নরেন্দ্রপুর থানার সমস্ত দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি চাই!
we want punishment for all the guilty police officers of narendrapur PS

গত ৭ ফেব্রুয়ারি, বিকেল ৫টায়, গড়িয়ার কাছে, বারুইপুর ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের অন্তর্গত নরেন্দ্রপুর থানার অধিকার ক্ষেত্রের মধ্যে, কামালগাজি মোড়ে, এআইএসএ, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, একুশের ডাক, এপিডিআর সহ বিভিন্ন সংগঠন ও মঞ্চ একটি প্রতিবাদসভা আয়োজন করে। উল্লেখ্য, দলিত আন্দোলনের কর্মী শরদিন্দু উদ্দীপন, সম্প্রতি ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কিত একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্ট করার জন্য শরদিন্দু উদ্দীপনকে গ্রেপ্তার এবং হেনস্থার বিরুদ্ধে এবং মত প্রকাশের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করাই ছিল ৭ ফেব্রুয়ারি কামালগাজি মোড়ে সংগঠিত হওয়া সভার একমাত্র লক্ষ্য।

বিকেল ৫.৩০টা - ৬.৩০টা

সভা শুরুর সাথে সাথে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ সভায় উপস্থিত কমরেডদের উপর নামিয়ে আনে পুলিশী সন্ত্রাস। আইসা’র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট প্রেসিডেন্ট রুদ্র প্রভাকর দাস, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সদস্য আকাশ গুপ্তা, যাদবপুরের প্রাক্তনী, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটি সদস্য চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী সহ মোট ৬জন বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করে।

রাত ৭.৩০ টা - ৯.৩০টা

সংগ্রামী সাথীদের মুক্তির দাবিতে থানার সামনে জড়ো হন পড়ুয়া, সামাজিক ও রাজনৈতিক গণআন্দোলনের কর্মীরা। বেশ কিছু সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, ব্যক্তিগত বন্ডে, গ্রেপ্তার হওয়া সাথীরা ছাড়া পাওয়ার পর, তাদের সংহতিতে অভিবাদন জানাতে যাদবপুরের পড়ুয়ারা স্লোগান দেন। স্লোগান দেওয়ার সাথে সাথে তাদের উপর নেমে আসে, পুলিশের অকথ্য অত্যাচার। চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে, এলোপাথাড়ি লাঠি, লাথি, ঘুষি, বুট দিয়ে মাথা মাটিতে চেপে ধরা এসব চলতে থাকে। অশ্রাব্য গালিগালাজ, এবং এই অমানবিক লাঠিপেটার মূল কারণ হিসাবে পড়ুয়াদের ‘লাল সেলাম’ স্লোগানকে পুলিশ দর্শায়। আবারো গ্রেপ্তার করে ১১জনকে। ওই রাতে দুজন ছাড়া পেলেও, বাকি ৯ জনকে আটকে রাখা হয় এবং থানা লকআপের ভেতরেই চলে রাত ধরে বাকি ৯ জন পড়ুয়ার ওপর অকথ্য-অমানবিক ধমকি, মারধর। গ্রেপ্তার হওয়া সাথীদের পরদিন বারুইপুর কোর্টে আনে পুলিশ, জানা যায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, অপরাধমূলক কাজে উস্কানি, ইত্যাদি ধারায় মামলা লাগু হয়েছে। বারুইপুর কোর্টে হাজির করার সময় কোমরে দড়ি বেঁধে আনা হয়। পুলিশের মিথ্যে, ভুয়ো অভিযোগের ভিত্তিতে খারিজ হয় ধৃতদের জামিনের আবেদন। বারুইপুর আদালত, পুলিশকে একটা দিন সময় দেয় কেস ডায়েরি ফাইল করতে। পরদিন অর্থ্যাৎ বুধবার, বিকেল ৪টার সময় জামিন মঞ্জুর হয় বর্ষা এবং সৌমীর। ওইদিনই বাকি সাথীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থী সমাজ। #RELEASEJU9 এই হ্যাশট্যাগ সামনে রেখে মিছিল বেরোয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪নং গেট থেকে এবং যাদবপুর থানা হয়ে সেই মিছিল শেষ হয় যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে। মিছিল শেষে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে ওই চত্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের প্রতি পুলিশের এহেন ঘৃণ্য আচরণ এবং নির্বিচার আক্রমণের প্রতিবাদে জ্বালানো হয় মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কুশপুত্তলিকা। রাস্তা অবরোধ তুলতে সেখানেও নেমে আসে পুলিশের আক্রমণ। পুলিশের মারের মুখে অজ্ঞান হয়ে আইসা রাজ্য কমিটি সদস্য ত্রিয়াশাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আইসা এবং মহিলা সমিতির দুজন সদস্যা বর্ষা এবং সৌমি বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বাকি পড়ুয়াদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পড়ুয়ারা।

guilty police officers of Narendrapur police station

আইসা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ দিবস পালনের ডাকে সাড়া দিয়ে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলি ইত্যাদি জেলায় জেলায় গর্জে ওঠে পড়ুয়া থেকে অভিভাবক, গণতান্ত্রিক-মানবাধিকার-মত প্রকাশের লক্ষ্যে লড়তে থাকা মানুষেরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সাথীদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪নং গেট বন্ধ করে অবস্থান বিক্ষোভ চালায়। এবার #RELEASEJU7, এই দাবিতে আবারও অবরুদ্ধ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজা এসসি মল্লিক রোড। অবরোধ অবস্থানের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বর্ষা দৃপ্ত কণ্ঠে জানান দেন, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ, এবং শেষ পর্যন্ত এটাই বলবো ইনকিলাব জিন্দাবাদ”। ৯জন পড়ুয়ার সংহতিতে এসএফআই, ডিএসও, পিডিএসএফ, রিফ্রাকশন, আরএসএফ, এপিডিআর সহ বিভিন্ন বাম ও গণতান্ত্রিক মহল পাশে দাঁড়ায়।

প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট দাঁড়ায়, বার্তা ছড়ায়। এছাড়াও ১১ তারিখ আইসা দিল্লীতে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীছাত্রদের ওপর পুলিশী হামলা, হেফাজতে বন্দী রাখা ও মামলা চাপানোর বিরুদ্ধে; মুক্তির দাবিতে রাজ্য সরকরের ‘বঙ্গ ভবন’ অভিযান করে ডেপুটেশন দেয়।

পরদিন শুক্রবার বৃহত্তর গণতান্ত্রিক জনশক্তির চাপে, যার কেন্দ্রে ও আত্মঘোষণায় রত ছাত্ররা, এই সম্মিলিত শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাপে মুক্তি পায় বাকি ৭ সাথী সাগুণ, রুদ্র, জিত, সৌমেন্দু, সোহেল, আকাশ এবং মুজতবা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন পড়ুয়া হয়তো মুক্তি পেয়েছে, তবে মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করার আন্দোলন এখানেই শেষ হওয়ার নয়। উত্তরপ্রদেশ বা বিহারে যেভাবে শিক্ষা ও কাজের দাবিতে আন্দোলনের উপর নেমে এসেছে বিজেপি সরকারের অকথ্য আক্রমণ, তারই পুনরাবৃত্তি যেন আমরা দেখলাম বাক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা যাদবপুরের পড়ুয়াদের উপর তৃণমূল সরকারের পুলিশের এহেন আচরণের মধ্যে। বিজেপি-আরএসএস যেভাবে এই দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক পরিসর ধ্বংস করার অপচেষ্টায় নেমেছে, বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর বারংবার দমন-পীড়ন নামিয়েছে, সেই পদ্ধতিই যেন অনুসরণ করছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার। এহেন আচরণ করে টিএমসি নিজেই তার বিজেপি বিরোধিতার উদ্দেশ্যকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে। তৃণমূল শাসনে বারবার গণতান্ত্রিক পরিসরের উপর, বাক-স্বাধীনতার উপর নেমে আসছে পুলিশের মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত আক্রমণ, এমনকি ব্রাহ্মণ্যবাদী ও পুরুষতান্ত্রিক আচরণ।

এই আন্দোলনের দাবি খুব পরিষ্কার,

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার হওয়া পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে সমস্ত ভুয়ো মামলা প্রত্যাহারের কর!
নরেন্দ্রপুর থানার সমস্ত দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি চাই!
নরেন্দ্রপুর থানার ওসি এবং সেকেন্ড অফিসারকে বরখাস্ত করতে হবে!
সরব হোন। বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষা করুন।

খণ্ড-29
সংখ্যা-7