খবরা-খবর
নদীয়ায় হেফাজতে মৃত্যুর তদন্তের দাবি
 death in custody in Nadia

মধ্যরাতে পার্টি কর্মীর বাড়িতে পুলিশী হানা!

নদীয়ার নাকাশীপাড়ায় উৎসবের চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে বচসার একটি ঘটনায় বেথুয়াডহরী থানার পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থানা লকআপে সে নাকি অসুস্থ হয়ে যায়! জেলা সদর কৃষ্ণনগর হাসপাতাল থেকে রেফার করায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা নীলরতন হাসপাতালে। সেখানেই ঘটে তার দুঃখজনক মৃত্যু৷

“থানা লকআপে পুলিশ ওকে একগ্লাস জল দিতে দেয় নি” স্থানীয় পার্টি ও যুবদের এক তদন্তকারী প্রতিনিধি দল মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গেলে তাদের কাছে এ কথা জানালেন মৃত ব্যক্তির স্ত্রী। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি পুলিশী অত্যাচারের ফলেই এই মৃত্যু ঘটলো? রাজ্যের অন্যান্য বেশ কয়েকটি থানার মতো এখানেও কি ঘটলো পুলিশের যথেচ্ছাচার? থানায় মৃত ব্যক্তির উপর পুলিশী নিপীড়ন ও চাপসৃষ্টির বিষয়টি আকারে ইঙ্গিতে সন্দেহ আকারে পরিবারটি জানায়। এছাড়া এলাকার মানুষের সূত্রে জানা যায় সেই বাড়িটিতে থানার অফিসারদের যাতায়াত ও তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বভাবতই পরিবারটির পক্ষে মুখ খোলা খুবই দুস্কর হয়ে পড়ে। সামগ্রিক বিষয়টি বিচার বিবেচনা করে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের স্থানীয় শাখা সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশী হেফাজতে এই মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তোলা হবে। সেই রাতেই বেথুয়াডহরী স্টেশনে এই দাবি সম্বলিত বেশ কিছু পোস্টার মারে আরওয়াইএ এবং পার্টিকর্মীরা। কিছুক্ষণ পরে একটু বেশি রাতে পোস্টারগুলি ছিঁড়ে ফেলা হয়। রাত আড়াইটা নাগাদ আরওয়াইএ এবং পার্টিকর্মী বাবাই দত্তর বাড়িতে পুলিশ যায়। ঘটনাচক্রে সে সময় তিনি বাড়ির দরজায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। পায়ে এবং কাঁধে আঘাত লাগায় তার হাড় ভেঙে যায়। বাড়ির গেটে লাথি মেরে পুলিশ ঢোকে। বলে, এদেরকে এভাবেই বলতে হয়! থানায় মৃত্যু নিয়ে পোস্টার মেরেছিস কেন? ওই বাড়ির লোকেরা তোদের কি বলেছে? হার্ট এ্যাটাকেই তো মারা গেছে, তাহলে পুলিশের দোষ বলছিস কেন? বারংবার পুলিশ অফিসার বাবাইকে এই সব প্রশ্ন করতে থাকে। উত্তরে সে জানায় পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তদন্ত এবং পোস্টার মারা হয়েছে। বাবাই ও তাঁর স্ত্রীর প্রতি অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করার পর পুলিশ তাকে স্থানীয় বেথুয়াডহরি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার দেখানোর পর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। সেই সময়কালে কোনও এক অজ্ঞাত জায়গা থেকে ফোনে নির্দেশ শুনে অফিসার মতো বদল করে তাকে থানায় না নিয়ে বাড়িতে পৌছে দেয় বলে জানা যায়।

গত ৭ মার্চ এই ঘটনার বিরুদ্ধে পার্টি ও যুব কর্মীদের এক দৃপ্ত মিছিল নাকাশীপাড়া থানায় যায়। সেখানে শ্লোগান ওঠে সিপিআই(এমএল) কর্মীকে মধ্য রাতে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করা হলো কেন পুলিশ কর্তৃপক্ষ জবাব দাও! লকআপ হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। পুলিশী সন্ত্রাস বন্ধ কর। রাজ্যের বুকে গণতন্ত্র হত্যা করা চলবে না। রাজনৈতিক অধিকারের উপর পুলিশী হস্তক্ষেপ চলবে না। থানার সামনে খালি গলায় বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পার্টি কর্মী ইয়াদ আলি, আরওয়াইএ-র অমিত দাস, সন্তু ভট্টাচার্য, অমিত মন্ডল প্রমুখ। থানায় ভারপ্রাপ্ত অফিসারের কাছে ডেপুটেশনে ছিলেন পার্টির লোকাল সম্পাদক শিশির বসাক, নদীয়া জেলা কমিটি সদস্য কৃষ্ণ প্রামানিক, জেলা সম্পাদক জয়তু দেশমুখ প্রমুখ।

আশ্চর্যের বিষয়, পুলিশ বেগতিক বুঝে গোটা বিষয়টাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। প্রতিনিধি দলের কাছে তারা গল্প শোনালো আদৌ কোনও জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেপ্তার করতে নাকি তারা বাবাইয়ের বাড়িতে যায়নি। রাস্তায় ভ্রাম্যমান অবস্থায় টহলদারীর সময় বাড়ির ভেতর থেকে একটা শব্দ শুনে তারা বাড়িতে ঢোকে। আহত অবস্থায় দেখে তাকে তুলে নিয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি পৌছে দেয়। এই গল্প আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়, জানিয়ে দিলেন প্রতিনিধিরা। পুলিশী স্বেচ্ছাচার, সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন জারি থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। নেতৃবৃন্দ জানান লকআপে মৃত্যুর তদন্তের জন্য পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আরও জোরদার আন্দোলন চলবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-10