হুগলি জেলার পৌর নির্বাচন ও আমরা
elections in Hooghly district and we

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে হুগলি জেলার ৪টি পৌরসভার ৮টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন; ৩টি করে কোন্নগর ও উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভায়, বাকি ২টি চাঁপদানি ও হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভায়।

বন্ধ ডানলপ কারখানার কঙ্কাল ছুঁয়ে শুরু হয়েছে হুগলি-চুঁচুড়া পৌরসভা, অচল হয়ে পড়া হিন্দমোটর কারখানা দাঁড়িয়ে আছে কোন্নগর ও উত্তরপাড়া পৌরসভার মাঝে। আর চাঁপদানি পৌরসভা জুড়ে জুট শিল্পের হাহাকার। এখানে লকডাউনের পর থেকেই অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিকরা চরম অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন। নির্মাণ থেকে হকারি, হকারি থেকে টোটো চালক — এক পেশা থেকে অন্য পেশায় ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছেন অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রের মেহনতি মানুষেরা।

এবারের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব এই সবকটি পৌরসভাতেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রার্থী নির্বাচনের সময় থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দলবদল, রাস্তা অবরোধ এমনকি নির্দল বা বেশ কিছু আসনে দলত্যাগ করে কংগ্রেস দলের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়া অবধি গড়িয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সারা রাজ্যের মতো হুগলি জেলাতেও বিজেপি’র হতোদ্যম অবস্থা এখনও তেমন কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

সিপিআই(এমএল) যে অল্প কিছু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেখানে নগরোন্নয়নের মানচিত্রে ঠাঁই না পাওয়া অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিক সহ প্রান্তিক মানুষদের দাবিগুলোকে জোরের সাথে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকে প্রচারে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। চাঁপদানিতে যে আসনে আমরা লড়ছি সেটি জুট শিল্পের শ্রমিক মহল্লায় অবস্থিত এবং আমাদের প্রার্থীও এক জুট শ্রমিক নেতা কমরেড সুদর্শন প্রসাদ সিং, উত্তরপাড়া ও কোন্নগর মিলিয়ে ৬টি আসনের ৪টিতে আমাদের প্রার্থীরা মহিলা, বাকিরা শ্রমিক ও সংগঠক, চুঁচুড়াতে যিনি দাঁড়িয়েছেন তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে থাকা যুবক। অল্প সময় হাতে থাকলেও কর্মীরা উৎসাহের সাথে এবং দ্রুত দেওয়াল লিখনে নেমে পড়েন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থীকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু হয়েছে।

পরিষ্কার রাস্তাঘাট, জল কিম্বা নর্দমা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার নগরোন্নয়নের যে চালু মডেল তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বন্ধ কারখানার সমস্যা, শহরাঞ্চলের বেকার যুবক-যুবতীর সমস্যা কিংবা অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিগুলোকে নগরোন্নয়নের সাথে যুক্ত করার দাবি নিয়ে আমরা শহরাঞ্চলেও একশো দিনের কাজ, গরিব মেহনতি মানুষদের জন্য আবাসন, মাইক্রো ফিনান্স সংস্থাগুলোর জুলুমবাজির বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখন যেমন হয়েছে তেমনি এগুলোকেই প্রচারের মূল বিষয় করা হচ্ছে। বিজেপি’কে একচুলও ছাড় না দিয়ে টিএমসি’র দুর্নীতি-দলতন্ত্র-সন্ত্রাস, সাম্প্রতিককালে পুলিশি জুলুমের ঘটনাকে তুলে ধরে গণতান্ত্রিক মানুষকে জোটবদ্ধ করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। নারীদের দাবি নিয়ে মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে মহিলা প্রার্থীদের কেন্দ্রগুলিতে আলাদা ভাবে প্রচার চলবে, যা নিয়ে প্রাথমিক বৈঠক হয়ে গেছে, একইভাবে আরওয়াইএ’র পক্ষ থেকেও প্রচারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। চুঁচুড়া শহরে লিটল ম্যাগাজিন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা মিলে আমাদের প্রার্থীর সমর্থনে এক আবেদন পত্র প্রকাশ করেছেন, তাঁদের এবং আরও গণতান্ত্রিক মানুষদেরকে আমাদের পক্ষে এবং প্রচারে নামানোর চেষ্টা চলছে। এই প্রচারে আমাদের মুখপত্র দেশব্রতীকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অন্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত দেশব্রতী নিয়ে আসা হচ্ছে।

শহরাঞ্চলে বামপন্থার বার্তা নিয়ে অসংগঠিত শ্রমিক, কর্মহীন যুবক-যুবতী, বন্ধ কারখানার শ্রমিক, মহিলাদের মধ্যে প্রচারকে জোরালোভাবে নিয়ে যাওয়া ও তাদের সংগঠিত করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা বজায় থাকবে এই নির্বাচনী সংগ্রামেও।

খণ্ড-29
সংখ্যা-7