বিহারের আরায় কিষাণ মহাসভার জাতীয় কার্যকরী সমিতির বৈঠক
National Executive Committee

গত ১৮-১৯ ডিসেম্বর সম্পন্ন হল এআইকেএম’এর জাতীয় কার্যকরী সমিতির দু’দিনব্যাপী অধিবেশন। অধিবেশনের পূর্বাহ্নে আরার ‘ক্রান্তি পার্কে’ কমরেড বিনোদ মিশ্রের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আহূত সংকল্পসভায় কৃষক নেতারা অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপর শহরের কেন্দ্রস্থলে ‘নাগরী প্রচারিণী সভাগারে’ ‘কৃষক আন্দোলনের ঐতিহাসিক জয়কে আরও মজবুত করুন’ শীর্ষক এক নাগরিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। কনভেনশনে প্রধান বক্তা ছিলেন এআইকেএম’এর অন্যতম সহ সভাপতি সুখদর্শন সিং নাট। তিনি বক্তব্যে দিল্লী সীমান্তে চলা বর্ষব্যাপী ঐতিহাসিক গণঅবস্থানের এক জীবন্ত ধারাভাষ্য রাখেন এবং বলেন, “অন্নদাতাদের এই আন্দোলন হল আসলে কর্পোরেট লুট ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের সম্মিলিত সংগ্রামেরই এক ঊজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।” কনভেনশনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের বিহার রাজ্য সম্পাদক কুনালও বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “বিহারের গ্রামাঞ্চলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলিকে আয়ত্ত করে বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষক সংগ্রামের নতুন জোয়ার সৃষ্টির জন্য পার্টি তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে এবং এজন্য পার্টি সদস্যের সংখ্যা এক লক্ষের সীমানাকে অতিক্রম করার কঠিন চ্যালেঞ্জকে ভুললে চলবে না।”

কনভেনশন শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় এআইকেএম’এর জাতীয় কার্যকরি সমিতির অধিবেশন। অধিবেশনে দিল্লী সীমান্তের ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনে এক জোরদার ছাপ ফেলা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে এআইকেএম’এর উদ্যোগ কেমন থেকেছে তার বিস্তৃত পর্যালোচনা করা হয়। এর সাথে সাথে আন্দোলনের ঐতিহাসিক বিজয়ের ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে বদল ঘটছে তারসঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রণনীতি ও পদক্ষেপ নির্ধারণের বিষয়েও ব্যাপক চর্চা হয়। অধিবেশনে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ব্যবস্থা, কৃষিবাজার — সমস্ত ক্ষেত্রেই আমেরিকার প্রভাব বৃদ্ধির বিপদকে প্রতিহত করা এবং আমেরিকার সাথে ভারতের কৃষি বিষয়ক জ্ঞান-চুক্তি বাতিল করার প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, কৃষিকে লাভজনক করে তোলা, সেচ ও জলসম্পদ ব্যবহারে কৃষিজমির সুরক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া, কৃষক, কৃষি, পশুপালনকারী সহ আদিবাসীদের জীবনযাত্রার বিকাশ ঘটানোকেও কৃষক আন্দোলনের অন্যতম অন্তর্বস্তু করে তুলতে হবে। এআইকেএম’এর সাংগঠনিক শক্তির বিস্তার ঘটানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। স্থির হয়, জানুয়ারী থেকে জুলাই ২০২২’র মধ্যে সারাদেশে সাতলক্ষ সদস্য সংগ্রহের জন্য অভিযান চালানো হবে। এই সময়পর্বে সংগঠনের ব্লক, জেলা ও রাজ্য সম্মেলনগুলি সম্পন্ন করতে হবে। ২৪টি রাজ্যের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অক্টোবর ২০২২এ এআইকেএম’এর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ঝাড়খন্ডের পালামৌ জেলায় সামন্তশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে মিথ্যা মামলায় ১৮ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কমরেড বিশ্বনাথ সিং কারামুক্ত হওয়ার পর এআইকেএম’এর অধিবেশনে যোগদান করেন। এছাড়া বিহারে কৃষক আন্দোলনের বর্ষীয়ান নেতা, প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক রামদেও বর্মা ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জুপ্রকাশ (ইনিও প্রাক্তন বিধায়ক) অধিবেশন চলাকালীন উপস্থিত হয়ে এআইকেএম নেতাদের অভিনন্দন জানান। জনসাংস্কৃতিক মঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অধিবেশনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-45