বৈষম্যই দারিদ্র্য বাড়ায়, উচ্চবৃদ্ধির হার এটা কমাতে পারে না

 

ঘটনা ও প্রবণতা

Inequality increases poverty

কোভিড মহামারী চলাকালীন দীর্ঘায়িত লকডাউন এবং বর্ধিত অর্থনৈতিক শাটডাউন ভারতের জনসংখ্যার প্রতিটি অংশকে আঘাত করেছে, তবে দরিদ্ররা হয়েছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কারণটি শুধু যে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ড কয়েক মাসের জন্য বন্ধ ছিল তা নয়, এটা গত তিন দশকের একটি পূর্ব-বিদ্যমান প্রবণতাকে বাড়িয়ে তুলেছে, ‘ক্রমবর্ধমান বৈষম্য’।

ইউএনডিপি’র সাম্প্রতিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্য প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে বিশ্বের ১৩৯ কোটি দরিদ্রের মধ্যে ভারতেই রয়েছে ২২.৭ কোটি, প্রায় ১৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ছয়টি বহুমাত্রিক দরিদ্রের মধ্যে পাঁচটি তপশিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর জাতি এর অন্তর্গত। তাই, ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দরিদ্রের বাসস্থান যারা ক্ষুধা ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করে, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্যের মোকাবিলা করে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২১ সালের মার্চের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছিল যে কোভিড মহামারীর প্রভাব তীব্র হওয়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত ৭.৫ কোটি ভারতীয়কে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এবং মধ্যবিত্ত ৩.২ কোটি হ্রাস পেয়েছে।

যদিও ভারতে মূলধারার আলোচনা এখন জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে, কিন্তু প্রশ্ন হল “এটি দরিদ্রদের অর্থনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে কিনা?” বৈষম্যের কারণে মহামারী চলাকালীন ভারতে ৬০ শতংশ দারিদ্র্য বৃদ্ধি হয়েছে, তবুও ভারতে এখন বিশ্বর তৃতীয় বৃহত্তম সংখ্যক বিলিয়োনিয়ার রয়েছে। সুতরাং, দেখাই যাছে জিডিপি বৃদ্ধির হার এবং দারিদ্র্যের ঘটনা হ্রাসের সাথে সংযোগ খুবই দুর্বল।

ভারতীয় অর্থনীতিতে বৈষম্য রেকর্ড পরিমাণে। নীচের ২০ শতাংশ ভারতীয়র কাছে জাতীয় সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশ। যখন আমরা সর্বনিম্ন আয়ের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ বিবেচনা করি, তাদের কাছে রয়েছে জাতীয় সম্পদের মাত্র ১৫ শতাংশ। যেখানে শীর্ষ ১ শতাংশ আয়ের ভারতীয়র অংশ ১৫ শতাংশের বেশি। এছাড়াও, শীর্ষ ১ শতাংশ গত ত্রিশ বছরে জাতীয় আয়ে তাদের অংশ প্রায় তিনগুণ করেছে। ভারত এখন অসম অর্থনীতিতে বিশ্বের এক নম্বর।

সাম্প্রতিক দশকগুলিতে, গ্রামীণ এলাকায় জমির পুনর্বন্টন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। জমির সিলিং আইন ক্রমবর্ধমান ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। পরিবর্তে, সরকারগুলি শিল্প এবং নগরায়নের জন্য জমি সুরক্ষিত করার দিকে মনোনিবেশ করে। ক্ষুদ্র কৃষকরা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে ঋণের কারণে। ২০০১ সালের শুরুর দশকে প্রতি ঘন্টায় ১০০ কৃষক ভূমিহীন হয়ে পড়ে।

অক্সফ্যামের ‘দ্য ইনইকোয়ালিটি ভাইরাস’ নামে একটি প্রতিবেদনের ইন্ডিয়া সাপ্লিমেন্টে বলা হয়েছে যে মহামারী চলাকালীন বিলিয়োনিয়ার মুকেশ আম্বানি এক ঘন্টায় যা আয় করেছিলেন, তা করতে একজন অদক্ষ কর্মীর ১০,০০০ বছর সময় লাগবে। তিনি প্রতি সেকেন্ডে যে আয় করেছিলেন, তা করতে একজন শ্রমিকের তিন বছর সময় লাগে।

ইন্ডিয়া সাপ্লিমেন্ট দেখায় যে মহামারী চলাকালীন সবচেয়ে ধনী বিলিয়োনিয়াররা যা আয় করেছে তার একটি ভগ্নাংশ দিয়ে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা ৪০ কোটি অস্থায়ী কর্মী কমপক্ষে পাঁচ মাস দারিদ্র্যসীমার উপরে থাকতে পারত। ভারতের দরিদ্রদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রতিকূল প্রভাব থাকবে এবং এভাবেই চললে বৈষম্য বাড়তে বাধ্য।

- নিউজ ক্লিক, ২৬ নভেম্বর ২০২১

খণ্ড-28
সংখ্যা-45