প্রতিবেদন
মানব উন্নয়ন সূচক — ভারত প্রতিবেশিদের তুলনায় ক্রমশ পিছোচ্ছে
India is lagging

জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) দ্বারা সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২১-২২'র মানব উন্নয়ন রিপোর্ট (এইচডিআর, ২০২১-২২) অনুযায়ী সামগ্রিক মানব উন্নয়ন সূচকের (এইচডিআই) নিরিখে বিশ্বক্রমপর্যায়ে ভারতের অবস্থান ২০২০ সালের ১৩১তম থেকে ২০২১ সালে ১৩২-এ নেমে এসেছে। কেবল তাই নয়, মানব উন্নয়ন সূচকের মান ০.৬৪২ থেকে কমে ০.৬৩৩এ নেমে এসেছে। শতাংশের হিসেবে ওই হ্রাস ১.৪০ শতাংশ। সমগ্র বিশ্বকে ধরলে ওই সূচক ০.৭৩৫ থেকে কমে ০.৭৩২ হয়েছে, কিন্তু সেই হ্রাস শতাংশের হিসেবে অনেক কম, ০.৪ শতাংশ। ২০১৮’র মানব উন্নয়ন সূচক ছিল ভারতের ০.৬৪৫, বিশ্বের ০.৭৩৬। ফলে এক্ষেত্রে বিশ্বের হ্রাস ০.৫ শতাংশ, তুলনামূলকভাবে ভারতের হ্রাস অনেক বেশি, ১.৯ শতাংশ। আঞ্চলিক সূচকের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে যে মানব উন্নয়ন সূচকের সর্বাধিক হ্রাস ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়াতে, ০.৯ শতাংশ, এবং এরজন্য অন্যতম দায়ী ভারতের সূচকের হ্রাস, ১.৪ শতাংশ যা অন্যসব দক্ষিণ এশিয় দেশ, এমনকি আফগানিস্থানের (১ শতাংশ হ্রাস) থেকেও খারাপ। যদিও মানব উন্নয়ন সূচকের নিরিখে পাকিস্তানের অবস্থান ভারতের অনেক নিচে (১৬১তম) তবুও লক্ষণীয় যে, ২০২০'র তুলনায় পাকিস্তানের সূচক ০.৫৪৩ থেকে ২০২১এ ০.১৮ শতাংশ বেড়ে ০.৫৪৪ হয়েছে। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, চিন, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মত প্রতিবেশি দেশগুলিতে মানব উন্নয়ন সূচক বেড়েছে, নেপাল (০.৩ শতাংশ হ্রাস), ভূটান (০.৩ শতাংশ হ্রাস), ও আফগানিস্থানের (১ শতাংশ হ্রাস) মতো প্রতিবেশি দেশে তা কমেছে, তবে ভারতের মতো কোথাও কমেনি। ফলে কোভিডের বাহানা দেওয়াটা সহজলভ্য হলেও যুক্তিগ্রাহ্য নয়।

২০১৮ সালের মানব উন্নয়ন রিপোর্ট থেকে যদি শুরু করা যায় তাহলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের সূচকের মান ভারতের ক্ষেত্রে ০.৬৪৫ (বিশ্ব ০.৭৩৬, বাংলাদেশ ০.৬৩৫); ২০১৯ সালে ভারত ০.৬৪৫ (বিশ্ব ০.৭৩৯, বাংলাদেশ ০.৬৪৪); ২০২০ সালে ভারত ০.৬৪২ (বিশ্ব ০.৭৩৫, বাংলাদেশ ০.৬৫৫); ২০২১ সালে ভারত ০.৬৩৩ (বিশ্ব ০.৭৩২, বাংলাদেশ ০.৬৬১)। ফলে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন বেড়েছে ৪.১ শতাংশ, বিশ্ব পর্যায়ে তা কমেছে ০.৫ শতাংশ ও ভারতে তা কমেছে ১.৯ শতাংশ। তুলনাটা বাংলাদেশের সঙ্গে করা দরকার কারণ অমিত শাহ থেকে শুরু করে অমিত মালব্য, শুভেন্দু অধিকারী পর্যন্ত সমস্ত বিজেপি কার্যকর্তাই বাংলাদেশী কথাটাকে গালিগালাজে রূপান্তর করতে চেয়েছেন, অমিত শাহ তো একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশীদের উঁইপোকা বলেছেন। ওরা সত্যিকে ভয় পান, তাই নিজেদের দেশের মানব উন্নয়ন যে তাদের সময়কালে তেমনভাবে বাড়ছে না, বরং গত ৩ বছরে দ্রুতলয়ে কমেছে তা স্বীকার করতে চান না।

নিচে দেওয়া তালিকা দু'টির প্রথমটিতে ভারত ও বাংলাদেশের একটি তুলনামূলক আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সূচক বৃদ্ধির হার ভারতের থেকে অনেকটাই বেশি ছিল; ২০০০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ভারতের হার বাংলাদেশের থেকে খানিকটা বেশি থাকলেও ২০১৫ থেকে ২০১৯ বা ২০১৯ থেকে ২০২১ (সামগ্রিকে ২০১৫ থেকে ২০২১) এই সময়কালে বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচক ভারতের কয়েক গুণ; এমনকি ২০১৯ থেকে ২০২১ এই দু'বছরে ভারতের ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট ঋণাত্মক, বাংলাদেশে তা যথেষ্ট ভালো, কোভিড সময়কালের নিরিখে।

দ্বিতীয় তালিকাটিতে প্রতিবেশি ৪টি দেশের বিভিন্ন সময়কালে বার্ষিক সূচক বৃদ্ধির হারকে দেখা হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত, যেটি মূলত: ইউপিএ সরকারের সময়কাল, ভারতের ওই সূচক বৃদ্ধির হার ৪টি দেশের মধ্যে যথেষ্ট বেশি। ২০০০ থেকে ২০১০ এই সময়কালেও তা চিনের তুলনায় সামান্য কম, কিন্তু অন্য দু'টি দেশের তুলনায় বেশি। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২১, মোদী-শাহ শাসনে মানব উন্নয়ন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সূচক বৃদ্ধির বার্ষিক হার প্রায় শূন্যে পর্যবসিত হয়েছে ও তা পাকিস্তানের থেকেও কমে গিয়েছে। এক্ষেত্রেও ‘কোভিডের সময়কালের’ বাহানা টেঁকে না কারণ কোভিড পূর্ববর্তী ২০১৫ থেকে ২০১৯ এই মোদী-শাহীতেও ওই সূচকের বার্ষিক বৃদ্ধির গড় হার ১৯৯০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়কালের যেকোনো সময়ের বার্ষিক বৃদ্ধির হারের থেকে অনেক কম। ভারতের উন্নয়ন নিয়ে, আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় দেশের অবস্থান নিয়ে গর্ব করার কোনো কারণ এই সূচকের গতিপ্রকৃতি প্রদান করছেনা। ২০১৫ থেকে ২০২১'র মধ্যে মানব উন্নয়ন সূচকের নিরিখে ভারতের অবস্থান খারাপ হয়েছে, ক্রমপর্যায় ১ বিন্দু কমেছে, কিন্তু চিনের ক্রমপর্যায় ১৯ বিন্দু বেড়েছে, বাংলাদেশের বেড়েছে ১১ বিন্দু। এক্ষেত্রে পাকিস্তান ও ভারত ভাইভাই।

তালিকা-১: ভারত ও বাংলাদেশের ৩ দশকের মানব উন্নয়ন সূচকের চলন
(বন্ধনীর মধ্যে সংখ্যাগুলি পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি বা হ্রাসের হার, শতাংশে)

behind its neighbors

তালিকা-২: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চিনের বিভিন্ন সময়কালে মানব উন্নয়ন সূচকের বার্ষিক বৃদ্ধির হার

lagging behind its neighbors

 

খণ্ড-29
সংখ্যা-37