কমরেড গৌরী শঙ্কর দত্ত চলে গেলেন
Comrade Gauri Shankar Dutt

এক অস্বাভাবিক সময়ে কমরেড গৌরী শঙ্কর দত্ত চলে গেলেন। বিগত দু’বছর ধরে করোনার তান্ডব আমাদের স্বাভাবিক জীবন তছনছ করে দিয়েছে, স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। এমন সময় আমৃত্যু কমিউনিস্ট গৌরীদার চলে যাওয়া বেদনাদায়ক। তিনি উলুবেড়িয়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। গৌরীদার জন্ম ১৯৩৬ সালে অধুনা বাংলাদেশের ঢাকায়। দেশভাগের কিছুদিন আগে পিতা দুর্গা মোহন দত্ত সপরিবারে শিলিগুড়িতে চলে আসেন। শৈশব থেকে কৈশোরে বেড়ে ওঠা, স্কুল থেকে কলেজ সমস্ত কিছুই শিলিগুড়িতে। ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং রাজনীতির প্রাথমিক পাঠ নিতে চলে যেতেন তরাই অঞ্চলে। চা শ্রমিকদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির প্রচার ও শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্ম হতে শ্রমিকবস্তীতে থেকে যেতেন। পরবর্তীতে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন এবং পূর্বরেলের ডিআরএম দপ্তরে চাকরি নিয়ে হাওড়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। চাকরি জীবনের মাঝপথে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে কৃষকদের মধ্যে কাজ করার জন্য হাওড়া জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন অক্লান্ত গৌরীদা। রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির মেলবন্ধনে তিনি ছিলেন একজন অনন্য সৃজনশীল কমরেড। গড়ে তুলেছিলেন ‘মনন’ সাংস্কৃতিক সংস্থা, মানুষের সঙ্গে আন্তরিক মেলামেশার সহজাত গুণ ওনাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। একসময় ছিলেন সিপিআই’র রাজ্য পরিষদের সদস্য। ৯০’র দশকে সিপিআই’এর সঙ্গে মতাদর্শগত মতবিরোধের ফলে ২০০২ সালে তিনি সিপিআই(এমএল) লিবারেশনে যুক্ত হন। পার্টির প্রাক্তন জেলা কমিটির সদস্য গৌরীদার বহুমাত্রিক কর্মকান্ডে তাঁর অদম্য প্রাণশক্তি ছিল। তবুও প্রাকৃতিক নিয়মের কাছে হার মানতেই হল। এক বর্ণময় জীবনের অবসান হল। আমরা হারালাম একজন সহযোদ্ধাকে। তিনি রেখে গেলেন স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূ ও আত্মীয় বন্ধু সহ অগণিত গুণমুগ্ধ মানুষকে। তাঁর শোর্কাত পরিবারের সঙ্গে আমরাও সমব্যথী।

কমরেড গৌরী শঙ্কর দত্ত লাল সেলাম।

খণ্ড-29
সংখ্যা-2