বৃষ্টি নেই, সরকারকে চাষির পাট ভেজানোর ব্যবস্থা করতে হবে
There is no rain

বলার অপেক্ষা রাখে না, আজও পাট কৃষকের কাছে অর্থকরী ফসল হিসাবে গণ্য। অন্যদিকে পাটকল শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার সাথে রাজ্যের পাট উৎপাদন অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। পরিবেশ দূষণ রোধে বিশ্বজুড়ে পাটের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও জাতীয় ক্ষেত্রে নিমিত্ত মাত্র। ভারতে সিনথেটিক ব্যবহারের সরকারি অনুমোদন পরিবেশকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। একদিকে এই অনুমোদন বাতিল করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি পাটের তৈরি ব্যবহার্য সমস্ত জিনিস উৎপাদনের জন্য কলকারখানা তৈরি করা জরুরি। কিন্তু করবে কে? দিল্লীর কৃষক আন্দোলন বুঝিয়ে দিল, দেশের সরকার কৃষকের ভালো হোক এটা একান্তই চায় না, চায় তাদের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে রাখা আদানি ও আম্বানির মত কর্পোরেট মালিকদের উন্নতি। পশ্চিমবাংলার রাজ্য সরকারও সেইমুখী। মোদী সরকারের কাছে অপাংক্তেয় হলেও চাষিরা ভয়ংকর লকডাউনের মধ্যে উৎপাদন অব্যাহত রেখে দেশের মানুষের অন্ন যুগিয়েছিল, অন্যান্য কৃষি পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের আবাদ সহ পাট চাষও করেছিল।

পশ্চিমবঙ্গে মূলত নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার একাংশে এবার ব্যাপক পাট চাষ হয়েছে। ধান বা অন্য কোনো চাষে লোকসান হলেও পাট চাষ কৃষককে পুষিয়ে দেয়। গত মরশুমে পাটের সর্বোচ্চ মূল্য ৯,০০০ টাকা কুইন্টাল হয়েছিল। এবছর বর্তমানে বাজারে পাটের মূল্য কুইন্টাল প্রতি ৪,০০০ থেকে ৫,৫০০ টাকা। কিন্তু সারের মূল্যবৃদ্ধি, সেচের জন্য ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি চাষের খরচ বেড়ে গেছে, বাড়তি টাকা খরচের কোন উপায় নেই। একবিঘা পাট চাষের খরচ গড়পড়তা ১৬,০০০ টাকা। গড়ে বিঘা প্রতি সাড়ে তিন কুইন্টাল পাট উৎপাদন হলে বিক্রীর দাম দাঁড়াবে ১৯,২৫০ টাকা। চার মাস ধরে এই উৎপাদনে প্রতিমাসে কৃষকের আয় ৩,২৫০ টাকা। কৃষকের মাথায় হাত, শ্রাবণ মাস শেষ হতে গেল, এখনো আকাশে বৃষ্টি নেই বললেই চলে। নিম্নচাপে বৃষ্টি হবার আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত কৃষকদের হতাশায় পরিণত করেছে। পাট ভেজানোর জন্য পুকুর, ডোবা, খাল, বিল এমনকি নদীগুলোতে জল নেই, পানি নেই। বহু জায়গায় পাট জলের অভাবে শুকিয়ে গেছে অথবা পাটগাছ অপুষ্টিতে ভুগছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে রাজ্যের সরকার শুধু কৃষকের সর্বনাশ হতেই দেখছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে, চিন্তা কী? ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগে পাট ভেজানোর জন্য জলা জায়গাগুলিতে সরকার নিজস্ব খরচে মাটির নিচ থেকে জল তোলার ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে অথবা গঙ্গার জল সরবরাহ করে পাট ভেজানোর ব্যবস্থা করলে কৃষি বাঁচে, কৃষক বাঁচে। কেন্দ্রের মোদী সরকার ফসলের লাভজনক দামের গ্যারান্টি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কৃষকদের সাথে বেইমানি করেছে। তেমনি রাজ্য সরকার দিল্লীর কৃষক আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে ক্ষমতায় এসে কৃষকদের কথা ভুলে যাচ্ছে। গত ২৭ জুলাই সারা ভারত কিষাণ মহাসভার পক্ষ থেকে নদীয়া জেলা শাসকের কাছে নিখরচায় পাট ভেজানোর জন্য জলের ব্যবস্থা করার দাবি নিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। সেই পরিপেক্ষিতে গত ২৮ জুলাই নদীয়া জেলাশাসকের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সমস্ত ব্লক উন্নয়ন আধিকারীকে “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন” বলে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে নাকাশীপাড়া ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কোথায় কোথায় কোন দাবি আছে সেটা কৃষকদের তথ্য দিয়ে তাঁকে জানাতে হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে জানানো হয়, তেঘরি মৌজায় প্রায় পাঁচ বিঘা জলা জায়গা সরকারি খাস হিসাবে থাকলেও সেখানে কয়েকজন তৃণমূলের লোক ঐ জমি ভোগ করছে, কৃষকদের পাট ভেজেতে সমস্যা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একসময় পশ্চিমবঙ্গ কৃষক সমিতির নেতা ধনঞ্জয় গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে এই জলা জায়গা দখল করে জনসাধারণের ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছিল। ব্লক আধিকারিক তথ্য আকারে কৃষকদের পক্ষ থেকে জানাতে বলেন। কালীগঞ্জ ব্লকে এই বিষয় নিয়ে ডেপুটেশন দিলে, বিডিও একই কথা বলেন। আমরা বলি, ঢেঁরা পিটিয়ে বা মাইক বাজিয়ে গ্রামে গ্রামে সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হোক আর তথ্য সংগ্রহ করা হোক — কোনও ডোবা-খানায় জল লাগবে, কত টাকা খরচ হবে, যা সরকার মিটিয়ে দেবে। শেষ পর্যন্ত কে কার কথা শোনে, নিচের তলা থেকে উচু পর্যন্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এই সরকার। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল নদীয়া জেলায় এল, পাট চাষিদের দুর্দশার কথা শোনা দূরের ব্যাপার, দুর্নীতির নির্দিষ্ট অভিযোগগুলোই বুঝতেই পারে না, করবে ঘোড়ার ডিম।

- কৃষ্ণপদ প্রামানিক

খণ্ড-29
সংখ্যা-36