খবরা-খবর
দেউচা খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে বীরভূম জেলাশাসককে স্মারকলিপি
 against Deucha Mining Project

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি ২০২২ বীরভূম জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, স্বরাজ ইণ্ডিয়া, ইয়ং বেঙ্গল, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ, অল ইণ্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, সারা ভারত কৃষক মহাসভা, আমরা এক সচেতন প্রয়াস, মহিলা স্বরাজ সহ বিভিন্ন সংগঠনের শ’খানেক কর্মী অংশ নেন। বাসস্ট‍্যাণ্ড থেকে মিছিল ডিএম দপ্তরে যায়।

স্মারকলিপিতে মূল দাবি ছিল,
১) অবিলম্বে দেয়ানগঞ্জের প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের ওপর থেকে সরকারকে মামলা তুলে নিতে হবে।
২) ২০১৩’র আইন মাফিক কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে জনসমক্ষে আনতে হবে।
৩) পরিবেশ ও জলবায়ু সংকট প্রশ্নে সংবেদনশীলতা দেখাতে হবে।
৪) খনির নামে এসসি-এসটি ও সংখ‍্যালঘুদের অধিকার হরণ বন্ধ করতে হবে।

সবদিক বিচার করে প্রকল্পটিকে বিপর্যয়কর আখ‍্যা দিয়ে প্রকল্প প্রত‍্যাহার করে নেওয়ার দাবি তোলা হয়।

প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাতে জেলাশাসক সম্পূর্ণ নতুন কথা শুনিয়েছেন। তিনি জানান, প্রকল্পটির ক্ষেত্রে ২০১৩’র জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত আইনটি প্রযোজ‍্যই নয়, কারণ সরকার জমি অধিগ্রহণ করছে না, সরকার জমি কিনে নিচ্ছে!

কিন্তু জমি কিনে নিলে পুনর্বাসন প‍্যাকেজের কথা কেন বলছে সরকার? সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি ডিএম। বিষয়টা যদি নিছক জমি কেনাবেচাই হয় তাহলে গ্রামবাসীদের ওপর অত‍্যাচার চলছে কেন? কেন সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে? এসবের কোনও উত্তর নেই। তবে, গ্রামবাসীদের ওপর পুলিশী অত‍্যাচারকে ডিএম ‘অনভিপ্রেত’ বলেন। স্বীকার করে নেন যে সেরকম ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাহলে গ্রামবাসীদের ওপর থেকে মামলা তুলে নেওয়া হচ্ছে না কেন? সেকথার উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

ডিএম বলেন, ইতিমধ‍্যেই প্রকল্পের প্রথম অংশের অধিকাংশ পরিবার জমি দেওয়ার স্বীকৃতিপত্রে সই করেছেন। যখন ডিএম’কে প্রশ্ন করা হয় যে, অসম্মতিপত্রে কতজন সই করেছেন, তখন জানা যায় যে সে রকম কোনও ফর্ম নেই। অর্থাৎ অস্বীকৃতি নথিভূক্ত করার কোনও জায়গাই নেই। তাহলে যারা সরকারকে জমি বিক্রি করবেন না তাঁদের কী হবে? একথার কোনও জবাব নেই।

Memorandum to District Magistrate

সব মিলিয়ে বোঝা যায় যে সরকার রাজ‍্যবাসীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ইচ্ছেমতো কাজ করছে। জোর করে সম্মতি আদায় করতে চাইছে। এবং ঠিক সেই সিঙ্গুরের সময়কার সরকারের মতোই ‘ইচ্ছুক চাষি’র গল্প হাজির করছে। ডিএম অফিস চত্ত্বরে বিক্ষোভসভায় বক্তারা বলেন, সরকার সাবধান না হলে পরিণতিও সিঙ্গুরের মতোই হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ‍্যালয়ের আইসা সভাপতি রুদ্র প্রভাকর দাস রাজ‍্যের সমস্ত দলিত ও আদিবাসীদের একজোট হয়ে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

৬ জানুয়ারি সন্ধ‍্যায় খবর আসে, ডেপুটেশন কর্মসূচির পরেই জেলাশাসক তড়িঘড়ি দেয়ানগঞ্জে গিয়ে হাজির হন স্থানীয় মানুষকে বোঝাতে। মানুষের সাথে কথা বলতে প্রকল্প এলাকায় এটিই ছিল জেলাশাসকের প্রথম পদার্পণ।

পরদিন, ৭ জানুয়ারি, উদ‍্যোক্তা সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে ২১ জনের প্রতিনিধিদল প্রকল্প এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতে যান। বিশেষত দেয়ানগঞ্জের মানুষের সাথে কথা বলেন তাঁরা। সেখানকার মানুষেরা জানান যে তাঁরা কয়লা খনি চান না। জেলাশাসক দাবি করেছেন যে অধিকাংশ মানুষ জমি দিতে সম্মতি জানিয়েছেন — কিন্তু একথা সম্পূর্ণ মিথ‍্যা বলে জানান গ্রামবাসীরা। দেয়ানগঞ্জের আদিবাসী মানুষেরা একথা জানিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ব‍্যক্ত করেন এবং তাঁদের সাথে জেলা প্রশাসন প্রতারণা করছে বলে জানান। তাঁরা একথাও জানান যে আগাম খবর না দিয়ে ৬ তারিখ বিকেলে হঠাৎ জেলাশাসক এসে নিজের কিছু কথা বলে চলে যান, কারও কাছে কিছু জানতে চাননি। প্রকল্প এলাকার তিনটি গ্রামের বহু মানুষের সাথে কথা বলে প্রতিনিধিদল। সকলে বারবার জানিয়েছেন যে তাঁরা কয়লা খনি চান না, জমি দেবেন না।

প্রতিনিধিদলের এলাকা পরিদর্শন সম্পর্কে জেলাশাসকের যে মন্তব‍্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তাকে নিন্দা জানিয়েছেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ‍্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার। জেলাশাসক বলেছেন যে পরিদর্শকেরা উসকানি দিতে গেছে। অভিজিৎ মজুমদার বলেন, জেলাশাসকের একথা বলার অধিকার নেই। জেলাশাসক আসলে শাসক দলের নেতার ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। যে কোনও রাজনৈতিক দল বা ব‍্যক্তির অধিকার আছে ওই এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের কথা শোনার এবং নিজেদের কথা বলার। বাংলার গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন সকলকে স্থানীয় মানুষের প্রকৃত মতামত জানার আহ্বান রেখে অভিজিৎ মজুমদার জানিয়েছেন, এই বিপর্যয়কর খনি প্রকল্প সম্পর্কে জনমত গঠন করা ও প্রকল্প এলাকার মানুষের পাশে রাজ‍্যবাসীকে দাঁড় করানোর লক্ষ‍্যে পার্টি অন‍্যান‍্য সম মনোভাবাপন্ন শক্তিকে ঐক‍্যবদ্ধ করে লড়াই চালিয়ে যাবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-2