ঝাড়খণ্ডে বিজেপির ‘অপারেশন লোটাস’ অভিযান রুখে দিন
Foil the BJP

মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডও দীর্ঘদিন ধরে মোদী-শাহর ছলে বলে কৌশলে সরকার ফেলে ক্ষমতা দখলের নিশানায় আছে। পশ্চিমবঙ্গে তিনজন কংগ্রেস বিধায়ককে নগদ টাকার গাড়িসহ আটক করা বিজেপির এই শয়তানি ছককে প্রকাশ্যে এনে ফেলে। এখন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং তার ভাই বসন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে বিজেপির আনা লাভজনক সংস্থায় থেকে নির্বাচিত হওয়ার অভিযোগকে হাতিয়ার করে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার বিষয়ে রাজ্যপাল মুখে কুলুপ এঁটে থাকায় প্রতি দিনই বিষয়গুলি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। তাজ্জব ব্যাপার হল, রাজ্যপাল নীরব কিন্তু বিজেপি নেতারা ইসিআই রায় নিয়ে বিবৃতি জারি করছে আর এদিকে বিধায়ক কেনাবেচার ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার মধ্যে দিয়ে ঝাড়খণ্ডকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

রঘুবর দাস সরকার ১৫ নভেম্বর ২০০০-এ ঝাড়খণ্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঝাড়খণ্ডের সবচেয়ে অ-জনপ্রিয় সরকার ছিল। সরকারের নীতি এবং শাসনের ধরনে আদিবাসী বিরোধী ঝাঁঝ উচ্চকিত মাত্রায় ছিল এবং আদিবাসীরা তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিল আর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ঝড়ের বেগে বিজয়ি হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনে আদিবাসীরা সরকারটাকে অপসারিত করেছিল। এখন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি রাজ্যে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া। বিহারের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিকাশ বিজেপির হতাশা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তারা সেখানেও সিবিআই এবং ইডির অভিযান চালিয়ে নতুন সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার ফেলে দেওয়া, বিরোধী দলগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা এবং বিরোধী সরকারগুলিকে বদনাম ও অস্থিতিশীল করা এবং অ্যাক্টিভিস্টদের বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে কঠোর আইনের অধীনে কারাগারে পাঠানো — এসবই দেশের আন্দোলনকারী বিরোধী ও রাজনৈতিক বিরোধীদের মোকাবিলা ও দমন করার জন্য সঙ্ঘ-বিজেপির পুরানো কৌশল। এই পদ্ধতিগত আগ্রাসন ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারসাম্যকে ক্ষুণ্ন করছে। আর এই পদ্ধতিগত আগ্রাসনের বলেই বিজেপি নিজেকে আগামী চল্লিশ বছর ধরে ভারতে টিকে থাকার ও শাসন করার অধিকারি একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করছে।

গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এই আগ্রাসী অভিযানকে সমস্ত উপায়ে রুখে দিতে হবে। বিহার রাজনৈতিক শক্তির পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দিয়েছে যা বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন ও ক্ষমতা থেকে অপসারিত করেছে। ঝাড়খণ্ডকেও বিজেপির ক্ষমতা হাইজ্যাক করার মরিয়া খেলার পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে হবে। হেমন্ত এবং বসন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রতিক্রিয়া গোপন রেখে রাজ্যপাল ঝাড়খণ্ডে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে আরও গভীর করতে সহযোগিতা করেছেন। এটা দেখে দুঃখ হয় যে জেএমএম এবং কংগ্রেসের বিধায়কদেরকে বিজেপির কেনাবেচার শিকার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জেএমএম বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছিল শুধুমাত্র ঝাড়খণ্ডে তাদের সরকারকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে দেখে। এবারে বিজেপি যাতে ঝাড়খণ্ডে তাদের মহারাষ্ট্র মডেলের পুনরাবৃত্তি করতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী ও অন্যান্য সংগ্রামী শক্তির ওপর বর্তায়। সিপিআই(এমএল) ঝাড়খণ্ডে বিধানসভার ভিতরে এবং বাইরে বিজেপিকে সাহসের সাথে প্রতিহত করে চলবে।

এমএল আপডেট সম্পাদকীয়, ৩০ আগস্ট ২০২২

খণ্ড-29
সংখ্যা-34