খবরা-খবর
পঞ্চায়েতের ঘুঘুর বাসা ভাঙ্গার লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে চলুন
break the pigeon house

বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জোর করে বিরোধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আটকানো, মস্তানদের মাধ্যমে ছাপ্পা ভোট দিয়ে শেষ বিচারে ভোট গুনতে না দিয়েই পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস গ্রামাঞ্চলের ক্ষমতা দখল করেছিল। তারপর কার্যত গ্রামাঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উপর নামিয়ে এনেছে কয়েকজনের রাজত্ব। সরকারি আমলাদের দু’একজনকে জো-হুজুরে পরিণত করা হয়েছে। দুর্নীতি ও দলবাজি অবাধ ও বেআব্রু হয়ে উঠেছে। এই সবের বিরোধিতা করলেই নামানো হচ্ছে সন্ত্রাস, দমন, জরিমানা এবং পুলিশী নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা। তাই মানুষের বিক্ষোভ বেড়ে চলেছে। মানুষের জীবন-জীবিকার সংকট ও দুর্নীতি-দলবাজির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়াই এই সময়ের দাবি। অন্যান্য গ্রামপঞ্চায়েতের মতোই পুর্ব বর্ধমান জেলার পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের মেড়তলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ দিনের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত। মানুষ বছরে ১৫ দিনও কাজ পায়নি। যেটুকু কাজ দিয়েছে তাতে অনেকেই দীর্ঘদিন পরও মজুরি পায়নি। যারা মজুরি পেয়েছে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম পেয়েছে। যেখানে বর্তমান সরকারি এমজিএনআরইজিএ আইনে দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ২১৩ টাকা, সেখানে দেওয়া হয়েছে দৈনিক ১৫০ টাকা, ৭৫ টাকা, কোথাও আরও কম। বিডিও ডেপুটেশনে বলা হল মাপ অনুযায়ী মজুরি পেয়েছেন।

কিন্ত বাস্তব হল মেড়তলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কোথাও ১০০ দিনের কাজের মাটি জরিপই করা হল না। উল্টো দেখা গেল বোর্ড লাগানো হয়েছে কিন্তু রাস্তার কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। আমবাগানে ট্রাক্টর ঘুরিয়ে মাষ্টার রোল করে টাকা তোলা হয়েছে। দেখা গেল যেখানে অনেকেই মজুরি পেলেন না বা কম মজুরি পেয়েছেন। অথচ তৃণমূলের এক লোকাল নেতা কোনও কাজ না করেই পঞ্চায়েতের প্রতিটি গ্রামসভার কাজের মাষ্টাররোলে তিনি এবং তাঁর স্ত্রীর নামে পুরো মজুরি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের টাকা নিয়ে চলছে তোলাবাজি। অনেক গরিব মানুষের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। তাই কাঁচাবাড়ি থাকা সত্ত্বেও গরিব মানুষের ঘর হল না, অথচ অনেক দোতলা বাড়ির মালিকের নামেও টাকা তোলা হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে গত ১১ জানুয়ারী মেড়তলা গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পুর্বস্থলী-কাটোয়া এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে ডেপুটেশন সংগঠিত করা হল। ১০ জানুয়ারী অঞ্চলের সমস্ত গ্রামে মাইক নিয়ে প্রচার করা হয়। ডেপুটেশনে প্রতিনিধিত্ব করেন এরিয়া কমিটির সম্পাদক শিবু সাঁতরা ও কমিটি সদস্য বিনয় মন্ডল ও পার্থ মন্ডল। বিক্ষোভসভায় বক্তব্য রাখেন রাজ্য কমিটির সদস্য আনসারুল আমন মন্ডল ও আরওয়াইএ’র রাজ্য নেতা রণজয় সেনগুপ্ত। আলোচনার সময় দুর্নীতি প্রশ্নে নির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরে সময় দেওয়া হল। সমাধান না হলে আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়া হবে।

বিক্ষোভসভায় তোলা দাবিগুলি হল
১) এমজিএনআরজিএ প্রকল্পের কাজে বকেয়া মজুরি অবিলম্বে দিতে হবে। কম মজুরি দেওয়া চলবেনা। পর্যাপ্ত কাজ দিতে হবে। দুর্নীতি ও দলবাজি বন্ধ করতে হবে। বছরে ২০০ দিন কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।

২) বাংলা আবাস যোজনার ঘরের নতুন তালিকা সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করতে হবে। পুরনো ঘরের তালিকার বকেয়া তালিকা জানাতে হবে।

৩) অনতিভুক্ত ভাগচাষী, লীজ ও পাট্টাহীন গরিব কৃষকদের সরকারি প্রকল্পের সুযোগ দিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ধান সংগ্রহ নিয়ে গরিব কৃষকদের বঞ্চনার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৪) সারের কালোবাজারী বন্ধ করতে হবে। নির্দিষ্ট মূল্যের বেশি দামে সার বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-2