বিবৃতি
বিরোধিতায় অটল দেউচা-পাঁচামি’র অধিবাসী জনগণ
Deucha-Panchami

দেউচা-পাঁচামি হরিণসিঙ্গা থেকে প্রায় ৫০ জন আন্দোলনরত সাথী কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে মিলিত হন। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ইতিমধ্যেই দেউচা-পাঁচামি’র প্রতিবাদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, প্রেস ক্লাবের বৈঠক আয়োজনেও বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে। দেউচা’র জনগণ অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় এই খনি প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন। সরকারি আধিকারিক কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করেনি। কেউ সরকারকে জমি দেয়নি এবং দিতে রাজি নয়। এমনকি সামান্যতম প্রতিবাদ মিছিল করলে মহিলারা আক্রান্ত হন, অথচ কেউ শাস্তি পান না। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি দেউচায় গণজমায়েত কর্মসূচি আছে।

Deucha-Panchami are adamant

‘বীরভূম জমি, জীবন, জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা’ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, কলকাতার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করে যে — দেউচা-পাঁচামি-হরিণশিঙ্গা-দেওয়ানগঞ্জ অঞ্চলে প্রস্তাবিত কয়লাখনি প্রকল্পের জন্য জোর করে কোনো জমি না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবে বীরভূম জেলার পুলিশ-প্রশাসন ও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস নানারকম ছলচাতুরি, তথ্যের কারচুপি, হুমকি এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। স্থানীয়রা ‘স্বেচ্ছায়’ জমি দিয়ে দিচ্ছে বলে একটি বিভ্রান্তকর, মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে। বাস্তবে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কয়লাখনির বিরুদ্ধে।

এই কয়লাখনি প্রকল্পের বিরোধিতায় স্থানীয় সাঁওতাল ও বাঙালি গ্রামবাসীদের আন্দোলনের যৌথমঞ্চ ‘বীরভূম জমি, জীবন, জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা’ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং জনগণের সামনে নিম্নলিখিত বক্তব্য তুলে ধরছে।

১) আইন অনুযায়ী যেকোনো প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার প্রথম ধাপ প্রস্তাবিত প্রকল্প অঞ্চলের মানুষের সম্মতি নেওয়া। অথচ দেউচা-পাঁচামি-হরিণশিঙ্গা-দেওয়ানগঞ্জ অঞ্চলে কয়লাখনি প্রকল্প হওয়া উচিত কিনা, সেবিষয়ে স্থানীয় মানুষের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। অগণতান্ত্রিক পন্থায় কয়লাখনি প্রকল্প শুরু করার আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি।

২) কয়লাখনি হবে এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে নিয়েছে। তারপর সেই সিদ্ধান্ত সরকার স্থানীয় মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। স্থানীয় মানুষের মতামত না নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ ঘোষণা করে দিয়েছেন। এই চাপিয়ে দেওয়া কয়লাখনির সিদ্ধান্ত এবং তথাকথিত ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের প্যাকেজ সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামবাসী সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ আমরা কোনও কিছুর বিনিময়েই জমি থেকে উচ্ছেদ হতে রাজি নই।

৩) প্রস্তাবিত কয়লাখনি বাস্তবায়িত করতে হলে এলাকার পাঁচ-ছ হাজারের উপর পরিবারকে উচ্ছেদ হতে হবে, যাদের অধিকাংশই আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু, এছাড়াও দলিত এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর পরিবারও আছে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, প্রকল্প অঞ্চলের বাইরের বহুদূর পর্যন্ত নদী, নালা এবং কৃষিক্ষেত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই ক্ষতিপূরণ টাকা বা চাকরির বিনিময়ে কিছুতেই হতে পারে না।

৪) পশ্চিমবঙ্গে কোনো নতুন কয়লাখনির আর প্রয়োজন নেই বলেই আমরা মনে করি। প্রকৃতি বিরোধী কয়লাখনি প্রকল্পের পিছনে দশ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে, রাজ্য সরকার এই অর্থ সৌর, বায়ু ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচা করলে জনগণের মঙ্গল হবে।

৫) গ্রামবাসী মহিলাদের লাঠিপেটা এবং নির্যাতন করে, ভয় দেখিয়ে, জমি দখলের যে অপচেষ্টা মহম্মদবাজার থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই করেছে, তার বিরুদ্ধে আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে চলেছি।

৬) দেউচা-পাঁচামি-হরিণশিঙ্গা-দেওয়ানগঞ্জ অঞ্চলে প্রস্তাবিত কয়লাখনি প্রকল্প বাতিল করার দাবিতে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারী, বেলা ১টা থেকে দেওয়ানগঞ্জ গ্রামে মহাসভার পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ জনসভার ডাক দেওয়া হচ্ছে। এই দাবির স্বপক্ষে দাঁড়ানো সমস্ত প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক শক্তি এবং ব্যক্তিদের আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

ধন্যবাদসহ,

লক্ষী রাম বাস্কে, মাইনামতি সোরেন, জগন্নাথ টুডু, গণেশ কিস্কু, হপণমই হেমব্রম, সুকল মুর্মু, মাকলু কিস্কু, বুধি হাঁসদা, রতন হেমব্রম, মোহন মণ্ডল, লক্ষী মুর্মু;

সঙ্গে ছিলেন পার্থ ঘোষ, প্রসেনজিৎ বসু, অভীক সাহা, ইন্দ্রাণী দত্ত, অমলেন্দু ভূষণ চৌধুরী

খণ্ড-29
সংখ্যা-6