কসবা সিলভার পয়েন্ট স্কুলের ছাত্র শান সেখ’এর অস্বাভাবিক মৃত্যু : অনুসন্ধান টীমের রিপোর্ট
search-team

আবার, শিক্ষাকেন্দ্রে একটি তরতাজা ছোট্ট ছেলের জীবনাবসান হল। ক’দিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, গ্রাম থেকে পড়তে আসা মেধাবী ছেলেটিকে কেড়ে নিয়েছিল এই শিক্ষাব্যবস্থা। সেই ক্ষত এখনও এতটুকু মলিন হয়নি। তাই শ্রমজীবী মহিলা ও স্কীমকর্মী ঐক্যমঞ্চ’র পক্ষ থেকে প্রকৃত ঘটনাটি জানার চেষ্টায় রওনা হলাম মৃত ছাত্র শেখ শানের আবাসনের উদ্দেশ্যে।

৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ৫০ নাগাদ তাড়াতাড়ি করে বাড়ির থেকে বেড়িয়ে পড়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্র শেখ শান, তার স্কুল সিলভার পয়েন্ট হাইস্কুলের উদ্দেশ্যে।

শোকে পাথর হয়ে যাওয়া ৩৭ বছরের মা পিঙ্কি বিবি যিনি ২০১৯ থেকে ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের আশা কর্মী, অতি কষ্টে বললেন, “দুপুর ২-৩০ নাগাদ স্কুল থেকে ফোন আসে। প্রথমে বলে, শান মাথা ঘুরে পড়ে গেছে, তারপর বলে সিঁড়ির থেকে পড়ে গেছে। এটাও বলে সুস্থ আছে, শুধু একটু মাথা ফেটে গেছে । ফোন করে তিনবার তিন রকমের কথা বলে। আমরা সবাই ছুটতে ছুটতে যাই, কাছাকাছি এত হাসপাতাল থাকতে শানকে ভর্তি করা হয়েছে মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালে। গিয়ে দেখি শানের মৃত অসার দেহ পড়ে আছে, স্কুলের কেউ নেই। আমরা ম্যামেদের খোঁজ করি। তাদের দেখতে তো পাই না উপরন্ত আমাদের ছেলেদেরকে সিকিউরিটি গার্ড মারধর করে। আর বলে আগে গিয়ে এফআইআর করো তারপর সব বলবো। এফআইআর করতে গিয়েছি সেই সময় ম্যামেদের সরিয়ে দেয়। ফিরে গেলে ম্যামেদের আর পাওয়া যায়না। পরের দিন ১১টায় বডি দেবে বলে। কর্তৃপক্ষ যদি অপরাধী না হবে, তা হলে চোরের মতোই একগাদা টাকা ঘুষ দিয়ে মৃত ছেলেকে রেখে অভিভাবকদের সাথে দেখা না করে পালিয়ে গেল কেন? এ প্রশ্নের উত্তর দিক।”

উপরোন্ত নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক অনন্যা চক্রবর্তী কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললেন, কাছেই শানের বাড়ি, কিন্তু সেখানে গেলেন না। কোন ডাক্তারী পরীক্ষা ছাড়াই অনন্যা চক্রবর্তী বললেন, ছেলেটি মানসিক অবসাদে ভুগছিল। গোটা ঘটনা না জেনে বুঝে তিনি একথা বলেন কি করে?

আসল কথা, করনার সময় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। ২০০০ ছাত্রছাত্রী কসবা রথতলার নর্থ পয়েন্ট উচ্চমাধ্যমিক ইংরাজী মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়ে। শানের বাবা শেখ পাপ্পু সমস্ত অভিভাবকদের নিয়ে, গার্জিয়ান ফোরাম তৈরি করে কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করে ৩৫ শতাংশ স্কুল-ফি কমান। শানের পরিবারের অভিযোগ, এটাই ছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আসল রাগের কারণ। তাছাড়া মাসের ১০ তারিখ হয়ে গেলে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে ৮০০ টাকা করে বেশি দিতে হবে — এর বিরুদ্ধে শেখ পাপ্পু গার্জিয়ান ফোরামের সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এলাকার মানুষজনও বললেন, এটাই ছিল নাকি তাঁর অপরাধ। ফলে, ভালো পরীক্ষা দিয়েও শানকে সব সময়েই কম নম্বর পেতে হয়েছে। শান’এর বাবা ভেবেছিলেন শানকে অন্য স্কুলে নিয়ে যাবেন। ছেলের সাথে বাবার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতন, সেই কথাই ঘুরে ফিরে বারবার তিনি বলতে লাগলেন।

বহু অভিভাবকের স্কুলের শিক্ষকদের ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তাঁদের দাবি — নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। বাবা শেখ পাপ্পু বললেন, দুপুর ২-১৫ নাগাদ ফোন করে বলা হয়েছিল, “মাথা ঘুরে উঁচু থেকে পড়ে গিয়েছে, কিন্ত সিঁড়ি বা ছাদ থেকেই যদি পড়ে যাবে, তবে আঘাতের চিহ্ন নেই কেন?” প্রতিবেশী জ্যোৎস্না গিয়েছিলেন। তিনি বললেন, “শানের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, এমন কী কোনো হাড়ও ভাঙ্গা ছিল না!”

স্কুলের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, গার্জিয়ান ফোরাম দাবি করেছে, “বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। সঠিক তথ্য উন্মোচিত হোক। প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হোক।”

- স্নিগ্ধা বসু

খণ্ড-30
সংখ্যা-32