকল্পের প্রচার ও বিজ্ঞাপনে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, সংসদে পেশ করা প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করল কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি সংসদীয় কমিটি। এই সংসদীয় কমিটির প্রধান আবার বিজেপি’রই সাংসদ হিনা গাভিট।

লোকসভায় পেশ করা মহিলাদের ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ এই তিন বছরে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৪৬ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। সেই অর্থের ৭৮.৯১ শতাংশ অর্থাৎ ৩৫২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনে। এই বিশাল অঙ্কের টাকা বিজ্ঞাপনে খরচ না-করে দেশের শিশু কন্যাদের উন্নয়নে খরচ করা প্রয়োজন ছিল, সাফ জানিয়ে দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পের প্রচারের গুরুত্ব বুঝতে পারছে কমিটি। একই সঙ্গে কমিটি মনে করে যে, প্রকল্পের মূল লক্ষ্যের সঙ্গে প্রচারের খরচের ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বাংলায় মেয়েদের স্কুলছুট আটকাতে ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৩ সালে যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনা করেছেন, তা সমাদৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। বাজেটও কেন্দ্রের তুলনায় অনেক বেশি রাজ্যের এই প্রকল্পের। মমতা বরাবরই বলে এসেছেন যে, কেন্দ্রের ‘বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পের চেয়ে তাঁর কন্যাশ্রী কাজের ক্ষেত্রে অনেক বেশি উপযোগী। সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট যেন মমতার ওই দাবিতেই সিলমোহর দিল।

সংসদীয় কমিটির এই রিপোর্ট নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, “প্রকৃত সত্য জনমানসে তুলে ধরার জন্য আমি কমিটির চেয়ারপার্সন হিনা গাভিটকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, এই রিপোর্ট দেখার পরে মোদী সরকার বিজ্ঞাপনখাতে খরচ কমিয়ে প্রকল্প সম্পর্কিত আসল কাজের জন্য বেশি করে টাকা খরচ করবে।”

২০১৫ সালে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল কন্যা ভ্রূণহত্যা বন্ধ করা, মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এবং কন্যা শিক্ষায় উৎসাহ জোগানো। এই প্রকল্পের সার্থকতা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিজেপি সাংসদ হিনা গাভিটের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি তার রিপোর্টে জানিয়েছে, গত ৬ বছর ধরে এই প্রকল্প নিয়ে জাতীয়স্তরে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে প্রকল্পের মূল বিষয়গুলিতে নজর দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। এই কমিটির দাবি, প্রকল্পের প্রচার ও বিজ্ঞাপনের পিছনে অর্থ ব্যয় করা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে।

পাশাপাশি, দেশের শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে রাজ্যভিত্তিক একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এই কমিটির তরফে। ৫ বছরের নীচে শিশুদের মৃত্যুর হারে শীর্ষে রয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশ। বিজেপি’র বহুচর্চিত ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার শাসিত মধ্যপ্রদেশে ৫ বছরের নীচে শিশুমত্যুর হার ৫৬ শতাংশ। এরমধ্যে ছেলে শিশুমৃত্যুর হার ৫৮ শতাংশ এবং শিশুকন্যার মৃত্যুর হার ৫৩ শতাংশ। দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। দেশের বৃহত্তম এই রাজ্যে ৫ বছরের নীচে শিশুমৃত্যুর হার ৪৭ শতাংশ, তারমধ্যে শিশুকন্যার মৃত্যুর হার ৪৮ শতাংশ বলে কমিটির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। ডাবল ইঞ্জিনের সরকার শাসিত রাজ্য অসমে মোট শিশুমৃত্যুর হার ৪৭ শতাংশ হলেও, সেখানে শিশুকন্যার মৃত্যুর হার ৫১ শতাংশ। সর্বভারতীয় স্তরে নানাবিধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবং আইন প্রণয়ন করার পরেও দেশে ছেলে ও মেয়ে শিশুদের অনুপাত যথেষ্ট কম বলে দাবি করেছে মহিলা ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

- এই সময়, ১১ ডিসেম্বর ২০২১

খণ্ড-28
সংখ্যা-44