‘ভারতমাতা’র উপাসনার নির্দেশ গুজরাট সরকারের
Gujarat Govt orders

গুজরাট সরকার সমস্ত শিক্ষা অধিকর্তা ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছে ১ আগস্ট ২০২২ থেকে দেবীমাতা জ্ঞানে ‘ভারতমাতা’র প্রাত্যহিক উপাসনা শুরু করতে হবে। কেন্দ্রের মোদী সরকার স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনে যে ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’ পালনে উদ্যোগী হয়েছে তারই পরিবর্দ্ধিত রূপ হিসাবে নামানো হচ্ছে ‘ভারতমাতা’র আরাধনা কর্মসূচি। গুজরাট রাজ্য শিক্ষামন্ত্রক তার অধীনস্থ বিভাগীয় অধিকর্তাদের আদেশ করেছে, সমস্ত স্কুল ছাত্রদের এই কর্মসূচিতে সামিল করাতে হবে, যাতে তাদের মধ্যে ‘জাতিয়তাবাদ’এর চেতনা সৃষ্টি হতে পারে।

গুজরাটের জমিয়ত উলেমা এই নির্দেশের বিরোধিতা করেছে, দাবি করেছে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত ‘অসাংবিধানিক ও অযৌক্তিক’। তারা বলেছেন, স্বাধীনতার ৭৫ উদযাপন অবশ্যই স্বাগত, তারা এতে অংশ নিতে অসীম আগ্রহী, কিন্তু বিদ্যালয়ে ‘ভারতমাতা’র পুজার্চনা ইসলামী ধর্মমতের বিরুদ্ধে যায়, তাই গুজরাট সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।

এবার বিষয়টা ধর্মনিরপেক্ষতার আতসকাচের নিচে ফেলে বিচার করা যাক।

গুজরাট সরকার আসলে স্বাধীনতার ৭৫ পালনের নামে আরএসএস-বিজেপি’র প্রকল্প নামাচ্ছে। মোদী সরকারের ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’এর সাথে স্বাধীনতার ৭৫ উদযাপনের কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা। এই দুটো ব্যাপার বরং প্রকৃত চেতনা ও ধারণাগত বিচারে পরস্পর বিপরীত প্রবাহের। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে, সাহসের সাথে আত্মবলিদান করতে দেশমাতৃকার বা মাতৃভূমির নামে শপথ নেওয়ার একটা ধারা গড়ে উঠেছিল। তা উদ্বুদ্ধ করত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার দেশচেতনায়। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখে কখনই ‘ভারতমাতা’র নামে কোনও ধ্বনি শোনা যায়নি। ‘ভারতমাতা’র উদগাতা হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-বিজেপি। সংবিধান স্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতরাষ্ট্রকে হিন্দুরাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকেই উগরে দেওয়া হচ্ছে ‘ভারতমাতা’র গরল। এই ‘ভারতমাতা’র নামে বিশবছর আগে সংগঠিত করা হয়েছিল গুজরাট সাম্প্রদায়িক গণহত্যা। আজও এই শ্লোগানে সংঘটিত হয় হিন্দুত্বের বিদ্বেষ-বিভাজনের উলঙ্গ উৎপীড়ন, সংখ্যালঘুদের বধ্যভূমি। এই বিষবাস্পে যে জাতিয়তাবাদ ছড়ানো হয় তারসাথে প্রকৃত দেশপ্রেম — দেশকে ভালোবাসার কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে রাষ্ট্রশক্তিকে সাম্প্রদায়িক দানবিক রাষ্ট্রবাদী করে তোলার। এই উদ্দেশ্যে স্কুলশিক্ষায় গৈরিকীকরণের নানা অনুপ্রবেশ, এমনকি জবরদস্তি প্রবেশের প্রক্রিয়া আরএসএস-বিজেপি কেন্দ্রে ও রাজ্যে রাজ্যে শাসন কায়েমের জোরে শুরু করে দিয়েছে। গুজরাটে ওদের দু’দশকের রাজত্ব। সামনে রয়েছে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে স্কুলে ‘ভারতমাতা’র উপাসনার ফতোয়া জারিতে ধরা পড়ছে দ্বৈত উদ্দেশ্য — একদিকে শিক্ষায় গৈরিককরণ, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি।

খণ্ড-29
সংখ্যা-36