এলাহাবাদে সিপিআই(এমএল) সংগঠিত রাজ্য স্তরের শিক্ষা শিবির

এলাহাবাদে ১৯-২০ অক্টোবর দু-দিনের এক পার্টি শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয় যাতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য কমিটির সদস্যরা সহ ৭৫ জন কমরেড অংশগ্রহণ করেন।

অরিন্দম সেনের আলোচনার বিষয় ছিল “ফ্যাসিবাদ : পন্থা, চ্যালেঞ্জ সমূহ এবং প্রতিরোধ।” তিনি বলেন, ভারতে ফ্যাসিবাদ শুধু ঘৃণা ছড়ানো, উন্মত্ত জনতার চালানো গণপ্রহার, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ এবং দলিতদের উপর আক্রমণের মধ্যেই আটকে নেই। করপোরেট সংস্থাগুলোর হাতে যে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ এবং মূল্যবান সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে সেটাও ফ্যাসিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমাদের দেশ দ্রুতই এক দমনমূলক সংখ্যাগুরুবাদী হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বীজ বপনে ফ্যাসিস্টদের সাফল্য বিপজ্জনক মাত্রা অর্জন করেছে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে পাকিস্তানকে পরাস্ত করার উপায় বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে; এবং উগ্ৰ জাতীয়তাবাদের এই ধারায় জনগণকে বেকারি, কৃষি সংকট এবং শিল্প ক্ষেত্রে মন্দার মতো তাদের প্রকৃত ইস্যুগুলি ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

অরিন্দম সেন আরো বলেন, আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জটা হল ফ্যাসিস্টদের এই সামর্থ্যের মোকাবিলা করা। কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধটা হবে দীর্ঘস্থায়ী এবং বহুমুখী; জনগণের সমাবেশ এবং নির্বাচনী লড়াই যেমন এই প্রতিরোধের অঙ্গ হবে, সেরকমই কোনো বিষয়ের বিকৃত উপস্থাপনার বিরুদ্ধেও মতাদর্শগত লড়াই চালাতে হবে।

‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ বনাম গণ জাতীয়তাবাদ’ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে গোপাল প্রধান বলেন, জাতীয়তাবাদ হল পুঁজিবাদ থেকে জন্ম নেওয়া একটি বুর্জোয়া ধারণা এবং পুঁজিপতি নিজেকে সম্পদের প্রকৃত স্রষ্টা বলে মনে করে। এর বিপরীতে মার্কস বলেন, শ্রমিকের নিজের কোনো দেশ নেই এবং তারাই হল সম্পদের প্রকৃত স্রষ্টা। পশ্চিমী জাতীয়তাবাদ একটা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে শত্রু রূপে চিহ্নিত করে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে তাদের বিরুদ্ধে সমাবেশিত করে, যেমনটা করেছিলেন হিটলার। সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ হল আরএসএস-এর কাঙ্খিত ধারণা যাতে ধর্ম (এ ক্ষেত্রে হিন্দুধর্ম) এবং সংস্কৃতি পরস্পরের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ। সংক্ষেপে, সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ হয়ে ওঠে হিন্দু জাতীয়তাবাদ যাতে মনুস্মৃতির উপর ভিত্তি করে আইন তৈরি হবে। অপরদিকে, গণ জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে এবং তা ভিত্তি করে রয়েছে হিন্দু, মুসলিম এবং অন্য সমস্ত সম্প্রদায়ের সমবেতভাবে হাঁটাচলা, কাজ করা এবং বসবাস করার উপর।

পলিটব্যুরো সদস্য রামজি রাই ‘কাশ্মীর, এনআরসি, অর্থনৈতিক মন্থরতা এবং বর্তমান রাজনৈতিক ইস্যুগুলি সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি’ বিষয়ে আলোচনা করেন।

এরপর প্রশিক্ষণ শিবিরকে কর্মশালায় পরিণত করা হয় এবং কমরেডরা বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেন, প্রশ্ন তুলে ধরেন এবং সেগুলির উত্তরও দেওয়া হয়। রাজ্য সম্পাদক সুধাকর যাদবের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির শেষ হয়।

খণ্ড-26
সংখ্যা-36