গ্রামে ক্যাম্প করে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় ও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন প্রণয়নের দাবিতে ব্লকে ব্লকে ডেপুটেশন কর্মসূচি নেয় এআইকেএম। দিল্লীর সীমান্তে একবছরের মরণপণ লড়াইয়ের পর কৃষক আন্দোলনের ঐতিহাসিক জয় হল। কেন্দ্রীয় সরকার তিন কৃষি আইন বাতিল করতে বাধ্য হল, অন্যান্য দাবিসমুহ লিখিতভাবে মেনে নিতে বাধ্য হল। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন প্রণয়নের দাবি করেছে মেনে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠনের শর্ত স্বীকার করেছেন। তখন পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের ধান সংগ্রহ নিয়ে সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা ও অব্যবস্থার জন্য কৃষকদের কম দামে ফড়ে ব্যাপারীদের মাধ্যমে ধান বিক্রি করে লোকসান দিতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও পদক্ষেপ নেই। এই পরিস্থিতিতে সারা ভারত কিষাণ মহাসভা ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী প্রচার ও ১৫ ডিসেম্বর ব্লকে ব্লকে ডেপুটেশন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবেই পুর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকে ডেপুটেশন সংগঠিত করা হল। দাবি ছিল,
১) সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ধান, আলু ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২) গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারি সহায়ক মূল্য ১৯৪০+২০ টাকা কুইন্টাল দামে ধান কিনতে হবে।
৩) সারের কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে। পর্যাপ্ত সারের যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে পর্যাপ্ত কাজ দিতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। মজুরি কম দেওয়া চলবে না।
৫) বছরে ২০০ দিন কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) অনতিভুক্ত ভাগচাষি, লিজচাষি ও পাট্টাহীন গরিব চাষিদের সমস্ত ধরনের সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৭) কৃষকের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য করার জন্য আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
পুর্ব বর্ধমান জেলার কালনা ২নং ব্লকের এডিও, পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের বিডিও এবং সদর ২নং ব্লকের বিডিও’কে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। ৫০ জনের বেশি কৃষক মিছিল করে কালনা ২নং ব্লক কৃষি উন্নয়ন আধিকারিক দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান এবং ডেপুটেশন দেন। রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এআইকেএম ও আয়ারলার ব্লক নেতৃবৃন্দ ডেপুটেশনে সামিল হন। এডিও সাহেব সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে বিস্তারিত একমত হন এবং বলেন কালনা ২নং ব্লককে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হিসাবে ঘোষণার প্রস্তাব তিনি সরকারের উচ্চতর দপ্তরে পাঠিয়েছেন। অন্যান্য দাবি বিডিওকে জানাবেন। পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান সংগঠিত করা হয়। সভায় শ্লোগান এবং বক্তব্য রাখেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমন মন্ডল ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ডেপুটেশনে প্রতিনিধিত্ব করেন সজল পাল, শিবু সাঁতরা ও কাওসার আলি সেখ। বিডিও না থাকার ফলে ডেপুটেশন গ্রহণ করেন জয়েন্ট বিডিও। ডেপুটেশনে দাবি অনুযায়ী সেই সব দপ্তরের ব্লক আধিকারিকের সাথে স্পিকার ওপেন করে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, এডিও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের রিপোর্ট উপরে পাঠিয়েছেন। ধান কেনার ব্যাপারে বলেন, এই ব্লকে একটি কেন্দ্র থেকে ধান কেনা হচ্ছে। সমবায় বা অন্যান্য সংস্থা মারফত ধান কেনার সংস্থান থাকলেও এই ব্লকে কোন ব্যবস্থা নেই। এই পর্যন্ত ৩০ জন চাষি নাম নথিভুক্ত করেছেন। ধান পরে কিনবেন। প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ করে বলেছেন এই পদ্ধতির ফলেই গরিব কৃষকরা অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে কুইন্টাল প্রতি ৬০০/৭০০ টাকা কম দামে ধান বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সারের কালোবাজারি বন্ধ করার ব্যাপারে বলেন, কিছুদিন সারের সরবরাহের সমস্যা ছিল। বর্তমানে সংকট নেই। কোনও সারের দোকান বেশি দাম চাইলে এডিওকে ফোন করলে ব্যবস্থা নেবেন। ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতি ও কম মজুরি দেওয়ার প্রশ্নে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নিবেন। অন্যান্য দাবি ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।