সম্পাদকীয়
আত্মহত্যার ২০২০-২০২১ উপর্যূপরি বৃদ্ধি কেন?
suicide 2020-2021 india

এনসিআরবি রিপোর্ট বলেছে ভারতে আত্মহত্যা ২০২০ ও ২০২১ পরপর দু’বছর বেড়েছে। প্রাক-কোভিড ২০১৯ সালের তুলনায় তার পরের দু’বছর আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি আড়াল করা যাচ্ছে না। আত্মহত্যার তথ্য ২০১৯-এ প্রাক-কোভিড বছরে ছিল ১ লক্ষ ৩৯ হাজার, পরের দু’বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার (২০২০) ও ১ লক্ষ ৬৪ হাজার (২০২১)। বেড়েছে ১৮ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা “হু” মন্তব্য করেছে ভারতে ১৯৬৭ সালের পর থেকে আত্মহত্যার এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০২০-২১-এ দু’বছরে এদেশে কোভিডে মৃত্যুর হিসাবও ছিল ভয়াবহ, প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষের মতো, যদিও তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব কোনদিন জানা যাবে না। কারণ সেভাবে তথ্য সংরক্ষিত করা হয়নি। তাছাড়া চাষিদের আত্মহত্যার ঘটনা ২০২০-তে ছিল ৫৭৭৯, ২০২১-এ ৫৩১৮, ২০২০-র তুলনায় ২০২১-এ কিছুটা হ্রাস পায়; কিন্তু সংখ্যাটা মোটেই নগণ্য নয়। কৃষিমজুর আত্মহত্যার সংখ্যা ২০২০-তে ছিল ৫০৯৮, ২০২১-এ দাঁড়ায় ৫৫৬৩, অর্থাৎ বেড়ে যায়। চাষি ও মজুর শ্রেণীর আত্মহত্যার যোগফল রীতিমতো উদ্বেগজনক। এরপরে রয়েছে স্বনিযুক্ত ও ক্ষুদে ব্যাপারী বর্গ, আত্মহত্যায় যাদের ভাগ ১২.০৩ শতাংশ, তারপরে ছাত্ররা, যাদের ভাগ ৮ শতাংশ।

শাসকশ্রেণীর প্রধান প্রতিনিধি মোদী সরকার আত্মহত্যার এই প্রবণতা বৃদ্ধির প্রবাহকে কোভিড ও কোভিড পরবর্তী নিষ্ঠুর আর্থ-সামাজিক কারণের প্রতিফল বলে স্বীকার করতে চায় না। আজও স্বীকার করে না যে সরকারপক্ষের চূড়ান্ত দায়িত্বহীন আচরণই ঐ হাজার হাজার মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অন্যতম মূল কারণ। তাই তাদের নিয়ন্ত্রিত এনসিআরবি উপরোক্ত তথ্য-পরিসংখ্যানকে উল্লেখ করেছে নিছক ‘দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও আত্মহত্যা’ উপশিরোনামে। কিন্তু কিছু অন্যান্য কারণ থাকলেও এর মূল কারণ থেকেছে চূড়ান্ত অর্থনৈতিক দুর্দশায় – যে দুর্দশার কারণ হল জীবিকার সংকট, কর্মহীনতা, বেকারির জ্বালা, ঋণগ্রস্ততা; সব মিলে কূলকিনারা না পাওয়া সংকটাগ্রস্ত অবস্থা, যা কোনো দিশা না পেয়ে ডেকে আনে এমন এক অবসাদ যেখান থেকে ফেরা আর হয়ে ওঠে না। এর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে মজুর ও চাষি শ্রেণী। আমাদের দেশে এখন শুধু সমস্ত নেতিবাচক দিকেই রেকর্ড হয়ে চলেছে। সার্বিক বেকারিতে সাড়ে চার দশকের রেকর্ড, চাষিদের উৎপাদন ও আয় সংকট, কৃষি থেকে পরিযায়ী সব ধরনের মজুরদের জীবিকা লোপাট ও মজুরি বঞ্চনা, ছাত্রসমাজের কাছে কর্মসংস্থানের অন্ধকার ভবিষ্যৎ, চাকরি বিক্রি হওয়ার সংকট, এখনও ব্যাপক অসংগঠিত ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার হতে না পারা – সব অংশে সবধরনের সংকটের রেকর্ড বেড়ে চলেছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহজী বলেছেন, ‘দেশের স্বার্থে’ বিজেপির আরও কয়েক দশক ক্ষমতার মসনদে থাকা দরকার! প্রধানমন্ত্রী মোদীজী বোঝাতে চাইছেন, স্বাধীনতার শতবর্ষের মধ্যে ভারত সমৃদ্ধির সেরা দেশ হয়ে উঠবে এবং বিজেপি সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে দিশা ও নেতৃত্ব দিচ্ছে! আর, নাগরিক জনতার প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে দিচ্ছে বিজেপির মসনদে থাকার পরিণামে দেশ ক্রমশ বিপজ্জনক পাকচক্রে পর্যবসিত হচ্ছে, তারই এক নিকৃষ্টতর নির্দিষ্ট প্রকাশ হল আত্মহত্যার উপর্যূপরি পরিঘটনা বৃদ্ধি।

খণ্ড-29
সংখ্যা-35