সম্পাদকীয়
এ চলতে দেওয়া যায় না
allowed to continue

একমাস আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলার বিশেষত, দক্ষিণাংশে গঙ্গার দুপাড়ে কৃষিপণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনে। মরশুমটা শীতের শাকসবজির। শীতের ফসল প্রচন্ড আবহাওয়া কাতর হয়। সেখানে বিধ্বংসী বর্ষণ কদিন যাবত নেমে আসার প্রকোপ ছিল কল্পনাতীত। প্রকৃতির এই অকাল ঘোর বিরূপ হয়ে ওঠা নিয়ে পরিবেশবিদ, প্রকৃতি বিজ্ঞানী ও সমাজ বিজ্ঞানীরা বহুবছর যাবত কেবল জলবায়ুর নিজের মধ্যেই বেগতিক হয়ে ওঠা কারণ বলে মনে করছেন না, দাবি করছেন এর জন্য দায়ি মুনাফা লোলুপ পুঁজির লালসা, যে পুঁজি 'উন্নয়নে'র নামে প্রাকৃতিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলছে। আর তার ভয়ঙ্কর মাশুল গুণছে মরশুমী চাষ ও ফসলের প্রান্তর। এই দৌরাত্ম্য মদত আছে কেন্দ্র-রাজ্যের শাসকদের। এহেন ধ্বংসাত্মক নীতির পরিণামে বিপর্যয় যখন গত মাসে নেমে আসে, তখন গণ্য করা হয়েছিল এরকম দুর্যোগ বিগত তিন-চার দশকে ঘটেনি। তার ফলে মাঠের ফসল মারা যায় মাঠেই, আর গনগনে আঁচ লাগে কৃষিপণ্যের মজুদদারি এবং পাইকারি ও খুচরো সবরকমের বাজারে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কি করবেন বুঝে উঠতে পারেননি। কিছু কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে। এই গ্রামীণ ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি শহর ও শহরতলিতে সমস্ত কৃষিপণ্যের দাম ৩০-৪০-৫০-৬০ শতাংশ চড়ে যায়। রাজ্য সরকারের কৃষি বিভাগ ও মার্কেটিং বিভাগ আশ্বাস দিতে থাকে তিন-চার সপ্তাহে ফসলের প্রাদুর্ভাব ও অগ্নিমূল্য কেটে যাবে। বড় গলায় বলে, ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ও কৃষিপণ্যের ক্রেতাসমাজের পাশে থাকবে তৃণমূল সরকারের 'বাংলা সুফলা প্রকল্প'। এই প্রকল্পে চাষিদের সাথে অন লাইনে সরকারের পণ্য বেচা-কেনার এবং সেই পণ্য ন্যায্য মূল্যে উপভোক্তা নাগরিক সমাজের কাছে বণ্টনের সেতু তৈরি হবে। কিন্তু ২০১৪ সালে চালু হওয়া 'বাংলা সুফল প্রকল্পে' ক্রেতাদের কাছে স্থায়ী দোকান ও চলমান কাউন্টারের সংখ্যা এখনও এত কম যে, একে কিছুতেই গণবণ্টন ব্যবস্থার সমতুল মানা যায় না। আর, দামেও খোলা বাজারে বিক্রির মূল্যের তুলনায় গড়ে এক-দু'টাকা কম মাত্র। অন্যদিকে, কৃষকদের থেকে সরাসরি ফসল কেনার পরিকাঠামোয়ও খুবই কম। এ ব্যাপারে খাদ্যশস্যের বিগ বাজারগুলোর সরাসরি সংগ্রহের হাত অনেকবেশি লম্বা-চওড়া, তার সাথে 'সুফল বাংলা প্রকল্প' কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই থাকে না, আসে না। সুতরাং রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প এখনও উল্লেখযোগ্য কিছু, প্রতীকী পাইলট প্রজেক্টের মতো চালু আছে, মাসখানেক সময় আগেকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির কোনও উপশম পুষিয়ে দিতে পারেনি।

উপরোক্ত বিপর্যয়ের ক্ষতে প্রলেপ দিতে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রক দাবি করছে, বেনো জল বের করায় সাহায্য করা সহ নতুন করে স্বর্ণ ধান চাষের জন্য বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। তিনটি জেলা — পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগণা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের জন্য ৪ লক্ষ চাষিকে স্বর্ণ ধান চাষের বীজ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে অনুমান ২.৭ লক্ষ টন ধান হবে, যে ধানচাল দিয়ে রেশনে বিনামূল্যে গণবণ্টনের মজুদ তৈরি করা সম্ভব হবে। সে না হয় হবে, তবু যে ক্ষতিপূরণের দাবি রয়ে গেছে সে ব্যাপারে সরকার থাকছে নিষ্ক্রিয় নিস্পৃহ। এ চলতে দেওয়া যায় না।

খণ্ড-29
সংখ্যা-2