প্রস্তাব
বাবরি ধ্বংসের অপরাধীদের শাস্তি দাও

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক শক্তি দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও তার পরবর্তী ঘটনাক্রম ভারতের বহুত্ববাদী ঐক্যের সংস্কৃতিতে ও আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ভিত্তিমূলে এক তীব্র ধাক্কা। ৯ নভেম্বর ২০১৯ সুপ্রীম কোর্ট বাবরি মসজিদের জমির মালিকানা সত্ব মামলায় তার রায় ঘোষণা করেছে। সুপ্রীম কোর্ট এই রায়ে পরিস্কারভাবে বলেছে যে, বাবরি মসজিদ ধ্বংস করাটা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি ও অপরাধমূলক কাজ। কবে এই অপরাধের সাজা হবে?

২৭ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অপরাধীদের কোনও সাজা হয়নি। দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত। এই ধ্বংসের পরবর্তী ঘটনাক্রমে অনেকগুলি দাঙ্গাতে শত শত পরিবার তাঁদের প্রিয়জনদের চিরতরে হারিয়েছেন এবং লক্ষ লক্ষ পরিবারে যে ক্ষত জমে আছে তা বোধহয় কখনই মিলিয়ে যাবে না। এ এক অনন্ত ট্র্যাজেডি। আমাদের সমাজের বহুত্ববাদী ঐক্যের সংস্কৃতি ও সংহতির জন্য সত্য ও ন্যায়ের জয় সুনিশ্চিত করাও খুব জরুরি প্রয়োজন। আর দেরি না করে তাই আদালতের উচিত কর্তব্য এখন সুপ্রীম কোর্টের উক্ত রায় অনুযায়ী বাবরি ধ্বংসকারীদের শাস্তি ঘোষণা করা।

বর্তমানে এই মামলা লখনৌতে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতে শুনানীতে রয়েছে। গত ২৭ বছরে অনেক ঘুরপাক খেয়েছে শুনানি। এমনকি শাসক দলের অপপ্রভাবে এই মামলার চার্জশীট একবার বাতিলও করা হয়েছে কেবলমাত্র টেকনিকাল কারণ দেখিয়ে; আরেকবার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী লালকৃষ্ণ আডবানির নাম চার্জশীট থেকে বাদও দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরে সুপ্রীম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে এবং মামলাটিকে তার প্রাথমিক রূপে পুনঃস্থাপিত করে। আবার শুনানি চলে। এই মামলায় ৪৯ জন মতো আসামীর নাম করা হয়েছে। এখন যখন বাবরি মসজিদ জমি মালিকানার রায় ঘোষিত হয়ে গেল তখন আর বিলম্ব না করে এই সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলার রায়ও ঘোষিত হোক, অপরাধীদের শাস্তি ঘোষিত হোক যাতে করে বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে পারে।

যদিও আদালতের রায় আসতে অনেক বিলম্ব হচ্ছে তবু সারা দেশের মানুষ তো জানেই কোন কোন ব্যক্তিরা বাবরি মসজিদ ধ্বংসে জড়িত থেকেছে আর দেশের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ধারাকে আঘাত হেনেছে। অনেক নামই চার্জশীটে নাই, যদিও তারা নিজেরাই প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে যে, এই ধ্বংসকাজে যুক্ত ছিল। এইসব বিজেপি নেতাদের সকলের শাস্তি হওয়া দরকার। বিজেপি নেতা সাক্ষী মহারাজ চার্জশীটে থাকা আসামীদের মধ্যে একজন; নাথুরাম গডসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর প্রকাশ্যেই বলছে যে, সে বাবরি ধ্বংসে ছিল। সুবিচারের স্বার্থে এই দুই সাংসদকেই এক্ষুনি সংসদ থেকে বরখাস্ত করা প্রয়োজন।

আমরা সমস্ত নাগরিকদের কাছে আবেদন জানাব, অবিচারের বিরুদ্ধে সুবিচারের দাবিতে রুখে দাঁড়িয়ে ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ধর্মনিরপেক্ষ মিছিল ও অন্যান্য কর্মসূচী সংগঠিত করার মাধ্যমে সংবিধানে ঘোষিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করুন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অপরাধীদের শাস্তি ও ধ্বংসে যুক্ত সাংসদদের অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবি তুলুন।

কেন্দ্রীয় কমিটি সিপিআই(এমএল) লিবারেশন

খণ্ড-26
সংখ্যা-39