বিবৃতি
রাজ্যে বেলাগাম করোনা সংক্রমণ, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে
corona rise in the state

মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২০-২১ সাল জুড়ে প্রথম ও দ্বিতীয় করোনা সংক্রমনের ঢেউ এরাজ্যে আছড়ে পড়েছিল। বহু প্রিয়জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে, তাকে কীভাবে জনস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজে লাগানো যায়, তা ছিল সকলের চিন্তায়। অতিমারী ও মহামারী প্রতিরোধে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এই ছিল রাজ্যের সংবেদনশীল মানুষের প্রত্যাশা। অথচ আশ্চর্য হয়ে রাজ্যবাসী দেখলেন, জনস্বাস্থ্যের এত বড় বিপর্যয়ের পরও সবাই আমরা ভুলে গেলাম অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু পথযাত্রী প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা। ভুলে গেলাম, বেড পাওয়ার আশায় অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে মায়ের ছুটে বেড়ানোর দৃশ্য। ভুলে গেলাম অক্সিজেন সিলিন্ডার জাপটে হাসপাতালের বারান্দায় মৃত্যু পথযাত্রী প্রিয়জনের বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টার কথা।

ঢেউ চলে যেতে না যেতেই সরকারি আধিকারিক ও তাঁদের হাতে গোনা পরামর্শদাতারা অপচয় বন্ধে সেফ হোম বা আইসোলেশন সেন্টারগুলি তুলে দিলেন। করোনা বেডগুলি প্রায় তুলেই দেওয়া হল। অতিরিক্ত কিছু স্বাস্থ্যকর্মী যাদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে বিদায় জানানো হল। কেউ ভাবতেই পারেন যে ভাইরাস নিয়ে গবেষণার জন্য নতুন নতুন ভাইরোলজি ইনস্টিটিউট খোলার জন্য সরকার উদ্যোগী হয়ে পড়ায় ঐসব অপচয় বন্ধ করা হয়েছিল। না, না। এধরনের ভ্রম থাকা ঠিক নয়। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা এরাজ্যের ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কোনো বৈঠক করতেও দেখা যায়নি। বরং আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জীবনদায়ী দামী ওষুধ চুরির গল্প নজরে আসল। কোনো কোনো হাসপাতালে বেড পাইয়ে দেওয়ার জন্য টাকার লেনদেনের কাহিনী শোনা গেল। শাস্তি কি হয়নি? নিশ্চয় হয়েছে। একজন অভিযুক্ত চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। যার পরামর্শে এসএসকেএম হাসপাতালে অসুস্থ কুকুরের ডায়ালিসিস হয়, বা জীবনদায়ী ওষুধ কেলেঙ্কারি ঘটে, তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।

যা হওয়ার তাই হল। এখন করোনা (ওমিক্রন সহ) সংক্রমণে আমাদের রাজ্য দ্বিতীয় স্থানে, মহারাষ্ট্রের ঠিক পরেই। লাগামহীন মেলা, খেলা, উৎসব ইত্যাদি প্রভৃতি সবই আমরা করলাম। করোনা হয়ত এরজন্যই অপেক্ষা করছিল। তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কাল বেড়িয়ে পড়ার মুখে। সবার আগে আক্রান্ত হলেন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা, শয়ে শয়ে।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের জনগণের স্বার্থে সমস্ত পরামর্শ, উদ্যোগ, শক্তিকে একত্রিত করা প্রয়োজন। জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গকে সামিল করার জন্য সরকারের উদ্যোগ। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা মানুষের ঘরে ঘরে খাবার, ওষুধ ইত্যাদি পৌঁছে দিয়েছেন তাদেরও সামিল করা হোক। আসুন, আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই। আর একটি প্রাণও যেন অসহায় ভাবে অক্সিজেন, ওষুধ বা চিকিৎসার অভাবে হারিয়ে না যায়।

জরুরিভিত্তিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকুন মূখ্যমন্ত্রী। শুধু বিধানসভায় উপস্থিতি দেখে নয়, সমস্ত রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হোক। বাংলা পথ দেখাক। সকলের মতামত গ্রহণ করুন জরুরি জরুরি, জরুরি ভিত্তিতে।

dewcha rally on 6 January 2022

(সিউড়ি শহরে ৬ জানুয়ারি বিভিন্ন সংগঠন ও ব‍্যক্তিবর্গের যৌথ বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন, ডেউচা-পাচামি খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে। জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে জমায়েতে বক্তব‍্য রাখছেন অল ইণ্ডিয়া স্টুডেন্টস অ‍্যাসোসিয়েশনের নেতা রুদ্র প্রভাকর দাস। বিস্তারিত রিপোর্ট পরবর্তী সংখ‍্যায়।)

খণ্ড-29
সংখ্যা-1