ডঃ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা
dilip-banerjee-memorial-lecture

গত ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ডঃ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা আয়োজিত হয় শিয়ালদহের জর্জ স্মৃতি ভবনে। আয়োজক ছিলেন ‘ডঃ দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক কমিটি’ এবং ‘দিগন্তবলয়’ পত্রিকা। এই অনুষ্ঠানে ‘নারীশিক্ষা : বিদ্যাসাগর থেকে রোকেয়া’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বিদ্যাসাগর বিশেষজ্ঞ বিশিষ্ট চিন্তক ও গবেষক প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

সভার শুরুতে বরুণ দাস তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠের মধ্য দিয়ে দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান। শিক্ষাবিদ প্রাবন্ধিক ডঃ নিত্যানন্দ ঘোষ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা সূত্রে বিরল গুণের অধিকারী বর্ণময় চরিত্রের বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মানুষটির জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন। তাঁর আন্তরিক উচ্চারণে বিজ্ঞানের মেধাবী গবেষক কীভাবে নকশালবাড়ির ডাকে বিপ্লবের পথে পা বাড়িয়েছিলেন, রাষ্ট্রের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং আমৃত্যু সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সঙ্গে যুক্ত থেকে পার্টির দেওয়া বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন – তা যেমন উঠে এসেছে, তেমনই এক জৈব রসায়নবিদ হিসাবে তাঁর অভিজাত পেশাজীবন ও এক বিস্তৃত পরিসরে উদার, দরদী সামাজিক জীবনও উঠে এসেছে। সদাহাস্যময় সদালাপী আত্মপ্রচারবিমুখ মানুষটি আদর্শের প্রশ্নে কখনও মাথা নোয়াননি। পার্টির মধ্যেও মতাদর্শগত বিতর্ক চালাতে কখনও পিছপা হননি। তাঁর সৃষ্টিশীল মনন ব্যাপ্ত হয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ পরিচালনায়, ‘নবান্ন’ সম্পাদনায়, 'চিত্রচেতনা'র ব্যনারে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণে এবং সর্বোপরি তাঁর রাজনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ে অজস্র লেখাপত্রে। আদ্যন্ত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন উদারচেতা, মুক্তমনা বিরাট মাপের এক মানুষ। ২০০৯ সালে তাঁর অকাল প্রয়াণের ক্ষতি কোনদিন পূর্ণ হওয়ার নয়।

নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের অনন্য ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘ যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখেন প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঠেঘাটে গ্রামেগঞ্জে বিদ্যাসাগর নিয়ে প্রচার চালানো মানুষটি বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন যা এই মনীষীকে নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙে দেবে। বিদ্যাসাগরের ডায়েরিগুলি প্রকাশের দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে এই সভায়।

মহিয়সী নারী রোকেয়া সাখাওয়াতের নারীশিক্ষার প্রসারে অসাধারণ অবদান নিয়েও তিনি আলোচনা করেন। অকালবৈধব্য সত্ত্বেও রোকেয়া অন্তঃপুরের অন্তরাল সরিয়ে, অসম সাহসে এই মহান কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন দু দু'টি মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিজের সমাজের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য মেয়েদের লাঙল ধরার প্রেরণাও যুগিয়েছেন – যা সত্যিই অভূতপূর্ব।

তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেও এ দিনের অনুষ্ঠানে মানুষের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে, দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের কত ভালোবাসার, শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন, থাকবেন।

খণ্ড-30
সংখ্যা-12