বিবৃতি
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির ধিক্কার ও প্রতিবাদ
 AIPWA against police terrorism

যাদবপুরের পড়ুয়া ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের উপর রাষ্ট্রীয় পুলিশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে

৭ ফেব্রুয়ারি বারুইপুর ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের অন্তর্গত নরেন্দ্রপুর থানা অকথ্য পুলিশী সন্ত্রাস চালালো মত-প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে সংগঠিত এক প্রতিবাদ সভায়।

প্রসঙ্গত, দলিত আন্দোলনের নেতা শরদিন্দু উদ্দীপন ফেসবুকে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে একটি পোস্ট দেন। এই পোস্টকে ঘিরে শরদিন্দু উদ্দীপনের গ্রেপ্তারি ও হেনস্থার বিরুদ্ধে ৭ তারিখ বিকেলে কামালগাজি মোড়ে জমায়েত ও মিছিলের ডাক দেয় আইসা, অ্যাপোয়া, এপিডিআর, একুশের ডাক সহ বিভিন্ন গণসংগঠন। সভা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উক্ত থানার পুলিশ চুলের মুঠি ধরে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে কমরেড রুদ্রপ্রভাকর দাস ও আরো অনেককে। তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করলে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির রাজ্যনেত্রী চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরীকেও আটক করে। গ্রেপ্তার করা হয় ছ’জন বিক্ষোভকারীকে। কমরেডদের মুক্তির দাবিতে থানার সামনে জড়ো হন পড়ুয়া, সামাজিক ও গণআন্দোলনের কর্মীরা। বেশ কিছুক্ষণ টালবাহানার পর ব্যক্তিগত বন্ডে গ্রেপ্তার হওয়া সাথীরা ছাড়া পাওয়ায়, সংহতিতে জড়ো হওয়া যাদবপুরের পড়ুয়ারা স্লোগানে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন মুক্তি পাওয়া সাথীদের। স্লোগান ওঠার সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় কমরেডদের। চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে এলোপাথাড়ি লাঠি আর লাথি চালাচ্ছিল পুলিশ, এরপর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে থানায় নিয়ে যায়। এক মহিলা কমরেড ‘লাল সেলাম’ স্লোগান তোলায় জঘন্য অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে তাকেও লাঠিপেটা করা হয়। অপরাধ — তার দৃঢ় কণ্ঠের ‘লাল সেলাম’ স্লোগান। লাঠির ঘা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে অন্য দুই মহিলা কমরেডের বুকে ধাক্কা মারে, শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্বিচারে আঘাত করে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ। সাথে চলে অশ্রাব্য গালিগালাজ, থানায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের হুমকি। দু’জন পুরুষ পুলিশ সিঁড়ি দিয়ে টেনে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে থানায় তোলে এক মহিলা কমরেডকে। আবারো গ্রেপ্তার হয় ১১ জন কমরেড। থানার ভিতরে ফোনের পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকার করায় নির্বিচারে লাথি মারা হয় মহিলা কমরেডদের। পুলিশ লকআপেও সমস্ত কমরেডদের উপর অকথ্য মারধর চলে। গুলি করে মেরে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ লকআপে এই নজিরবিহীন অত্যাচারের ঘটনা দেখিয়ে দেয় তৃণমূল সরকারের পুলিশ বাহিনীর এক অংশ হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের ধারক ও বাহক।

কমরেড মলয় আর চন্দ্রাস্মিতাকে মেডিকেল করাতে নিয়ে গেলেও আগে থেকে লিখে রাখা সার্টিফিকেটে নাম বসিয়ে দেওয়া হয়। লকআপে বাকি আটক কমরেডদের কোনো মেডিকেল চেক-আপ করানো হয়নি। মেরে রক্তাক্ত করে দেওয়ার পরেও কমরেডদের ন্যূনতম চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়নি।

গ্রেপ্তার হওয়া সাথীদের পরের দিন বারুইপুর কোর্টে তোলা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, অপরাধমূলক কাজে উস্কানি দেওয়া ইত্যাদি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বারুইপুর কোর্টে, গ্রেপ্তার হওয়া সাথীদের কোমরে দড়ি বেঁধে আনা হয়, যা মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত আচরণ। পুলিশের মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে জামিন খারিজ হয় সমস্ত কমরেডের।

এর আগেও, সোহরাব হোসেন নামের এক পুলিশ কনস্টেবল ও তার পরিবারের মহিলাদের উপর একইরকম নিপীড়ন চালিয়েছিল এই থানার পুলিশ। শরদিন্দু উদ্দীপনের মত-প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণসহ গতরাতের পুলিশী সন্ত্রাস আদপে উক্ত থানার ব্রাহ্মণ্যবাদী ও পিতৃতান্ত্রিক চেহারার প্রতিফলন।

ফ্যাসিস্ট বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মত আজ পশ্চিমবাংলায় পুলিশ প্রশাসন যেভাবে মত-প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণআন্দোলনকারীদের বেআব্রু আক্রমণ করছে আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি।

আমরা, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশের বর্বরোচিত ও পিতৃতান্ত্রিক সন্ত্রাসকে ধিক্কার জানাই। গ্রেপ্তার হওয়া কমরেডদের অবিলম্বে মুক্তি চাই। নরেন্দ্রপুর থানার হেনস্থাকারী ও অত্যাচারী অফিসারদের শাস্তি চাই।

সমগ্র গণতান্ত্রিক মহলের কাছে আমাদের আহ্বান, মত-প্রকাশের স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক হোন।

(সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে প্রচারিত বিবৃতি)

খণ্ড-29
সংখ্যা-6