বিবৃতি
দেউচা-পাঁচামী খনি প্রকল্পের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন
CPIML Liberation Demanding

প্রকৃতি, পরিবেশ, জীবন ও জীবিকা বিনষ্টকারী দেউচা-পাঁচামী কয়লা উত্তোলন প্রকল্প বাতিল কর

বেসরকারি মুনাফার লক্ষ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা চলবে না

সম্প্রতি বীরভূমের মহম্মদবাজার সংলগ্ন দেউচা-পাঁচামী এলাকায় মাটির অনেক গভীরে থাকা নিম্নমানের কয়লার বিস্তৃত স্তর ভেঙে কয়লা উত্তোলন ‘শিল্প’ গড়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে রাজ্য সরকার। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উচ্চকিত ভাষণে উচ্ছেদের মুখে দাঁড়ানো স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিঘা প্রতি দশলক্ষ টাকা ও অন্যত্র বাস্তুভিটের জমির পাট্টা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন। কৃষিমজুর, ভাগচাষি, খাস জমিতে বসবাসকারী মানুষ সর্বদাই ক্ষতিপূরণের আওতার বাইরে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে বামফ্রন্টের করুণ পরিণতির কথা স্মরণ থাকাতে সম্ভবত মাননীয়ার এই সতর্ক উচ্চারণ। এমত প্রতিশ্রুতির কোনও ভিত্তি এখনো নেই, কারণ অদ্যাবধি এই মর্মে কোনও সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন নেই। বলা হয়েছে, রাজ্যে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলায় এই কয়লা সম্ভার বিপুল শক্তির যোগান নিশ্চিত করবে। অথচ বর্তমানে রাজ্যে বিদ্যুতের কোনও ঘাটতি নেই।

দেখা যাচ্ছে পিডিসিএল তাদের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এই মেগা প্রকল্পটির সামাজিক প্রভাবজনিত সমীক্ষা সমাপ্ত হয়েছে বলে বিজ্ঞাপিত করছে, অথচ সেইলক্ষ্যে স্থানীয় আদিবাসী, মূলবাসী, দলিত ও সংখ্যালঘু শ্রমজীবী মানুষদের জনশুনানী থেকে বিরত রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও শাসক দলের পান্ডারা সচেষ্ট থেকেছে। খোলামুখ খনির মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন পরিবেশের কতটা ক্ষতিসাধন করতে পারে, তা রাণীগঞ্জ-আসানসোলের বিস্তীর্ণ খনি এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই প্রকল্পে উচ্ছেদ হবে হাজার হাজার গ্রামবাসী, যাদের পরম্পরাগত জীবিকা হল কৃষিকাজ আর পাথর ভাঙার কাজ। তথাকথিত বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের মৌখিক আশ্বাসে প্রলুব্ধ না হয়ে, আদিবাসী বাসিন্দাদের এক বৃহৎ অংশ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প ঘোষণার পরে পরেই দেশের এনার্জী সেক্টরের বেসরকারিকরণের মাধ্যমে মুনাফার প্রধানতম খাতক গৌতম আদানির কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী সকাশে রুদ্ধদ্বার আলোচনা পিডিসিএল নয়, আদানি পাওয়ারের হাতে এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ হস্তান্তরের আশঙ্কাকে মান্যতা দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালিয়ে শক্তি উৎপাদনের এই ক্ষতিকর প্রকল্পের পরিবেশের ওপর প্রভাব সংক্রান্ত প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে বাসিন্দাদের ওপর পুলিশ ও তৃণমূলী গুন্ডাদের মারফৎ ত্রাস ছড়িয়ে চটজলদী কয়লা তোলার ছাড়পত্র দিতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন।

পরিবেশের হানি ঘটিয়ে, হাজারো মানুষকে তাঁদের ভিটেমাটি-জীবিকা ও সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করে, ব্যয়বহুল খোলামুখ কয়লাখনি স্থাপনের সরকারী জবরদস্তির বিরোধিতা করে সিপিআই(এমএল)। একইসঙ্গে দাবি জানাচ্ছে রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব সম্পর্কিত সমীক্ষা রিপোর্ট এবং পুনর্বাসন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করে রাজ্যবাসীকে জানাতে হবে। জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৩-কে মান্যতা দিয়ে স্থানীয় গ্রামসভা ও পঞ্চায়েতের পূর্ণ সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা তাও জানাতে হবে।

পরিবেশ প্রকৃতির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ও স্থানীয় মানুষদের উচ্ছেদ ও ভীতি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সিপিআই(এমএল) সচেষ্ট থাকবে। অতি দ্রুত কলকাতা শহরে প্রথমে ও পরে কয়েকটি জেলা শহরে দীক্ষিত পরিবেশবিদ, খনি বিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট সমাজকর্মীদের নিয়ে গণকনভেনশন সংগঠিত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে গত ১৫ ডিসেম্বর এই ঘোষণা করা হয়েছে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-45