সিদ্ধান্ত
জনস্বার্থ বিরোধী দেউচা-পাঁচামী প্রকল্প, পুলিশী হামলা ও শাসকদলের পৌর নির্বাচনী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক হোন!
Unite against the the electoral terrorism of the ruling party

গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পার্টির সাধারণ সম্পাদক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকের শুরুতে বিগত দিনে প্রয়াতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এইসময়ে প্রয়াত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পার্টি নেতা ও কর্মী — যথাক্রমে উড়িষ্যার বর্ষীয়ান প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য ক্ষীতীশ বিসোয়াল, বিহারের প্রবীণ প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য পবন শর্মা, পশ্চিমবাংলার গৌরীশঙ্কর দত্ত, অমিতাভ দে (ফুচকন) (হাওড়া), কুহেলী বসু (উঃ চব্বিশ পরগণা), নিমাই মন্ডল (পূর্ব বর্ধমান), বানের শেখ (নদীয়া), হারাধন আদক (হুগলী), বাবু মজুমদার (জলপাইগুড়ি), হরেন মন্ডল, ঝুমা দাস, বিশ্বনাথ নস্কর, দিলীপ পাল (কাঁদন), শম্ভু সরকার, লিয়াকত মোল্লা (দঃ ২৪ পরগণা)।

ঐ বৈঠকে বিশেষ করে চলমান পরিস্থিতির উপযোগী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

১) দেউচা-পাঁচামী খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্পের বিরোধিতায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বহুমুখী উদ্যোগ নেবে। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দিশায় ঐ এলাকার আদিবাসী জনগণের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সেখানকার সমস্ত গরিব মানুষের সাথে একাত্মতা গড়ে তোলা, রাজ্য জুড়ে বিশেষত কলকাতায় নানাবিধ শক্তির সাথে এই সর্বনাশা প্রকল্প বিরোধী জনমত সংগঠিত করা ও আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে যৌথ কার্যকলাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বীরভূম জেলায় পার্টি সংগঠন ও অন্যান্য শক্তিকে সমাবেশিত করে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়ার সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই লক্ষ্যে পরিস্থিতির বিকাশের সাথে সঙ্গতি রেখে সময়োপযোগী কর্মসূচি ঠিক করা হবে। আশু দুটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতার মৌলালী যুবকেন্দ্রে সম্প্রতি গঠিত যৌথমঞ্চের পক্ষ থেকে গণকনভেনশন হবে, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি দেউচা-পাঁচামী এলাকায় আক্রান্ত মানুষের উদ্যোগে গঠিত সংগঠনের আহ্বানে সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে যাওয়া হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষিত হবে। দেউচা-পাঁচামী এলাকায় কাজের জন্য পার্টি গণসংগঠনগুলিকে বিশেষ করে পার্টির উদ্যোগে গড়ে ওঠা আদিবাসী সংগঠন ও অগ্রণী কর্মীদের ঐ এলাকায় যেতে হবে। তৃণমূল সরকারের মিথ্যাচার, দ্বিচারিতা, শঠতা ও সমস্ত রীতি পদ্ধতি আইনকানুনকে নস্যাৎ করে নামিয়ে আনা সন্ত্রাসকে মোকাবিলা করে গরিব মানুষের জীবন-জীবিকা, পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

২) শহরাঞ্চলে কাজের সম্প্রসারণ, নতুন নতুন এলাকা ও শক্তির মধ্যে যাওয়ার লক্ষ্যে আসন্ন পৌর নির্বাচনে সিপিআই(এমএল) গুরুত্বের সাথে অংশগ্রহণ করবে। বর্তমান রাজ্য পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি ধাক্কা খাওয়ার পর বামপন্থীদের পরিসর কিছুটা বাড়ছে। একে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে হবে। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট বিজেপি’র সর্বাত্মক বিরোধিতা অব্যাহত রেখে তৃণমূলের অপশাসন, স্বৈরাচার, জনমোহিনী কর্মসূচির আড়ালে গরিব মেহনতী মানুষের প্রতি প্রতারণা ও অধিকারহরণের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের বার্তা তুলে ধরে চলবে। সারা রাজ্যে বামপন্থীদের নির্বাচিত করার আহ্বান জানাবে। নির্বাচনের নামে প্রহসন, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা, চরম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাবে। নির্বাচনী প্রচারে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জনমুখী উন্নয়নের বিষয়গুলিকে তুলে ধরবে। এছাড়া গণতন্ত্রের প্রশ্নকে ফোকাসে রেখে নাগরিকদের অধিকার, নিরাপত্তা, পুরসভার স্বশাসন প্রভৃতি প্রশ্নগুলিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। নিম্ন মধ্যবিত্ত মেহনতী মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলি অগ্রাধিকারে থাকবে। উঃ ২৪ পরগণার ৫টি পৌরসভায় ১টি করে ওয়ার্ডে, হুগলীর ৪টি পৌরসভার ৮টি ওয়ার্ডে, বাঁকুড়ার ১টি পৌরসভার ২টি ওয়ার্ডে, নদীয়ার ১টি পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ডে, দক্ষিণ ২৪ পরগণার ১টি পৌরসভার ১টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হচ্ছে। বাঁকুড়া ও নদীয়া জেলায় সিপিআই(এম)-এর সাথে আসন বোঝাপড়া হয়েছে। তবে সেখানে পার্টি স্বাধীনভাবে প্রচার ও নির্বাচনী কর্মকান্ড চালাবে। বামদলগুলির সাথে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার মাত্রা অনুযায়ী যুক্তভাবে নির্বাচনী কাজ চালানো হবে।

৩) আগামী ২৮-২৯ মার্চ সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে ট্রেডইউনিয়নগুলির কর্মসূচিকে সফল করে তুলতে সমগ্র পার্টি সংগঠনকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। কৃষক ও কৃষিমজুর সংগঠনগুলি ঐ একই দিনে গ্রামীণ ভারত বনধের আহ্বান জানিয়েছে। ধর্মঘটকে সফল করে তুলতে সমস্ত গণসংগঠনগুলিকে যুক্তভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

৪) নরেন্দ্রপুর থানায় ও লকআপের ভেতরে পুলিশের সুপরিকল্পিত নৃশংস হামলা মোকাবিলা করে ছাত্র ও মহিলা সংগঠনের কর্মীদের বলিষ্ঠ ও সাহসী প্রতিরোধ অত্যন্ত ইতিবাচক। আক্রান্ত কর্মীদের এই উজ্জ্বল ভূমিকাকে পার্টির রাজ্য কমিটি সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছে। ছাত্র ও মহিলা সংগঠন সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পার্টি, গণসংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও ধিক্কার কর্মসূচি সংগঠিত করা হয়েছে। তা অব্যাহত রাখতে হবে। ইতিমধ্যে এই নির্মম পুলিশী সন্ত্রাসের জন্য দায়ী পুলিশ অফিসারদের বরখাস্তের দাবিতে জাতীয় ও রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনের কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হচ্ছে।

মোদী সরকার যখন প্রতিবাদী শক্তিগুলিকে ‘আরবান নকশাল’ বলে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামিয়ে আনছে, তখন তৃণমূল সরকারও মতপ্রকাশ এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর পুলিশী হামলা নামিয়ে আনছে। এটা দেখিয়ে দেয় নকশালপন্থা শাসকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। এই ইতিবাচক দিকটিকে ধরে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে আমাদের পার্টি ও গণসংগঠনগুলি উদ্যোগ বাড়িয়ে তুলবে, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রয়াসী হবে। আক্রমণকারী পুলিশ অফিসারদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-7