অবিলম্বে রাজ্য সরকারকে কর্মচারিদের পাওনা ডিএ দিতে হবে
pay DA dues to the employees

বামফ্রন্ট সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও রাজ্য সরকারি কর্মচারি সমেত শিক্ষক শিক্ষাকর্মী ও সরকার পোষিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়া হত না, যদিও সরকার স্বীকার করেছিল যে ওইসব কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হবে। সমহারে ডিএ দেওয়া না হলেও কেন্দ্রিয় হারে ডিএ দেওযার দায় স্বীকার করত রাজ্য সরকার। যেমন ০১/০১/২০০৮-এ কেন্দ্রিয় সরকার ডিএ দিত ১২% হারে রাজ্য সরকারের ডিএর হার ছিল শূন্য। ০১/২০১১ তে কেন্দ্রিয় ডিএ ৫১%, রাজ্য সরকারের ডিএ ৩৬%। ফলে তফাৎ ছিল। কিন্তু সরকার বলত না, ডিএ কর্মচারীদের অধিকার নয়। বছরে দুবার ডিএ ঘোষণা করা হত। কখনো কখনো তিনবারও, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তফাৎ দূর করার চেষ্টায়। যেমন, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তিনবার করে ডিএ ঘোষণা করা হয়েছিল। তাছাড়াও ডিএ ঘোষণার ক্ষেত্রে কিস্তিগুলি কেন্দ্রিয় হারকে অনুসরণ করত। যে কিস্তিগুলি বাকি আছে তার মধ্যে সব থেকে পুরোনোটাকে আগে ঘোষণা করা হত। অতএব, বলা যেত রাজ্যে কটি কিস্তি ডিএ বাকি আছে। যেমন বামফ্রন্ট সরকার যখন চলে যাচ্ছে সেই সময়ে দু কিস্তি ডিএ বাকি ছিল, ১০% ও ৬ %।

তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার আগে ডিএ নিয়ে প্রবল আন্দোলন করত। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরেই ভোল পাল্টাল। প্রথমে আগের নিয়মে ১০% ডিএ দিল ক্ষমতায় আসার প্রায়  ৮ মাস বাদে, ০১/০১/২০১২ থেকে, সেটা ধরে ওই দিনে ডিএর তফাৎ দাঁড়িয়েছিল ২০%। পরবর্তী ডিএ দেওয়া হল ১ বছর বাদে, ৭%, যদিও সব থেকে পুরোনো কিস্তিটা ছিল ৬%। ফলে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ তো লাটে উঠে ছিলোই। এবার তাকে অনুসরণও গোল্লায় গেল। তবে ওই দিন, ০১/০১/২০১৩ তে তফাৎ দাঁড়াল ২৮%। পরের বছর ০১/০১/২০১৪ তে দেওয়া হল ৬%, কেন্দ্রীয় হারের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য না রেখে। তফাৎ দাঁড়াল ৪২%। ০১/০১/২০১৫ তে ৭% ডিএর ফলে তফাৎ ওই সময় বেড়ে হল ৪৮%। পরের বছর তফাৎ হল ৫০%। এভাবে যেটা দাঁড়ালো  সেটি হল ডিএর ক্ষেত্রে সার্বিক খামখেয়ালিপনা। বছরে ২বার তো নয়ই কেবল একবার ঘোষণা হতে লাগল। সেটিও কোনো নিয়ম মেনে নয়, কেন ৬ বা ৭ বা ১০ শতাংশ তার কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই।

কেন্দ্রের সপ্তম বেতন কমিশন ও রাজ্যের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পরে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিএ বাড়তে বাড়তে নতুন বেতনক্রমের ৩৮%-এ পৌঁছেছে। রাজ্য সরকারের কর্মচারিদের ক্ষেত্রে তা রয়ে গেছে ৩%-এ। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৫%। যা পূর্বতন পঞ্চম বেতন কমিশনের মূল বেতনের হিসেবে প্রায় ৯৩%। ফলে বামফ্রন্ট আমলের শেষে যে সর্বোচ্চ ঘাটতি ছিল ১৭% হিসেবে সেই পরিমাণ তৃণমূল সরকারের আমলে এখন ৫.৫ গুণ হয়েছে।  কেবল তাই নয়, দ্রব্যমূল্য যখন হুহু করে বাড়ছে তখন গত ০১/০১/২০২১এর পরে কোনো ডিএ ঘোষণা হয়নি, গত ১৯-২০ মাসে।

অপরদিকে ২০১৬ থেকে চলা স্যাটে আবেদন, আদালতে মামলা, সিঙ্গল বেঞ্চ, ডিভিশন বেঞ্চ, স্যাট, পুনরায় আদালত এই টানাপোড়েনের পরে গত ২০ মে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন রায় দেন যে  তিনমাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। সেই সময় সীমা শেষ হতে দিন দশেক বাকি আছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে কোনো নির্দেশ তো দূরের কথা উচ্চবাচ্যও নেই। আদালত বলেছেন যে, সম্মানজনক জীবন যাপনের জন্য ডিএ আবশ্যিক। কিন্তু বর্তমান সরকার যে, কর্মচারীদের সম্মান নিয়ে মাথা ঘামায় না তা তাদের আদালতের যুক্তি ও ক্রিয়াকলাপেই পরিস্কার। আদালতে রাজ্য সরকার বলেছিল, ডিএ কর্মচারিদের অধিকার নয়। তাহলে, সরকারের মতে ডিএ সরকার অনুগ্রহ করে দেয়। তেমনটা অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য। অনেক দিয়েছি। আর চাইবেন না। থাকলে তো দেব। এসব কথা প্রশাসনের শীর্ষে থাকা কারুর মুখে মানায় না। ওই ডিএর বন্দোবস্ত করা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। নিয়ম মেনে কিস্তি হিসেব করে ডিএ দেওয়া, বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়া, এগুলোর জন্য আর্থিক পরিকল্পনা ও রসদ যোগাড় করাও তাঁর সরকারের কাজ। অবিলম্বে রাজ্য সরকারকে কর্মচারিদের পাওনা ডিএ দিতে হবে।

- অমিত দাশগুপ্ত

খণ্ড-29
সংখ্যা-31