আবেদন
শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য জনগণের উদ্দেশ্যে যৌথ আবেদন
maintaining peace and harmony

এই আবেদনপত্রে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃবর্গ জনগণের উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত আবেদন জানাতে সমবেত হয়েছেন।

আমাদের সমাজে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য শাসকগোষ্ঠীর একাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য, পোশাক, আস্থা, উৎসব এবং ভাষা সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করে চলেছে, এই আচরণ অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।

ঘৃণা প্রচারের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক মঞ্চ হতে বক্তব্য প্রকাশের ক্রমবর্ধমান ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা লাভের সুযোগ নিয়েই এমনটা করা হচ্ছে বলে প্রতিভাত হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম শক্তিশালী ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা সম্প্রতি তীব্র আকার নিয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনসমূহ এই ইঙ্গিতই করছে যে এই ঘটনাগুলি সব জায়গাতেই এক অভিন্ন কায়দায় সংগঠিত করা হয়েছে৷ প্রতিটি ঘটনায় সশস্ত্র ধর্মীয় মিছিল সহ আক্রমণের ঘটনার ঠিক পূর্বেই সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে দিতে উস্কানিমূলক ঘৃণাভরা বক্তৃতা আয়োজিত হয়েছে।

দুঃখের কারণ হিসাবে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য হল ঘৃণা ও অন্ধবিশ্বাস প্রচারের উদ্দেশ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সোশ্যাল মিডিয়া এবং অডিও-ভিস্যুয়াল প্ল্যাটফর্মগুলির যথেচ্ছ অপব্যবহার করা চলছেই, এই পরিবেশ অসহনীয়।

এই সকল ঘটনায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর নীরবতায় সকলেই মর্মাহত, যারা ধর্মান্ধতা প্রচার করছে এবং যারা তাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে জনসমাজে উসকানি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এহেন নিরবতা কার্যত তার ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আক্রমণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করছে, এই নীরবতাই তার সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দেয়।

বহু শতাব্দী ব্যাপী বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ভারতকে সংজ্ঞায়িত ও সমৃদ্ধ করেছে, সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনকে শক্তিশালী করে সকলে একসঙ্গে কাজ করার উদ্দেশ্যে আমাদের সম্মিলিত সংকল্পকে আমরা তাই আরও একবার স্পষ্ট করছি।

আমাদের সমাজে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে এমন বিষাক্ত মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো এবং তার মোকাবিলা করার লক্ষ্যে আমাদের পূর্ব-প্রতিশ্রুতিকে আমরা আরও একবার স্পষ্ট করছি।

আমরা আরও একবার নিজেদের এই দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছি যে আমাদের দেশ তখনই সমৃদ্ধ হবে যদি এটি তার বহু বৈচিত্র্যকে পূর্ণ মাত্রায় সম্মান জানায়, নিজের অন্তরে স্থান দেয় এবং সমবেত অস্তিত্বকে উদযাপন করে।

শান্তি বজায় রাখতে এবং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে তীক্ষ্ণ করতে চায় যারা, তাদের অশুভ উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করার লক্ষ্যে আমরা দেশের জনগণের সকল অংশের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। সারাদেশে আমাদের দলের সকল ইউনিটকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য স্বাধীন ও যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

শ্রীমতী সোনিয়া গান্ধী —ভারতের জাতীয় কংগ্রেস,
শ্রী শরদ পাওয়ার —এনসিপি,
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় —পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন,
শ্রী এম কে স্তালিন —তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এবং ডিএমকে’র সভাপতি,
শ্রী সীতারাম ইয়েচুরি — সাধারণ সম্পাদক, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী),
শ্রী হেমন্ত সোরেন — ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও জেএমএম’র কার্যকরি সভাপতি,
ডঃ ফারুক আব্দুল্লাহ —জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি,
শ্রী তেজস্বী যাদব —বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, আরজেডি,
শ্রী ডি রাজা —সাধারণ সম্পাদক, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি,
শ্রী দেবব্রত বিশ্বাস —সাধারণ সম্পাদক, সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লক,
শ্রী মনোজ ভট্টাচার্য —সাধারণ সম্পাদক, আরএসপি,
শ্রী পি কে কুনহালিকুট্টি —সাধারণ সম্পাদক, আইইউএমএল
শ্রী দীপঙ্কর ভট্টাচার্য —সাধারণ সম্পাদক, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী–লেনিনবাদী)

খণ্ড-29
সংখ্যা-16