বিবৃতি
আফস্পা বাতিল কর
Cancel AFSPA

নাগাল্যান্ডে খনি শ্রমিকদের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সেনা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা ও আফস্পা বাতিল করার দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন।

নাগাল্যান্ডের মোন জেলার ওটিং গ্রামে আধা সেনাবাহিনী ১৩ জন শ্রমিক ও গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আরও ১১ জন গুরুতর আহত।

পার্টির ত্রিপুরা রাজ‍্য সম্পাদক পার্থ কর্মকারের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিপিআই(এমএল) মনে করে যে, এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ড মোদী সরকারের বহুল প্রচারিত নাগাল্যান্ড শান্তি চুক্তির অন্তঃসারশূণ্যতাকে উন্মোচিত করেছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সেনা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার এবং জনবিরোধী “সেনা বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা)” বাতিল করার দাবি করছে। এই ঘটনায় মৃতদের ও আহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করছে সিপিআই(এমএল)।

***

Against the militaryAgainst the military_0

নাগাল‍্যান্ড পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল টি জন লঙ্কুমের (আইপিএস) এবং নাগাল‍্যাণ্ডের কমিশনার রবিলাটুয়া মোর (আইএএস) যৌথভাবে একটি বিবৃতি জারি করে ঘটনাক্রমের বিবরণ দিয়েছেন, যে ঘটনাক্রমে নাগাল‍্যান্ডের পূর্ব ভাগের মোন জেলার ১৪ জন নাগরিকের প্রাণ গেল।

তাঁদের ইংরেজিতে প্রকাশ করা বিবরণীর হুবহু বাংলা অনুবাদ নীচে দেওয়া হল। (শিরোনাম আমাদের)

৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ১০ মিনিট নাগাদ টিরু কয়লাখনি থেকে কাজ সেরে ৮ জন গ্রামবাসী যখন একটি পিক-আপ ট্রাকে ফিরছিলেন তখন নিরাপত্তা বাহিনী (খবর অনুযায়ী, আসামস্থিত প‍্যারা স্পেশ‍্যাল ফোর্স) তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ও এলোপাথাড়ি হত‍্যা করে, স্পষ্টতই পরিচিতি যাচাইয়ের কোনোরকম চেষ্টা না করে।

তাঁরা সকলেই ছিলেন নিরস্ত্র নাগরিক, টিরু উপত‍্যকার খনিতে কর্মরত। তাঁদের কাছে কোনোরকম অস্ত্র ছিল না। এবং তাঁরা প্রকাশ‍্যে দিনের বেলা থাকতে একটি খোলা মাহিন্দ্রা পিক-আপ ট্রাকে চড়ে আসছিলেন। কিন্তু তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া হয় এবং ছয় জনকে সেখানেই হত‍্যা করা হয়, দুজনকে মারাত্মকভাবে ঘায়েল করা হয়। ওটিং গ্রামের কয়েক কিলোমিটারের মধ‍্যেই এই ঘটনা ঘটে।

গুলির শব্দ শুনে এবং গাঁয়ের লোকেরা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে না আসায় সন্দীহান হয়ে গ্রামবাসীরা অকুস্থলে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা পিক-আপ ট্রাকটি দেখতে পান, দেখেন স্পেশাল ফোর্সের জওয়ানরা গ্রামবাসীদের ছয়টি মৃতদেহ লুকানোর চেষ্টা করছে, মৃতদেহগুলিকে মুড়ে অন‍্য একটি পিক-আপ ট্রাকে (টাটা মোবাইল) তুলছে, স্পষ্টতই বাহিনীর বেস ক‍্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ‍্যে।

টাটা মোবাইলে একটি ত্রিপলের নিচে মৃতদেহগুলি দেখতে পাওয়ার পর গ্রামবাসী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ‍্য সংঘর্ষ বেধে যায়। ফলস্বরূপ ক্রুদ্ধ গ্রামবাসীরা স্পেশ্যাল ফোর্সের জওয়ানদের তিনটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

এই হাতাহাতির মাঝে নিরাপত্তারক্ষীরা আবার গ্রামবাসীদের ওপর গুলি চালায় যার ফলে আরও ৭ জন গ্রামবাসীর মৃত‍্যু হয়, এবং নিজের চোখে দেখা ব‍্যক্তিরা নিশ্চিত সাক্ষ্যে জানিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা ঘটনাস্থল থেকে আসামের দিকে পালানোর সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, এমনকি যেতে যেতে খনি শ্রমিকদের বসতির কুঁড়েঘরগুলির দিকে তাক করেও গুলি চালিয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার জায়গায় মোট ৫ (পাঁচ)টি বাহন রয়েছে, যেগুলি হল —

(১) যে গাড়ির নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হয় সেই মাহিন্দ্রা পিক-আপ; (২) একটি পুড়ে যাওয়া স্কর্পিও; (৩) পুড়ে যাওয়া বোলেরো; (৪) পুড়ে যাওয়া টাটা উইঙ্গার; (৫) টাটা মোবাইল (পুড়ে যাওয়া নয়, ভাঙচুর হওয়া)।

সব মিলিয়ে সেদিন ১৩ জন নাগরিককে হত‍্যা করা হয়েছে এবং ১৪ (চৌদ্দ) জন নাগরিককে মারাত্মক জখম করা হয়েছে এবং ৮ (আট) জন নাগরিককে অল্প মাত্রায় জখম করা হয়েছে। মারাত্মকভাবে ঘায়েল করা ব‍্যক্তিদের মধ‍্যে দুই জনকে নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেরাই আসামের দিকে নিয়ে চলে গেছিল এবং তাঁদের ডিব্রুগড় মেডিক‍্যাল হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-43