খবরা-খবর
টিটাগড় গণধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ — থানায় ডেপুটেশন
Titagarh gang rape

“এইখানে মেয়েরা প্রচণ্ড ভয়ে থাকি, সন্ধ্যের মধ্যেই দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে যাই। অনেক সময় মাঝ রাতে দরজায় টোকা দেয় গুণ্ডারা, প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমানোর সময় ছুরি ও দা নিয়ে শুতে যাই” — জানালেন টিটাগড় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কয়লাডিপু শ্রমিক মহল্লার এক মহিলা।

বহুদিন ধরেই এরকম আতঙ্কে বাস করছেন এই ওয়ার্ডের শ্রমিকমহল্লার বাসিন্দারা। এইখানেই গত ৭ তারিখ ১৯ বছরের এক কিশোরীকে বাড়ির সামনে থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে।

১১ সেপ্টেম্বর সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি’র (আইপোয়া) উত্তর ২৪ পরগণা জেলা এবং অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ‘আইসা’র পক্ষ থেকে টিটাগড় গণধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারের সাথে দেখা করা হয়। আইপোয়া’র পক্ষ থেকে ছিলেন অর্চনা ঘটক, মিতালি, তিথি, সাধনা ও জোৎস্নাদি এবং আইসা’র সুরত্ন। নির্যাতিতার মা প্রতিনিধিদলকে জানান ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যেবেলা তাঁর মেয়ে বাড়ি থেকে দু’হাত দূরত্বে শিবমন্দিরে দাদুর পাশে বসে মোবাইল দেখছিল। এইসময় ৪ জন দুস্কৃতী এসে ওর মোবাইল কেড়ে নেয়, মেয়েটি ফোন নিতে তাদের পিছনে দৌড়ালে তাকে মন্দিরের পাশেই জে পি চৌধুরীর টিটাগড় ওয়াগন লিমিটেডের জঙ্গলাকীর্ণ জমিতে টেনে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। দাদু ভয়ে চিৎকার করলে পাড়ার লোকেরা কেউ এগিয়ে আসেনি। মা ছুটে এলে একজন দুষ্কৃতি মাকে জানায়, “তোমার মেয়ে ঠিক আছে, ঘরে চলে যাও”। পরে তারা মেয়েটিকে মাঠে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরদিন ৮ তারিখ সকালে পুলিশে অভিযোগ জানানো হলে দু’দিনের মধ্যে ৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। মেয়েটির মেডিকো-লিগ্যাল করা হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে মেয়েটি মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে, তাই তারসাথে প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ সম্ভব হয়নি।

৫নং ওয়ার্ডের এই অঞ্চলে বহুদিন ধরে দুষ্কৃতিদের কার্যকলাপ চলে। জে পি চৌধুরী টিটাগড় ওয়াগনের কারখানার জমিতে সন্ধ্যে হতেই মদ সাট্টা জুয়ার আসর বসে। মহল্লাতে কেউ কোনও প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। রাস্তায় আলো নেই বললেই চলে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলরের ভাই থাকায় বোঝাই যাচ্ছে এই দুষ্কৃতি কার্যকলাপে শাসক দলের প্রত্যক্ষ্য মদত রয়েছে। নির্যাতিতার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ওই মহল্লার ঘরে ঘরে আতঙ্ক। বাসিন্দারা জানান পুলিস প্রশাসন সব জানে, কিন্তু কেউ কিচ্ছু করেনি। ঘটনার পরে পুরসভা থেকে কারখানার জমির জঙ্গল সাফ করা হলেও, সেই মাঠে খুবই সামান্য আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো মহল্লা জুড়ে এক গা ছমছমে ভাব। দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্যাতিতার পরিবারের লড়াইয়ের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে আসা হয়।

তারপর আইপোয়া ও আইসা’র পক্ষ থেকে টিটাগড় থানায় ডেপুটেশন দিতে যাওয়া হয়। প্রথমে প্রতিনিধি দলকে থানায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তারপর কিছু কথা কাটাকাটির পর আইপোয়া’র পক্ষ থেকে মিতালি বিশ্বাস, অর্চনা ঘটক এবং আইসা’র পক্ষ থেকে সুরত্ন এবং স্থানীয় অধিবাসী সিউজী থানায় কর্তব্যরত সেকেন্ড অফিসারের সঙ্গে দেখা করেন। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে দ্রুত চার্জশিট দিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি, এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো এবং অবিলম্বে মদ, সাট্টা, জুয়ার আসর বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। পুলিশ আধিকারিক জানান, বর্তমানে নাকি মহল্লাতে সিভিল ড্রেসে পুলিশ মোতায়েন করা আছে, কিন্তু আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকেই দেখতে পাইনি। ডেপুটেশনে দাবি করা হয়েছে — গণধর্ষণের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত উপযুক্ত চার্জশিট দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ধর্ষিতা কিশোরীর এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশকে নিতে হবে। এলাকায় নিয়মিত পুলিশি টহলদারি দিতে হবে। মদ-জুয়া-সাট্টার আসর বন্ধ করতে হবে এবং অঞ্চলের জঙ্গল পরিষ্কার রাখতে হবে। রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে, সিসি টিভি বসাতে হবে। এলাকার মেয়েদের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্থানীয় থানাকে নিতে হবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-36