ঘটনা ও প্রবণতা : ৩০ শতাংশ মহিলাই নির্যাতনের শিকার
30 percent of women

দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মহিলাই শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার। একথা জানিয়েছে জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ এর রিপোর্ট। তবে দেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার পরিমাণ সামান্য কমেছে। শতকরা হিসেবে তা ৩১.২ শতাংশ থেকে কমে ২৯.৩ শতাংশ হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সি মহিলাদের ৩০ শতাংশই ১৫ বছরের পর থেকে শারীরিক হিংসার শিকার। ৬ শতাংশ মহিলা কোনও না কোনও সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার মাত্র ১৪ শতাংশ মহিলা বিষয়টি নিয়ে সরব হন। ১৮ থেকে ৪৯ বছরের বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে ৩২ শতাংশ তাঁদের সঙ্গীর কাছ থেকে শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের মধ্যে সব চেয়ে বেশি (২৮ শতাংশ) ঘটে শারীরিক হেনস্থার ঘটনা। তারপরে যথাক্রমে মানসিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন বিবাহিত মহিলারা।

মহিলাদের উপরে গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে (৪৮ শতাংশ) কর্নাটকে। তার পরেই রয়েছে বিহার, তেলঙ্গানা, মণিপুর এবং তামিলনাড়ুর নাম। সবচেয়ে কম লক্ষদ্বীপে এই হার মাত্র ২.১ শতাংশ। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের উপরে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা বেশি। শহরে যখন এই হার ২৪ শতাংশ তখন গ্রামাঞ্চলে এই হার ৩২ শতাংশ। নিজের এবং সঙ্গীর শিক্ষাদীক্ষা এবং আর্থিক সঙ্গতি যত বাড়ে, এই হার তত কমে বলে দেখা গিয়েছে সমীক্ষায়। এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্কুলে যাননি এমন মহিলাদের ৪০ শতাংশই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। অন্যদিকে স্কুলের পঠনপাঠন শেষ করেছেন, এমন মহিলাদের ১৮ শতাংশ ওই ঘটনার সম্মুখীন হন। দরিদ্রতম মহিলাদের ৩৯ শতাংশ এবং ধনীতমদের ১৭ শতাংশ মহিলা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। মহিলাদের উপরে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই স্বামীরা একাজ করে থাকেন।

পুরুষদের ক্ষেত্রেও শিক্ষা এবং আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় মহিলাদের উপরে অত্যাচারের বিষয়টি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্কুলের গণ্ডি পেরোনো ২১ শতাংশ পুরুষ যেখানে স্ত্রীর উপরে শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতন করেন, সেখানে স্কুলের গণ্ডি না টপকানো বা অশিক্ষিত পুরুষদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ একাজ করে থাকেন। এরসঙ্গে যুক্ত হয় মদ্যপানের বিষয়টিও। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্বামীর মদ্যপানের হার যত বাড়ে, স্ত্রীর উপরে যৌন বা মানসিক নির্যাতনও তত বাড়ে। নির্যাতিতা মহিলাদের ৭০ শতাংশই মত্ত স্বামীর হাতে যৌন বা শারীরিক হেনস্থার শিকার হন। অন্যদিকে স্বামী মদ্যপায়ী না হলেও ২৩ শতাংশ মহিলা এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ১৮-১৯ বছরের মহিলাদের তুলনায় ৪০-৪৯ বছরের মহিলারা বেশি হিংসার সম্মুখীন হন।

- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ মে ২০২২

খণ্ড-29
সংখ্যা-19