আজকের দেশব্রতী : ২৭ জানুয়ারী ২০২২ (অনলাইন সংখ্যা)
ajker deshabrati 27 january 2022

police brutality

২৫ জানুয়ারী কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধিদল দেউচা-পাঁচামী সংলগ্ন এলাকায় যায়। আন্দোলনকারী আদিবাসীদের সাথে সাক্ষাৎ করে। দেওয়ানগঞ্জ, হরিনসিঙা প্রভৃতি গ্রাম থেকে আসা উপস্থিত আদিবাসীরা জোরের সাথে জানায় জমি জীবিকা পরিবেশ ধ্বংসকারী কয়লা খনি চাই না। জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে তথাকথিত ‘সম্মতি’র প্রশ্নে তাঁরা বলেন যে এবিষয়ে সরকার প্রশাসন সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করছে। কিছু সামাজিক নেতার মাধ্যমে মিথ্যা কথা বলে সই করিয়ে বড় ধরনের প্রতারণা চালাচ্ছে সরকার এখানকার অধিকাংশ নিরক্ষর মানুষদের সাথে। তাঁরা আরও বলেন, আমরা নিজেদের জমি চাষ করে জীবনধারণ করব। জমি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হতে চাই না। তাই কয়লা খনি চাই না। এই এলাকায় চাষাবাদ হয় না বলে একটা মিথ্যা প্রচার করা হয়ে থাকে। তাহলে আমরা বেঁচে আছি কি করে? এখানে অনেক জমিতে বছরে দু’বার চাষ হয়।

যে আদিবাসী মহিলাদের উপর তৃণমূল বাহিনী ও পুলিশ হামলা করেছিল তাঁরা বলেন, হামলার জবাব আমরা আন্দোলনের মাধ্যমেই দেব। আদিবাসীদের সাথে প্রতারণা করা নেতা শাসকদলে যোগ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করল, আর এখন আমাদের বাড়িতে পুলিশকে সাথে নিয়ে এসে দুঃখ প্রকাশ করছে! কিন্তু এই অত্যাচারের ক্ষমা নেই। ২৩ ডিসেম্বর পুলিশের লাঠির ঘায়ে গর্ভের সন্তানকে হারিয়েছেন একজন আদিবাসী মহিলা। আদিবাসী বলেই কি এটা আমাদের মুখ বুজে মেনে নিতে হবে? আদিবাসী জীবনের কি দাম নেই? পুলিশের এই লাঠির আঘাত কেন আদিবাসী নিপীড়ন নিবারণ আইনের আওতায় পড়বে না? কেন আদিবাসীরা সুবিচার পাবে না?

গত ৩ জানুয়ারি কলকাতা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্প এলাকার যে মানুষেরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের একজনের ওপর হামলা নেমেছে। এই আদিবাসী মহিলার জমি জবরদখল করতে চাইছে শাসকদলের মদতপুষ্ট ক্ষমতাশালীরা। বাধা দিতে গেলে তাঁকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এই ঘটনার বিরুদ্ধেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত মহিলারা। উপস্থিত আদিবাসীরা জানান এই এলাকার ১০টি মৌজার ১৪টি গ্রামের আদিবাসী জনগণ জমি রক্ষার জন্য সংগঠিত হচ্ছেন, প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন জয় কিষাণ আন্দোলনের অভীক সাহা, ইয়ং বেঙ্গলের প্রসেনজিৎ বসু, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের মলয় তেওয়ারি, এআইকেএম’এর জয়তু দেশমুখ, উৎনৌ সংগঠনের কুনাল দেব, কালধ্বনি পত্রিকার প্রশান্ত চ্যাটার্জী, উৎপল বসু, এআইসিসিটিইউ’র পক্ষ থেকে সুরিন্দর সিং প্রমুখ।

Where has the education minister

‘পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয়’ প্রকল্প চালু করতে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। যত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, তার থেকে বেশি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। যতবার তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ২ বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ, কবে খুলবে? ততবার শিক্ষামন্ত্রী এদিক ওদিক তাকিয়ে বলছেন, “সব দিক বিবেচনা” করে  মুখ্যমন্ত্রী দিন ঘোষণা করবেন। প্রথম জিজ্ঞাসা, মুখ্যমন্ত্রী কোন কোন দিক বিবেচনা করছেন?  তিনি কি একাই বিবেচনা করছেন, নাকি কোনো বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে কথা বলছেন, পরামর্শ করছেন? ঐ বিশেষজ্ঞ টিমে কারা কারা আছেন? দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা, শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনগুলির সাথে পরামর্শ ও মত বিনিময়ের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি? অভিভাবক ও তাদের সংগঠনের সাথে কথা বলার কোনো প্রয়োজন তাঁরা বোধ করেছেন কি? শুধু শিক্ষা প্রশ্নে নয়, জনগণের মতামত গ্রহণের কোনো উদ্যোগ কোনো প্রশ্নেই দেখা যায় না। কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিক কর্মচারীরা কী করবে, তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে শ্রমমন্ত্রী ও তার দপ্তরের কথা বলার কোনো হেলদোল থাকে না। প্রিভেনটিভ মেডিসিন নিয়ে স্বাস্থ্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা হয় না। কথা না বলার রোগ সর্বস্তরে। যে কথা হচ্ছিল, শিক্ষামন্ত্রী ও তার দপ্তর কি সমীক্ষা চালিয়েছেন যে এই দু’বছরে কত ছাত্র ছাত্রী প্রাথমিক শিক্ষা জগতের বাইরে চলে গেছে। সাধারণ সময়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে পৌঁছতে যে ভয়াবহ ‘স্কুল ছুট’ (ড্রপ আউট) দেখা যায়, এই বিতর্কিত অতিমারীতে তা কোথায় পৌঁছেছে, তার কোনো খোঁজ খবর শিক্ষা দপ্তরে জমা হয়েছে কি? শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পরের জিজ্ঞাসা, মিড-ডে-মিল কি সব ছাত্র ছাত্রীরা পেয়েছে? কোথাও ডিমের বরাদ্দ কাটছাঁট, কোথাও এমনকি চাল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত নাট্যকার শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চয় ঐ কথাটা ভুলে যাননি, “Something is rotten in Denmark”। আর যারা শিশুদের রান্না করে খাওয়াতো, তাঁরা সবাই ভালো আছেন তো? শিক্ষামন্ত্রী জানেন কি, কারখানা বন্ধ হলে শেড চুরি হয়ে যায়, রাতের বেলা মেশিনপত্র হাঁটতে শুরু করে, তেমনি স্কুল বন্ধ হবার পর ঐ জায়গাগুলো অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হয়েছে? এত ঝড়বৃষ্টি গেল, স্কুলগুলি সব আস্ত আছে তো? যে জিজ্ঞাসাটা সকলেই করছেন, আপনি দমদমের যে রাস্তার শেষের দিকে নিরিবিলিতে থাকেন, তার প্রবেশমুখে এতো পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে কেন? তা কি ঐ হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী যাদের আন্দোলনের চাপে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত কথা দিয়েছিলেন, তাদের দ্রুত নিয়োগ করা হবে, তাদের বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে? এভাবে কি নিরিবিলিতে বাঁচা যায় নাট্যকার? ম্যাকবেথের ঐ অশরীরী আত্মাগুলো তো আপনাকে খুঁজে ফিরবেই! আসলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না ১০-১২ বছরের শিশুদের কেন ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি, শিশুদের এই ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখার রাস্তা কি, শিক্ষামন্ত্রীও জানেন না শিশুদের শিক্ষা দিতে কত শিক্ষক দরকার। “সবই তিনি বলবেন”! শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চয়ই অবগত বিদ্যালয় আসলে বন্ধুত্ব শেখায়, সমাজ চিনতে শেখায়। রবি ঠাকুরের সেই কবিতাটি মনে পড়ে? আমরা চাষ করি আনন্দে। চাষির ছেলের সাথে অধ্যাপকের মেয়ের বন্ধুত্ব হতে কোনো প্রাচীর মাঝে দাঁড়ায় না। এই হারিয়ে যাওয়া বন্ধুত্ব মুখ্যমন্ত্রী ফেরত দেবেন কিভাবে?

আপনাদের হাতে আমাদের শিশুদের দায়িত্ব আমরা ছেড়ে দিয়েছি। ঐ কুঁড়ে ঘরে থাকা গ্রামগঞ্জের মানুষগুলোর আর কোনো পথ নেই — বেটি অন্তত দু’চার পাতা শিখে আসুক। এত উন্নাসিকতা নিয়ে শিক্ষা দপ্তর চালানো যায়? কথা বলুন, সকলের সাথে বলুন। মানুষ পথ দেখায়, আলো দেখায়।

- পার্থ ঘোষ

CPIML will contest some seats

১৭ জানুয়ারি সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, ৫টি রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাছাই করা আসনে পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। তিনি বলেন, বিজেপি’র বিরুদ্ধে আমরা প্রচারে সর্বশক্তি নিয়োগ করব এবং বিজেপি-বিরোধী সমস্ত শক্তির কাছে আবেদন করব তারা যেন ঐক্যবদ্ধ হয় এবং বিজেপি’কে পরাজিত করে। তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের হাওয়া ভালোভাবেই অনুভব করা যাচ্ছে এবং দলিত, পিছিয়ে পড়া বর্গ এবং সংখ্যালঘুদের ওপর যোগী সরকার যে নিপীড়ন নামিয়ে এনেছেন তার মূল্য তাঁকে মেটাতেই হবে এই নির্বাচনে।

দীপঙ্কর জিন্দালের জন্য ওড়িশার ধিনকিয়ায় জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনের ওপর পুলিশী অত্যাচারের নিন্দা করেন। ২১ জানুয়ারি সিপিআই(এমএল) বিধায়ক বিনোদ সিং, প্রাক্তন এমএসএস বিধায়ক অরুপ চ্যাটার্জ্জী এবং জাতীয় আদিবাসী সংঘর্ষ মোর্চা নেতা দেবকীনন্দন বেদিয়ার নেতৃত্বে একটি পরিদর্শনকারী টীম অকুস্থলে যাওয়ার কথা বলেন। ছয় বছর আগে রোহিত ভেমুলার যে প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা হয় তাকে স্মরণ করে বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতপাত নিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ ও হয়রানির বিরুদ্ধে রোহিত আইন লাগু করতে হবে। ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, ধানবাদে একজন বিজেপি নেতার প্রশ্রয়ে এক ব্যাক্তিকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে এবং মহিলাদের ওপর আক্রমণ বেড়েই চলেছে। দু’বছরের ক্ষমতাসীন হেমন্ত সরকারের কাজকর্মের খতিয়ানের প্রশ্নে বলেন, রাজ্যের বেশিরভাগ অংশেই চুক্তি শ্রমিকদের কাজের নিশ্চয়তা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। এদের দাবি পূরণে হেমন্ত সোরেন সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ ঝাড়খণ্ডের জনগণ তাদের দাবি পূরণ হয়নি বলে রঘুবর সরকারকে হটিয়ে তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন।

১৮ জানুয়ারি পাঞ্জাবে সিপিআই(এমএল) রাজ্য সম্পাদক রাজিন্দর সিং রানা এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দল ২০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এব্যাপারে অন্যান্য বামপন্থী পার্টি এবং সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার সাথে আলোচনা চলছে। পার্টির মূল অ্যাজেন্ডা হল নিপীড়িত জনগণের দাবিতে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জনগণের সম্পদ কর্পোরেট লুঠেরাদের হাত থেকে বাঁচানো।

embezzlement and hypocrisy

স্বাধীনতার ৭৫ উদযাপন বর্ষে বিজেপি-আরএসএস পড়েছে মহা বিপাকে। এই পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না বুক ফুলিয়ে এটা বলা যে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-পূর্ব বহিরাগত মুসলিম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তথাকথিত হিন্দু ভারতের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার সংগ্রামই ছিল প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রাম, এবং তাকে পুনরুজ্জীবিত করার মধ্যেই সাধের সঙ্ঘবাদী হিন্দুত্বের ‘আজাদী’র চাবিকাঠি রয়েছে; এই উন্মাদনা সৃষ্টি করে একদিকে যেমন ওরা পরিবেশ-পরিস্থিতিকে বিষিয়ে দেওয়া থেকে বিরত হচ্ছেনা, তেমনই অন্যদিকে তাদের বিকৃত অনৈতিহাসিক আজগুবি তত্ত্বায়নে দেশবাসীকে বশীভূত করাও সহজ হচ্ছে না। বিজেপি-আরএসএস আর তাদের স্যাঙাত বাহিনী সব বিদ্ধ হচ্ছে বিদ্বেষ-বিভাজন-ঘৃণার মতাদর্শ-রাজনীতি-সংস্কৃতির সওদাগর হিসেবে। ভারতের জনগণের মনে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বলতে গেঁথে আছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে জনগণের জন্য জনগণের দ্বারা মুক্তির সংগ্রাম। যে স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু-মুসলিম জনগণ একসাথে অগনিত বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, অসীম আত্মত্যাগ স্বীকার করেছিল। রাজনৈতিক হিসেবে অবদান ছিল কংগ্রেসী জাতিয়তাবাদী, সমাজবাদী ও সাম্যবাদী ধারার। পক্ষান্তরে, হিন্দুত্ববাদীদের গৈরিক ধারার কোনও ইতিবাচক ভূমিকা ছিল না, তারা কেবল লিপ্ত ছিল বিশ্বাসঘাতকতা-আত্মসমর্পণ-অনুচরবৃত্তিতে। শত চেষ্টা করেও এই সামগ্রিক সত্য কিছুতেই ভোলানো সম্ভব নয় বুঝে আজ মোদীজীরা এরমধ্যে ঢুকে পড়ে উঠে পড়ে লেগেছেন সাধু সাজতে। ক্ষমতা ধরে রাখার খাস স্বার্থে এছাড়া গত্যন্তর দেখছেন না। সেই মনোভাব থেকেই নামানো হয়েছে ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব’ কর্মসূচি। এতে বাহানা বানানো হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের উপেক্ষিত জননায়কদের মর্যাদার আসনে বসানোর। এই ধূয়ো তুলে বিজেপি চায় জাতীয় কংগ্রেস সহ সমস্ত আঞ্চলিক শাসক শক্তিকে নস্যাৎ করে দিতে। তারজন্য মূল নিশানা বানানো হচ্ছে কংগ্রেসকে, আর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রদর্শনী কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাঠানো সুভাষ চন্দ্র বসু’র মূর্তির ট্যাবলো, কেরল ও তামিলনাড়ুর ট্যাবলো ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’র নামে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। আরও হয়ত কত বিক্রম প্রদর্শন অপেক্ষা করছে! মোদী অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্যদের ভূমিকাকে গৌণ, ম্লান বা অনুচ্চারিত করে রেখেছে, আর কৃতিত্বের সমস্ত আলো টেনেছে কেবল নেহরু ও গান্ধী পরিবার। একথা বিজেপি বলছে বলে নয়, কংগ্রেস কালচারের মধ্যে উপরোক্ত অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বিগত সাতদশক যাবত। একে বিজেপি আজ পুঁজি করছে নিজেকে  ‘স্বমহিমায়’ প্রতিস্থাপিত করতে। সেই উদ্দেশ্যে বিশেষত নেহরুর বিপরীতে সুভাষ চন্দ্র তথা গান্ধী-সুভাষ চন্দ্রের উত্তরসাধক সাজতে মরীয়া। কিন্তু গান্ধীর হত্যাকারী গডসে বিজেপি-আরএসএস ধারার কাছে বিশ্বাসঘাতক সাভারকারের মতোই ‘মহান’। গডসে’কে ‘গৌরবের’ দাবি করে কখনও গান্ধীর জন্ম-মৃত্যুদিবস পালনের নৈতিক অধিকার থাকতে পারে না। আর, আদর্শগতভাবে সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ধারার ঘোর বিরোধী। তাই তাঁর মূর্তি বানিয়ে ভাবমূর্তির উত্তরসূরী দাবি করার বিজেপি’র বজ্জাতি বরদাস্ত করা উচিত নয়।

পশ্চিমবাংলার গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি উন্মত্ত হয়েছিল সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের হাওয়া তুলে টেক্কা দিতে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। তবু ব্যর্থতাকে স্বীকার না করতে ফের হিন্দুত্বের জিগির তুলতে চায়, বলে — সংখ্যালঘুদের এককাট্টা ‘ভেটো’ ভোটে হারিয়ে দিয়েছে। সামনে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, বিজেপি  রয়েছে বেশ রাজনৈতিক সংকটে। পরিত্রাণ পেতে চালাচ্ছে চরম সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রচার। হরিদ্বারের হিন্দু ধর্মসংসদ থেকে হুঙ্কার দেওয়া হয়েছে মুসলিম গণহত্যা চালানোর, খোদ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও হুমকি দিয়েছেন এবারের উত্তরপ্রদেশের ভোট হবে ৮০ শতাংশ (সংখ্যাগুরু) বনাম ২০ শতাংশের (সংখ্যালঘু) মধ্যে। প্রবল ধিক্কারের চাপে কপটতার কৌশল নিয়ে ধর্মসংসদের অপরাধী ক’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বটে, কিন্তু যোগীর ভরসা মোদী। এরপরেও তারা সাজতে চায় ‘সুভাষপ্রেমী’! কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইতিহাসে উপেক্ষিতদের ভূষিত আর করা হল কোথায়? বরং মুসলিম নামাঙ্কিত স্থানগুলোর নাম পাল্টে হিন্দুত্বের নেতাদের নামাঙ্কিত করা হয়ে আসছে। এমনকি কলকাতায় গঙ্গাতীরের ‘নেতাজী’ নামাঙ্কিত বন্দরের জোরজবরদস্তি নয়া নামকরণ করা হয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর নামে! এরপরেও চলছে ‘সুভাষ-বিগলিত ভাব’ প্রদর্শনের ভন্ডামী! সুভাষ চন্দ্রের দেশ চালনার মূল ভাবনায় অন্যতম বিষয় ছিল — প্ল্যানিং কমিশন। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে পরিকল্পনা বিষয়ক যোজনা কমিশন তুলে দিয়েছে। চর্চার প্রশ্নে বহু ত্রুটিপূর্ণ অতীত থাকলেও যার বুনিয়াদী ধারণায় ছিল কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে মতামতের আদানপ্রদানের ভিত্তিতে সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বরাদ্দ বণ্টন। মোদী সরকার তা অবলুপ্ত করে বানিয়েছে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতার ‘নিতি আয়োগ’।

স্বাধীনতার ৭৫ উদযাপনের সময়ে মোদী জমানা সুভাষচন্দ্রের জাতিয়তাবাদী ভাবনার পুনরুল্লেখ করছে সম্পূর্ণ বিপরীত উদ্দেশ্যে। তাকে এমন এক কঠোর রাষ্ট্রবাদী কাঠামোয় দেশকে শেকল পরানোর সপক্ষে যুক্তি জাহির করছে — যেখানে শাসন ও শাসকের প্রতি নাগরিকের সংগঠিত-অসংগঠিত যে-কোনও প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জকে ‘শান্তি-সুস্থিতি-বিকাশ বিরোধী’, এমনকি প্রয়োজনে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী-দেশদ্রোহী’ তকমা সেঁটে দেওয়া হয়। আর, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অন্তরাত্মা সংবিধানকে লোকদেখানো ললাট স্পর্শ করে কার্যত লোপাট করে দেওয়া হয়।

প্রকৃত আধুনিক ও প্রগতির জাতিয়তা ও সাংবিধানিক বোধ আদৌ শাসন ক্ষমতার অতি কেন্দ্রীকরণ ও কঠোর রাষ্ট্রবাদের ধারণার সঙ্গে খাপ খায় না। বরং সেই ধারণা এক গৌরবময় মালার মতো, যাতে অবিচ্ছিন্নভাবে জড়িয়ে থাকা উচিত একগুচ্ছ আবশ্যিক উপাদান — জনগণের গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমালোচনা ও বিরোধিতার অধিকার, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ, বহুত্বের মর্যাদা, যুক্তরাষ্ট্রীয়তা, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতিভেদ ও বর্ণপ্রথার অবসানমুখী সামাজিক সংস্কার, পিতৃতন্ত্রের অর্গল থেকে মুক্তির নারী-পুরুষের সম মর্যাদা সমানাধিকার, ছোট-বড় সমস্ত ভাষাভাষি জাতিসত্ত্বাগুলির এবং জাতীয় সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বর্গের সম্প্রীতি ও স্বেচ্ছাসম্মিলনের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য, প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক এবং সার্বভৌমত্বের স্বাধীনতা। এর সবকিছুরই বিরুদ্ধাচরণ করে চলছে বিজেপি’র রাজনৈতিক ধারণা ও রাষ্ট্রবাদ।

Genocide Warning

ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের গণনিধনের এক পরিস্থিতি ক্রমশ সূচিমুখ হয়ে উঠছে। ‘জেনোসাইড ওয়াচ’এর সভাপতি ডঃ গ্রেগরি স্ট্যানটন সম্প্রতি ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেসের কাছে পেশ করা এক বিবৃতিতে এবিষয়ে  সতর্ক করেছেন।

গণহত্যা একটি একক ঘটনা নয়, এটি একটি প্রক্রিয়া — এই জোরালো অভিমতের জন্যই ডঃ স্ট্যানটন সুবিদিত এবং তিনি এই প্রক্রিয়ার দশটি বিশেষ দিকের কথাও বলেছেন। তিনি সাম্প্রতিকতম এক সতর্কবার্তায় বলেছেন, এই বিষয়গুলির প্রায় সবকটিই এখন ভারতে দেখা যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, গণহত্যার প্রস্তুতি-পর্যায়ে সংখ্যালঘু জনগণকে অনেক সময়েই বেনাগরিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে তাদের বৈষম্যের শিকারে পরিণত করা হয়। ঠিক এটাই হয়েছিল মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ক্ষেত্রে, আর তারপরই তাদের নির্বিচার হত্যার মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। আমরা ভারতবর্ষেও এটাই ঘটতে দেখছি এনআরসি, সিএএ’র মতো আইন এবং ধর্মান্তর বিরোধী আইনগুলো নিয়ে, যেগুলো মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডঃ স্ট্যানটন বলেছেন কীভাবে হরিদ্বার ও অন্যত্র বিদ্বেষ-জমায়েতগুলোর ভাষণে হিংস্র ভাষা ব্যবহার করে মুসলিমদের চূড়ান্ত অবমাননা করা হচ্ছে, শুধু তাই নয়, তাদের হত্যার প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে।

জেনোসাইড ওয়াচ আরও কয়েকটি প্রক্রিয়া চিহ্নিত করেছে যেগুলো ভবিষ্যৎ গণহত্যার ইঙ্গিতবাহী। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে — সশস্ত্র খুনী বাহিনীর সংগঠন; সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুর জন্য বিপজ্জনক এমন মিথ্যা ধারণা ছড়িয়ে গণহত্যার প্রস্তুতি; এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে জমি থেকে উৎখাত করে, সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাদের উপর নির্যাতন চালানো। আমরা এই সমস্ত প্রক্রিয়াগুলোকেই সম্প্রতি ভারতে দেখতে পাচ্ছি। ধর্ম সংসদগুলিতে প্রকাশ্যে এমনকি শিশুদেরও, সশস্ত্র করার ও মুসলিম নিধনে তাদের প্ররোচিত করার প্রস্তুতি চালানো হচ্ছে। বজরঙ দলের মতো হিন্দু আধিপত্যকামী দলগুলো ইতিমধ্যেই অস্ত্রচালনা প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেছে। হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ছদ্ম আবরণে বিদ্বেষ ছড়ানোর সমাবেশগুলোতে হিংসার ব্যাপারীরা তাদের ভাষণে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ‘আগ্রাসী’ হিসাবে তুলে ধরে। কিন্তু আসল সত্য হল ধারাবাহিকভাবে মুসলিমদের ভীড় হিংসার বলি হতে হচ্ছে, আক্রান্ত হতে হচ্ছে। ডঃ স্ট্যানটন উল্লেখ করেছেন, কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়া আর আসামে এনআরসি লাগু করা — গণনিধনের পথের অশুভ ইঙ্গিত বহন করছে। তার সঙ্গে আমরা দেখছি আসামে কীভাবে মুসলিমদের জোর করে জমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে আর ভাষাগত সংখ্যাগুরুদের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হচ্ছে। এইসব এবং অন্য রাজ্যগুলিতে ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মাণ সেই গণহত্যার পথেরই নিশানা।

উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে বিদ্বেষ ছড়ানোর জমায়েতগুলোর মূলচক্রী যতি নরসিংহানন্দকে হরিদ্বার পুলিশ গ্রেফতার করেছে তার ঘৃণাবর্ষী গণহত্যার প্ররোচনা সৃষ্টিকারী ভাষণের জন্য নয়, বরং শাসকদল বিজেপি’র মহিলা সাংসদদের প্রতি তার আগেকার কুমন্তব্যের জন্য! বিষয়টা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যতি এবং অন্য যারা অনবরত বিদ্বেষের গরল ঢেলেও বিনা শাস্তিতে দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে — তাতে বিন্দুমাত্র বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বয়ং তাদের সেইসব ভাষণের জন্য ‘বিখ্যাত’ যেখানে মুসলিমদের প্রতি মানুষ হিসাবে চরম অমর্যাদা প্রকাশ পায় আর তাদের বিরুদ্ধে হিংসাকে উস্কে দেয়!

ভারতের জনগণকেই সময় থাকতে এই সতর্কবার্তায় গুরুত্ব দিতে হবে এবং গণহত্যা প্রতিরোধ করতে কাজ করতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, তাদের মর্যাদা রক্ষা করে এবং বিজেপি’র ছড়ানো ঘৃণা ও হিংসার রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান ও ভোটে পরাস্ত করার মাধ্যমেই সেটা করতে হবে।

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয়, ১৯ জানুয়ারি ২০২২ সংখ্যা)

fundamental rights

সাধারণতন্ত্র দিবসের দিনকয়েক আগে দেশের প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিক নীতি নৈতিকতার বিরুদ্ধে মোক্ষম এক আঘাত হানলেন। আপাদমস্তক এক অরাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক ব্রহ্মকুমারী সংগঠনের অনুষ্ঠানে আদ্যন্ত রাজনৈতিক বক্তব্য হাজির করে নির্লজ্জভাবে বেআব্রু ঘটালেন নিজের ফ্যাসিবাদী মনোভঙ্গি। তিনি বললেন, “এটা স্বীকার করতে হবে, নিজেদের কর্তব্যকে উপেক্ষা করাটা জাতীয় জীবনে এক বদরোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৭৫ বছর ধরে আমরা সারাক্ষণ অধিকার নিয়ে চেঁচামেচি করেছি, অধিকারের দাবিতে লড়েছি আর এভাবেই সময় নষ্ট করেছি। অধিকারের উপর প্রধান নজর রাখতে গিয়ে নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য ভুলতে বসেছি, আর এজন্যই, স্বাধীনতার ৭৫ বছরের পর আমাদের দেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।” এই বদরোগের দাওয়াই মোদী কী দিয়েছেন?  তাঁর মতে, “পরবর্তী ২৫ বছরে কঠোর শ্রম, আত্মত্যাগ ও তপস্যার মাধ্যমে সেই পাপস্খলন করতে হবে”। গণতান্ত্রিক অধিকারকে পেছনে ঠেলে সরানোটাই নাকি এদেশের আধ্যাত্মিক চেতনা!

এক অরাজনৈতিক আধ্যাত্মিক মঞ্চে অধিকার ও দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে এই ‘পাঠ’এর নেপথ্যে কি কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে?  

১৪ জানুয়ারি, মুম্বাইয়ের একটি সভায় সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি (যিনি প্রভাবশালীও বটে) রোহিংটন ফালি নারিমান তীব্রভাবে ক্ষমতাসীন শাসকদের উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে সমালোচনার তির ছুঁড়ে দেন। ভারতীয় সংবিধানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১৯(১) (এ)-তে বিধৃত মানবাধিকার সংক্রান্ত ধারায় বাক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের  মৌলিক অধিকারের উপর একের পর এক যে হামলা কেন্দ্রীয় সরকার নামিয়ে এনেছে ভিন্ন মতাবলম্বী ছাত্র ছাত্রী বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী শিল্পীদের উপর, ঔপনিবেশিক আমলের চরম গণতন্ত্র বিরোধী রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ফাঁসে নির্বিচারে গ্রেপ্তারিকে তিনি তীব্র সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি, ঘৃণা ভাষণের সাথে যারা যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে পিঠ চাপড়ানোর ঘটনাগুলিকে তিনি নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন। পুত্র হুমায়ুনকে লেখা সম্রাট বাবরের একটি চিঠি উদ্ধৃত করে তিনি সেই আমলে ধর্মনিরপেক্ষতার ভারতীয় ভাবধারাকে উল্লেখ করেন, যা সরাসরি সংঘ বাহিনীর বিরুদ্ধেই তাক করা। তাঁর এই প্রজ্ঞাদীপ্ত ভাষণ বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে। সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখার যে রাষ্ট্রিয় কর্তব্য তিনি তুলে ধরেন, মোদী সরাসরি তাকেই নস্যাৎ করে বুঝিয়ে দিলেন চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী। প্রশাসনের সর্বাধিনায়ক হয়ে তিনি বিচার ব্যবস্থাকে একটু সমঝে চলার রূঢ় ইঙ্গিত দিয়ে এটাই বোঝাতে চাইলেন যে বিচারব্যবস্থা তার স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী সরকারের সবচেয়ে দুর্বল শাখা। যত ভালো রায় বিচারসভা দিক না কেন, শেষমেশ তার রূপায়ণের জন্য তাকে নির্ভর করতে হয় প্রশাসনের উপরই।

মোদী জমানা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে এক বিপরীত ধারণা হাজির করেছে যা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সাথে পুরোপুরি খাপ খেয়ে যায়।

নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত একবার বলেই বসেন, বড্ড বেশি গণতন্ত্র সংস্কারমূলক কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা। আর সবাইকে ছাপিয়ে যান অজিত ডোভাল, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, মোদীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত সহচর। তিনি একবার একটা ভাষণে বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হয়ে পড়ছে নাগরিক সমাজের নৈরাজ্যবাদী কার্যকলাপের দরুণ।...  যুদ্ধের নতুন সীমান্তরেখা, যাকে আপনারা চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ হিসাবে আখ্যা দেন, তা হল নাগরিক সমাজ।” এই কথা বলার পর তিনি নতুন এক তত্ত্ব হাজির করেন, “ব্যালট বাক্সে ভোট দেওয়াটা গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নয়। ব্যালট বাক্সের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যে আইন রচনা করেন, সেই আইনই হল গণতন্ত্র।” অর্থাৎ ডোভালের কাছে রাষ্ট্রই হল সবার ঊর্দ্ধে, জনগণ নয়।

মোদী, আরএসএস, এবং এদের শাসনতন্ত্রের কাছে সংবিধান-গণতন্ত্র-নাগরিক সমাজ সম্পর্কেই রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁদের চোখে ভারতে এখনও বজায় রয়েছে ঔপনিবেশিক রাজতন্ত্র — যেখানে জনগণ ‘প্রজা’, স্বাধীন সার্বভৌম্য দেশের ‘নাগরিক’ নন। ভারতের সংবিধানের ‘প্রি-অ্যাম্বেল’ শুরুই হচ্ছে এই বাক্য দিয়ে “আমরা, ভারতের জনগণ...” আর গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এমন এক সমাজ হিসাবে, যেখানে নাগরিকরা হচ্ছেন স্বাধীন সার্বভৌম, আর তারাই রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবেন। ‘প্রজা’ ও ‘নাগরিক’ ধারণার মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল ফারাক। এক সর্বশক্তিমান রাজাধিরাজের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে থাকে প্রজারা, যাদের অধিকার থাকেনা, যাদের কর্তব্যই হল রাজাধিরাজ বা তার সরকারের হুকুমকে নীরবে, বিনা প্রতিবাদে মেনে চলা। আর, সংবিধানের মধ্যে দিয়ে পাওয়া সর্বজনীন ভোটাধিকার মারফত নাগরিকেরা নির্বাচিত করেন নিজেদের পছন্দসই সরকার। তাই, গণতান্ত্রিক দেশে, সেই দেশের সংবিধানে নাগরিকরাই থাকেন কেন্দ্রবিন্দুতে — জনগণকে নিয়ে জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুরক্ষিত রাখাটা দেশের শাসকবর্গের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, পবিত্র এক নৈতিক কর্তব্য।

কিন্তু, মোদী জমানা গোটা প্রেক্ষিতটিকেই উল্টে দিল। তাঁর শাসনে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলাটা দেশকে দুর্বল করার সামিল, মুখ বন্ধ করে প্রজাদের করে যেতে হবে রাজাধিরাজের জন্য আত্মত্যাগ, তাঁর প্রতি দেখাতে হবে কর্তব্যপরায়ণতা। আর, রাজন্যসেবাকেই ঠাওড়ানো হচ্ছে তপস্যা হিসাবে।

মোদী তাঁর ভাষণে দেশবাসীকেও চরম অপমান করলেন। দেশের নাগরিকেরা — মোদীর কথা অনুযায়ী — এতোদিন যেন নিজেদের নাগরিক কর্তব্য পালন করেনি। আগামী ২৫ বছরে এই ‘পাপের’ প্রায়শ্চিত্ত করতে তাই নিজেদের মৌলিক অধিকারে ভুলে এক এবং একমাত্র রাষ্ট্রের জন্য পালন করতে হবে নিজেদের কর্তব্য।

এক চরম শয়তানি চিন্তাভাবনাকে আধ্যাত্মিক মোড়ক দিয়ে দায়িত্ব-কর্তব্যকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে আগামী ২৫ বছর ধরে নিজের ফ্যাসিবাদী প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওকালতি করলেন মোদী।

- অতনু চক্রবর্তী

racist professor arrested

জাতিবিদ্বেষী অবমাননার বিরুদ্ধে সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা পাপিয়া মান্ডির সুবিচার পাওয়ার লড়াই আরও একধাপ এগলো। গত ২৪ জানুয়ারি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে অভিযুক্ত অধ্যাপক নির্মল বেরাকে। বিগত চারমাস লাগাতার সংগ্রাম এগিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে পাপিয়া প্রথম কলেজ কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা করেছিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে পাপিয়ার পাশে দাঁড়ান। মেরুনা নিজেও জাতিবিদ্বেষী অবমাননার শিকার হয়েছেন এবং সুবিচার পেতে দীর্ঘ একরোখা আইনি লড়াই লড়ছেন। মেরুনা পাপিয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। অনেকগুলি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ই-মেল করা হয়। অভিযোগ দায়ের করায় পাপিয়ার ওপর যাতে নতুন করে প্রতিহিংসামূলক হয়রানি না নেমে আসে তা নিশ্চিত করার আবেদনই জানানো হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। বলা বাহুল্য মন্ত্রী মহাশয় চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে একটা উত্তর দেওয়ার দায়বদ্ধতাটুকুও দেখাননি। এবং আমাদের আশঙ্কা বাস্তব করে সবং কলেজের অধ্যক্ষ তপন দত্ত মহাশয় পাপিয়া মান্ডির প্রতিবাদ দমন করতে নতুনভাবে হয়রানি ও অপমান শুরু করেন। কিন্তু পাপিয়া দমে না গিয়ে ১৯ অক্টোবর সবং থানায় এফআইআর দায়ের করেন। তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। সবং ব্লকের পারগানা মহলের লড়াকু নেতা মিঠুন মুর্মুর নেতৃত্বে প্রথম বিক্ষোভ সংগঠিত হয় এবং পুলিশ ‘এসসি-এসটি (প্রিভেনশন অব এট্রসিটিস) অ্যাক্ট’ বা ‘পোয়া’ আইনের কয়েকটি ধারা-উপধারায় অধ্যাপক নির্মল বেরা ও অধ্যক্ষ তপন দত্তর বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করে। নির্মল বেরা ও অধ্যক্ষ তপন দত্তকে গ্রেপ্তার করার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চলে। আদিবাসী সংঘর্ষ মোর্চা, ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল, দিশম আদিবাসী গাঁওতা, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, সাঁওতালি সাহিত্য একাডেমি মেদিনীপুর, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি সহ বিভিন্ন সংগঠন ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়েছে। ‘প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চ’ গড়ে ৬ ডিসেম্বর জেলাশাসককে স্মারকলিপি প্রদান, ২১ ডিসেম্বর ভাজামাপামের ডাকে কলেজ ঘেরাও ও যাদবপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভসভা, ৯ জানুয়ারি মেদিনীপুর শহরে গণকনভেনশন, ১৭ জানুয়ারি সাতটা জেলায় ডেপুটেশন ও প্রতিবাদসভা ইত্যাদি সংগঠিত করার পর আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানির দিন মেদিনীপুর আদালতের সামনে মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাকও আছে। এসবের পর একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হল। আদালতে তোলার পর ধৃত নির্মল বেরাকে একদিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।

এখন প্রশ্ন উঠেছে আরেক অভিযুক্ত, অধ্যক্ষ নির্মল বেরাকে কেন গ্রেপ্তার করা হল না? রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে অপরাধিদের আড়াল করার অপচেষ্টা দেখা গেছে। সবঙের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীযুক্ত মানস রঞ্জন ভুঁইয়া কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি। তিনি জাতিবিদ্বেষী অপরাধের দোসর হিসেবে অবতীর্ণ হন। সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন যে, কোনও অসম্মানের ঘটনা ঘটেইনি। নির্মল বেরাকে গ্রেপ্তারের পর প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে একজন পুলিশ আধিকারিক বলেছেন যে, অধ্যক্ষর অপরাধের ক্ষেত্রে নাকি ‘পোয়া’ আইন প্রযোজ্য নয়। অথচ এফআইআর’এ পাপিয়া তাঁর প্রতি অধ্যক্ষের করা জাতিবিদ্বেষী অন্যায়গুলি সুস্পষ্ট ভাষাতেই উল্লেখ করেছেন। মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে বৈষম্য, কলেজের অনুষ্ঠানমঞ্চে প্রকাশ্যে পাপিয়াকে খাটো করা, প্রাপ্য এরিয়ারের ক্ষেত্রে বৈষম্য ইত্যাদি তো ছিলই, অভিযোগ জমা করার পর পাপিয়াকে কলেজে জয়েন করতে বাধা প্রদান এবং পাপিয়াকে পাগল প্রতিপন্ন করার চেষ্টাও চালিয়েছেন অধ্যক্ষ এবং এই সমস্ত কিছুর প্রত্যক্ষ প্রমাণও আছে। এসব সত্ত্বেও অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার না করায় একথা স্পষ্ট হয়েছে যে পুলিশের ওপর মন্ত্রী মহোদয়ের চাপ কাজ করছে। ইতিমধ্যে, অধ্যক্ষের আসনে বসে থেকে, তদন্তকে প্রভাবিত করতে তপন দত্ত মহোদয় সাক্ষি ছাত্রছাত্রীদের ভীতি প্রদর্শন ও নানারূপ ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন পাপিয়ার পরিবার। ফলত অবিলম্বে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। এবং আদালতে শেষ পর্যন্ত পাপিয়া যাতে সুবিচার পান তা নিশ্চিত করতে আন্দোলন জারি রাখা দরকার। একেতো কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পোয়া আইনকে ইতিমধ্যেই অনেকটা দুর্বল করে দিয়েছে, তাছাড়া এরাজ্যে পোয়া আইনের প্রয়োগের রেকর্ড খুব আশঙ্কাজনক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পোয়া আইনের ধারায় এফআইআর নিতে চায়না পুলিশ, নিলেও সময় মতো চার্জশিট দেওয়া হয় না এবং চার্জশিট জমা পড়ার পর বিচারের নামে দীর্ঘদিন প্রহসন চলে, ধীরে ধীরে মামলাগুলি অকেজো করে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে এই মাসেই রাজ্য হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদিবাসী আন্দোলনের একজন কর্মী শ্রী দেবেন্দ্রনাথ হাঁসদা মহাশয়। জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সুবিচার পাওয়ার লড়াই তাই লাগাতার চলবে। আগামি ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানীর দিনে তাই মেদিনীপুর আদালতের সামনে মৌন প্রতিবাদ প্রদর্শনের জন্য সকল সংগঠনকে আহ্বান জানিয়েছে প্রতিবাদী ঐক্য মঞ্চের নেতা মনু হাঁসদা ও লবান হাঁসদা।

- মলয় তেওয়ারি

recruitment corruption

পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা ২নং ব্লকের বৈদ্যিপুর বাসস্ট্যান্ডে গত ১৯ জানুয়ারি রাজ্যব্যাপী বিপ্লবী যুব এসোসিয়েশনের ডাকে দুর্নীতি বিরোধী প্রচার অভিযান কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ প্রতিবাদসভা সংগঠিত করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন আরওয়াইএ’র রাজ্য সম্পাদক রনজয় সেনগুপ্ত, রাজ্য কার্যকরী সভাপতি সজল দে ও ছাত্র যুব অধিকার মঞ্চের নেতা রাজিবুল ইসলাম, সেখ সিরাজউদ্দিন এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের কালনা লোকাল কমিটির সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। বক্তারা রাজ্য সরকারের নিয়োগ নীতিতে দুর্নীতি বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগে লাগামহীন দুর্নীতি ও অপদার্থতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এবং কলকাতার অবস্থান বিক্ষোভ আন্দোলনরত এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের আন্দোলনের সমর্থনে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। গ্রামে গ্রামে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে, আবাস যোজনার ঘরের অনুদান নিয়ে ও পঞ্চায়েত, বিএলআরও অফিস, অন্যান্য সরকারি অফিসের দুর্নীতি-দলবাজি ও তোলাবাজির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সভায় উপস্থিত ছিলেন আরওয়াইএ’র পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতা সমীর বসাক, সুবীর মল্লিক প্রমুখ।

The only demand

এখন দাবি একটাই — ক্যাম্পাস খোলা চাই। ২৫ জানুয়ারি, এই শ্লোগান সামনে রেখে কলেজ স্কোয়ার থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় অবধি মিছিলে সামিল হয় আইসা, পিডিএসএফ সহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের বহু প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রী। মিছিল শেষে প্রেসিডেন্সির সামনে সংক্ষিপ্ত পথসভা থেকে বক্তারা স্কুল-কলেজ ক্যাম্পাস খোলা নিয়ে রাজ্য সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। আইসা’র পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য ও যাদবপুর ইউনিটের সভাপতি রুদ্র প্রভাকর।

সমগ্র কর্মসূচি সেরে ফেরার সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছেলেরা আইসা’র ছাত্রী সদস্যদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করে। পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এই বিষয় নিয়ে তাদের বরাবরের মতো কোনও ভূমিকা ছিল না। মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাথীরা ফের কলেজ স্ট্রীট চত্বরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং তৃণমূল সরকারের পুলিশের উদ্দেশ্যে তীব্র ধিক্কার জানায়।

January 26 program

উত্তর ২৪ পরগণা

“সংবিধান বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও, দেশ বাঁচাও” শ্লোগান তুলে সকালে নৈহাটিতে মিছিল বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। মিছিল থেকে দেশ বিক্রি ও শ্রম কোডের বিরুদ্ধে আগামী ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ধর্মঘট সফল করারও আহ্বান জানানো হয়।

সংবিধান বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও অভিযানে অশোকনগরে এক সভা অনুষ্ঠিত হল স্থানীয় গোল বাজারে। সভার শুরুতে সংবিধানের মূল মূল স্তম্ভ রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে শপথ বাক্য পাঠ হয়। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট শক্তির জাতীয় সম্পদ লুঠ করতে নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করার বিরুদ্ধে পার্টি নেতা অজয় বসাক, পবন সিংহ রায় ও বামপন্থী বন্ধু নীহার কাঞ্জিলাল বক্তব্য রাখেন। সঙ্গীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করে আইসা কর্মী সৃজনা মুখার্জী, মেঘনা মজুমদার সহ অন্যান্যরা। সমগ্র সভা পরিচালনা করে অনুপ মজুমদার।

২৬ জানুয়ারি বারাসাত শহরে ব্রিটিশ উপনিবেশ বাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের নেতাদের প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করল সিপিআই(এমএল) এবং আইসা। বারাসাত সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সামনে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর মুর্ত্তিতে মালা দেন আইসা বারাসাত শাখার সম্পাদক আকাশ। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের প্রতিকৃতিতে মালা দেন বর্ষীয়ান বাম কবি রাখালরাজ চট্টোপাধ্যায়। মাস্টারদার সহ যোদ্ধা অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রতিকৃতিতে মালা দেন আইসার সংগঠক অন্বেষা। বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক, নারী শিক্ষার অগ্রদূত পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে মাল্য দান করেন আইসার অন্যতম সংগঠক সৌরভ। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্যকে প্রত্যাখান করার বিজেপি সরকারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রকৃত ইতিহাসকে উর্দ্ধে তুলে ধরা এবং দেশের সারভৌমত্ব ও সবিধান রক্ষায় পার্টির আহবান এদিন সর্বত্র বিলি করা হয়। ২৮ জানুয়ারি কাম্পাস খোলার দাবিতে বারাসত স্টেশনে ১নং প্লাটফর্মের পাশে দুপুর ৩টা থেকে আইসার উদ্যোগে ছাত্র, শিক্ষক অবিভাবকদের এক সম্মিলিত সভার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পার্টি এবং আইসার পক্ষ থেকে ৩০ জানুয়ারি বারাসাত ছোট বাজারে গান্ধীর মূর্তিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

হুগলী

কোন্নগর ২নং কলোনী বাজার মোড়ে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উদ্যোগে স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার শপথ গ্রহণ কর্মসূচি সংগঠিত হয়। মোদী সরকারের জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে দেশ বিক্রি এবং ভোটার পরিচয়পত্র সহ সবকিছু নথিপত্রের সঙ্গে আধার সংযোগের অন্যায় সরকারি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার মারাত্মক চেষ্টাকে সবরকমভাবে রুখে দেওয়ার আহ্বান রাখা হয় জনতার উদ্দেশ্যে। কয়েকজন পথচলতি মানুষ নিজ আগ্রহে এগিয়ে এসে বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এবং পার্টির আহ্বান যথার্থ বলে কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

Democracy Day program

হাওড়া

৭৩তম সাধারণতন্ত্র দিবসে বালি কৈলাস ব্যানার্জী লেনের শহীদ বেদীতে আইসার উদ্যেগে পালিত হল “সংবিধানের শপথ নাও/দেশ বিক্রি রুখে দাও”— কর্মসূচি। উক্ত কর্মসূচিতে আইসার সাথীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) সাথীরা। কেন্দ্রীয় সরকার ঢাক ঢোল পিটিয়ে যখন স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে ঠিক সেই সময়েই একের পর এক জাতীয় সম্পদকে বিক্রি করে দেশকে নতুন ভাবে আম্বানি-আদানি কোম্পানি রাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভারতীয় সেনাদের কার্যত অসম্মানিত করে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে থাকা অমর জ্যোতিকে নিভিয়ে দিয়ে, দেশের মেহনতি মানুষের উপর শ্রমকোড চাপিয়ে দিয়ে এই সরকার স্বৈরাচারের সমস্ত সীমারেখা অতিক্রম করে চলেছে। এর বিরুদ্ধে বৃহত্তর  ঐক্য গড়ার আহ্বান রেখেই শুরু হয় এই দিনের সভা। স্বাধীনতা আন্দোলনের অমর শহীদ দের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ বেদীতে হয় মাল্যদান।

সভায় বক্তব্য রাখেন আইসা রাজ্য সভাপতি নিলাশীস বসু। সভা সঞ্চালনা করেন কমরেড অমিতাভ ব্যানার্জী।

দার্জিলিং

শিলিগুড়ির শক্তিগড়ে ‘সংবিধান বাঁচাও, দেশ বিক্রি রুখে দাও’ কর্মসূচীর শুরুতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন শাশ্বতী সেনগুপ্ত। শেষে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ এবং শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। উপস্থিত ছিলেন মন্টু সাহা, মিলি ভট্টাচার্য, সানিয়া মন্ডল, পিঙ্কি দাস, রুবী সেনগুপ্ত, রমা সাহা, টুলু সাহা সহ এলাকার বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী এবং বাচ্চারা।

জলপাইগুড়ি

ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানীতে ভতনজোত গ্রামে বিবাদি সংঘ ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রজাতন্ত্র দিবসে সংবিধান বাঁচাও আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পবিত্র সিংহ। পাশাপাশি রাঙাপানি রেল স্টেশনে এআইসিসিটিইউ অন্তর্ভুক্ত দার্জিলিং জেলা সংগ্রামী মুটিয়া মজদুর ইউনিয়ন এই দিবসটি পালন করে। এই কর্মসূচিতে শরৎ সিংহ, পঞ্চা বর্মন উপস্থিত ছিলেন।

Blood donation

২৬ জানুয়ারি বেলঘরিয়ায় আইসা, আলাপ ও কোভিড ভলান্টিয়ার সংগঠনের পক্ষ থেকে রক্তদান করা হয়। সমগ্র কার্যক্রম সিপিআই(এমএল) লিবারেশন জেলা কার্যালয়, সোনার বাংলা, দেশপ্রিয় নগর, বেলঘরিয়ায় সম্পন্ন হয়। কোভিড বিধি মেনে সমগ্র অনুষ্ঠানটি হয়। ৩০ জনের রক্ত দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু  কোভিড, ভ্যাক্সিন ইত্যাদির কারণে বেশ কয়েক জন রক্ত দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২৮ জন রক্ত দিতে পেরেছে।

আমন্ত্রিত হিসাবে ছিলেন ডাঃ শুভজিৎ ভট্টাচার্য (জনস্বাস্থ্য আন্দোলন), নীলাভ চ্যাটার্জি (নাট্যকার), অশোকতরু চক্রবর্তী (সাংবাদিক, বেতার), পার্থ রায় (চিত্র শিল্পী), বিদ্যুৎ দেবনাথ (সমাজকর্মী), সেরাজ নোমানি (সম্পাদক, কামারহাটি আইডিয়াল এডুকেশন সোসাইটি), বিজয় ব্যানার্জি (সিপিআই), ঝমন পাল (নেহা সাংস্কৃতিক সংস্থা)  ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত (শিক্ষক, বরানগর মিশন), মাজাহার খান, জয়দেব, অমলেন্দু ভূষণ চৌধুরী, বাসুদেব বসু, বেনু ঘটক, ঈস মহম্মদ, রাজেশ সরোজ, নারায়ণ দে, সুব্রত সেনগুপ্ত প্রমুখ। নীলাশিস, স্বর্ণেন্দু, প্রীতম, অন্বেষা, এষা, আহেলি, দীপায়ন, সায়ন্তন সহ বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। অর্চনা ঘটক, মিনু আইচ, শিখা গুহরায়, টিটু, মৈত্রেয়ী বিশ্বাস, টুলু গুহরায় (সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি)। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পলিটব্যুরোর সদস্য পার্থ ঘোষের উপস্থিতি সাধারণ কর্মী ও স্থানীয় মানুষের ভালো লেগেছে। উপস্থিত ছিলেন বেলঘরিয়ার পার্টি কর্মীরা। গানে কবিতায় সমগ্র অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সমগ্র অনুষ্ঠান অয়ন গুহরায় খুব সুন্দরভাবে সঞ্চালন করেন।

Highlight Netaji

স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে, ২৩ জানুয়ারি আইসা ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উদ্যোগে বারাসাত স্টেশন চত্বরে এবং বেলঘরিয়া দেশপ্রিয় নগরে, বজবজের গ্রামে আইসা’র পক্ষ থেকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৬তম জন্মদিবস পালন করা হয়। বারাসাতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের পর ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে সই সংগ্রহ অভিযান চালানো হয়।

Tribute to Comrade

১৬ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডে জনসংকল্প দিবস পালন করা হয় কমরেড মহেন্দ্র সিং-এর ১৭তম শহীদ দিবস স্মরণে। গিরিডি জেলায় জনসংকল্প দিবসে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সম্পাদক মনোজ ভক্ত, বিধায়ক বিনোদ সিং, গিরিডি জেলা সম্পাদক পূরণ মাহতো সহ গজেন্দ্র মাহতো, সরিতা মাহতো, মুস্তাক আনসারি, সরিতা সাও এবং অন্যান্যরা। স্থানীয় গোলামবর বাসস্ট্যান্ডে মহেন্দ্র সিং-এর নব উন্মোচিত মূর্তিতে মাল্যদান করে সভা শুরু হয়।

সভা থেকে যে সংকল্পগুলি গৃহীত হয় তা হল –

১) সিপিআই(এমএল) লিবারেশন উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ড, গোয়া এবং মণিপুরের জনগণের কাছে আবেদন করছে, কর্পোরেট-সঙ্ঘী-ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্রকারীরা যারা দেশকে ধ্বংস করতে চায় তারা যেন একটিও আসনে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জিততে না পারে।

২) মোদী সরকারের জনবিরোধী, শ্রমিকবিরোধী এবং দেশবিরোধী কর্মসূচির বিরুদ্ধে ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ধর্মঘটে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং আমরা ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তাতেও নামব।

৩) কৃষিতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আন্দোলনের পাশে থাকা, শ্রমিক-বিরোধী শ্রমকোড আইন, সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন, মানবাধিকার কর্মীদের এবং রাজনৈতিক প্রতিবাদীদের ইউএপিএ সহ রাষ্ট্রদ্রোহীতা ও অন্যান্য মামলায় কারাবন্দী করে রাখা ইত্যাদির বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা অঙ্গীকার করছি। আমরা ঝাড়খন্ড রাজ্যে পুলিশী অত্যাচার ও গণপিটুনিতে হত্যার বিরোধিতা করছি এবং দাবি করছি হেমন্ত সরকার কড়া হাতে এসব দমন করুন।

৪) আমাদের দাবি - ঝাড়খন্ডে শূন্যপদে লোক নিয়োগ এবং চাকরিতে বহাল করার জন্য নির্দেশ দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার সক্রিয় হোক।

৫) ‘সরকার আপনার দরজায়’ কর্মসূচিতে জমা পড়া আবেদনপত্র জনসমক্ষে আনা হোক এবং সেগুলির সমাধান করুক সরকার। রেশন ব্যবস্থায় ব্যাপক দূর্নীতি ও খাদ্যশস্য লুঠের তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা। জেলাস্তরেও আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও তীব্র করব। ‘খাতা’ হোল্ডারদের জমির জন্য অনলাইন জমার রসিদ দুর্নীতিমুক্তভাবে বিলি করুক সরকার। ‘গইরমাজরুয়া’ জমির জন্য জমার রসিদ দেওয়া শুরু করুক সরকার।

৬) মোদী সরকারের মুদ্রাকরণের নামে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প, পরিষেবা এবং পরিকাঠামো শিল্পকে বেচে দেওয়ার তীব্র বিরোধী আমরা।

আমাদের দাবি — ঝাড়খণ্ডের জনগণের স্বার্থে ঝাড়খণ্ড সরকারের উচিত কেন্দ্রের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করা। এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন আরও জোরদার করব।

৭) প্যারা-টিচার সহ সমস্ত চুক্তি-শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ ও উপযুক্ত বেতনের দাবি আমরা সমর্থন করি। সরকারি স্কুলে কর্মরত রাঁধুনি (রসোইয়া)-দের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্য কর্মী (সহিয়া)-দের দাবিগুলি আমরা সঠিক বলে মনে করি।

আমাদের দাবি - সরকার চুক্তি-শ্রমিকদের দাবিগুলি মেনে নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক নতুবা আমরা এই ইস্যুতে আমাদের সংগ্রাম আরও জোরদার করব।

৮) আমরা আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমির অধিকারের দাবির আন্দোলনকে সমর্থন করি এবং কর্পোরেট মদতপুষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের জন্য এই অধিকারের ওপর আক্রমণের বিরোধিতা করি। আমরা ড্রোন (যান্ত্রিক উড়ন্ত ক্যামেরা)-এর সাহায্যে খুন্তি সহ সমস্ত জেলার জমি জরিপের কাজের বিরোধিতা করছি এবং সম্পত্তি কার্ড প্রকল্পের প্রত্যাহার দাবি করছি। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন আমরা তীব্র করব।

৯) ঝাড়খণ্ডে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা ও তাদের ওপর আক্রমণ বেড়েই চলেছে। এই ঘটনায় সরকারের উদাসীনতার বিরোধী আমরা। গিরিডির মুন্ধ্রা রাইস মিল, কোডার্মার কেটিপিএস এবং বাঘমারা ও চিরকুন্ডার লোডিং শ্রমিকদের আন্দোলনের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমরা তাদের আন্দোলনকে আরও জোরদার করব।

১০) কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতি প্রত্যাহার করা উচিত। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার মিলিতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিক। পালা করে ৫০ শতাংশ ছাত্র নিয়ে ক্লাস চালু করুক সরকার।

Memorial

১৯৮১ সালের ২১ জানুয়ারি মৌলালি ডেন্টাল কলেজের সামনে কংগ্রেসী গুন্ডাদের বোমায় শহীদ হন আবসা নেতা কমরেড প্রশান্ত পাল ও পথের হকার শ্রমজীবী নিমাই দাস। তাঁদের স্মরণ করে শহীদ দিবস পালন করা হয় মৌলালি ডেন্টাল কলেজের প্রবেশদ্বারের পাশে শহীদ বেদীর সামনে, হাওড়ার বালিতে, উত্তর ২৪ পরগণার বেলঘরিয়া ৪নং রেলগেটের সংলগ্ন এলাকায় এবং বারাসাত স্টেশনে।

শহীদ দিবসের আহ্বান, ক্যাম্পাস হোস্টেলে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই জোরদার কর।

Paddy collection

এরাজ্যে সরকারি উদ্যোগে ধান সংগ্রহের চিত্রটা ঠিক কেমন? কৃষকদের ঠিক কত শতাংশ সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেন আর কৃষকের নাম করে ফড়ে-ব্যবসাদাররাই বা (মিল মালিকেরা তো বটেই) কতটা মুনাফা পকেটস্থ করে — এসব নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। দুধ-জল মিশিয়ে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার কতটা সরকার পূরণ করতে পারে তারও হদিশ মেলা বেশ দুষ্কর। সামান্য খোঁজ খবর নিতে গিয়েই তো চক্ষু চড়কগাছ! গত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে (১২ ডিসেম্বর ২০২১) এক বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র থেকে জানা গেল, হুগলী জেলায় এবার (২০২১-২২ সংগ্রহ বর্ষে) ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৪ লক্ষ ২৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, আর ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৭ হাজার মেট্রিক টন। এভাবে চললে, গন্তব্যের অনেক আগেই না গাড়ি থেমে যায়! অবশ্য শুরুর এই জড়তা কাটিয়ে এখন ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিশ্চয় কিছুটা গতি সঞ্চার হয়েছে। জেলার অন্তত একটি ব্লকে অনুসন্ধান চালানোর পর, এর বাস্তব চেহারা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই প্রতিবেদনে হুগলী জেলার পান্ডুয়া ব্লকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ধান সংগ্রহের চিত্রটা তুলে ধরা হচ্ছে। তবে এর আগে, সরকারি উদ্যোগে ধান সংগ্রহের সাধারণ নিয়মবিধি ও প্রাথমিক বিষয়ে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া যেতে পারে।

সরকার কোনও বছরের অক্টোবর মাস থেকে পরের বছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করে। তবে অক্টোবর মাস তো বাংলা হিসেবে আশ্বিন মাস। তখন আমন ধান সবে পাকতে শুরু করে। কৃষক তার জমির ধান কেটে তা খামারে আনতে আনতে অঘ্রাণ মাস গড়িয়ে যায়। সোজা কথায় ধান সংগ্রহের কাজটা ব্যবহারিকভাবে শুরু হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। আর জোর কদমে কাজটা চলে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ অবধি। সে যাই হোক, একজন কৃষক সরকারকে সর্বোচ্চ ৭৫ বস্তা (৬০ কেজি) বা ৪৮ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারেন। এক একর পর্যন্ত জমির মালিক সরকারকে দিতে পারেন ৩০ বস্তা বা ১৮ কুইন্টাল ধান। সরকারের ঘোষিত এই নীতি বা নিয়ম কার্যক্ষেত্রে অনুসৃত হয় কিনা সেটা অন্য ব্যাপার। সরকার ধান সংগ্রহ করে – (১) খাদ্য দপ্তর অথবা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম (ইসিএসসি) কর্তৃক চালিত স্থায়ী শিবির (সিপিসি) মারফত, (২) ইসিএসসি বা বেনফেড চালিত অস্থায়ী শিবির (ডিপিসি) মারফত, (৩) স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে, (৪) সমবায় সমিতির মাধ্যমে এবং (৫) কৃষি উৎপাদক সংস্থা (এফপিও) মারফত।

গতবছর (২০২০-২১) পর্যন্ত পান্ডুয়া ব্লকে ধান সংগ্রহের স্থায়ী শিবির ছিল মাত্র একটি — পান্ডুয়া গঞ্জের ‘নিয়ন্ত্রিত বাজারে’। এবারে আরও একটি স্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে (রামেশ্বরপুরে)। বেনফেড চালিত একটি অস্থায়ী শিবির ধান কিনছে পাঁচগড়া-তোরগ্রাম পঞ্চায়েতের নপাড়ায়। কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবছর এখনও অবধি ধান কেনেনি, যদিও গতবছর মহিলাদের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী (জায়ের-দ্বারবাসিনী পঞ্চায়েতের দীঘা গ্রামে) দক্ষতার সঙ্গে প্রায় ২ হাজার কুইন্টাল ধান সংগ্রহ করেছিল। একটি সমবায় সমিতি (শিবনগর, সিমলাগড়-ভিটাসিন জিপি) ধান সংগ্রহ করছে। দুটি কৃষি উৎপাদক সংস্থা — ‘কৃষিবিপ্লব’ এবং ‘কল্পতরু’ও ধান সংগ্রহ করছে। ব্লকে গ্রামের সংখ্যা ১৫৮, আর এবছর স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে সরকারি দরে ধান সংগ্রহের কেন্দ্র — এখনও পর্যন্ত সাকুল্যে ৬টি। ব্লকে মোট ধানচাষির প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা খুব দুরূহ, তবে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত পান্ডুয়া ব্লকে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে আবেদন করেছেন ২৩,৯৩৩ জন। ধরে নেওয়া যায়, এরা প্রত্যেকেই ধান চাষ করে থাকেন। এদের মধ্যে অনেকে নিজেরা চাষ করেন না। ঠিকা চাষি বা ভাগচাষিরা তাঁদের জমি চাষ করেন। তবে ধান চাষির সংখ্যাটা অবশ্যই ২৫,০০০ ছাড়িয়ে যাবে, কেননা অনেক চাষি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি চাষ করলেও, মিউটেশন করাতে না পারায় জমির পর্চা হাতে পাননি এবং ‘কৃষক বন্ধু’র জন্য আবেদন করতে পারেননি।

এখন দেখা যাক, মোটামুটি ২৫,০০০ চাষির মধ্যে এবছর এখনও পর্যন্ত মোট কত চাষি সরকারকে ধান বেচতে পেরেছেন।

১) পান্ডুয়া নিয়ন্ত্রিত বাজারের স্থায়ী শিবির ১,৯৬১ জন কৃষকের থেকে ধান সংগ্রহ করেছে ৫৪,৬৪৩ কুইন্টাল।
২) রামেশ্বরপুরের স্থায়ী শিবির ৪০০ জন কৃষকের থেকে ধান সংগ্রহ করেছে ১১,০০০ কুইন্টাল।
৩) পাঁচগড়া-তোরগ্রাম অঞ্চলে বেনফেড ৬৪ জন কৃষকের থেকে কিনেছে ১,১০০ কুইন্টাল ধান।
৪) কল্পতরু (এফপিও) ১২৯ জন কৃষকের থেকে কিনেছে ৫,০০০ কুইন্টাল ধান।
৫) কৃষিবিপ্লব (এফপিও) ৭০ জন কৃষকের থেকে কিনেছে ৩,৫০০ কুইন্টাল ধান।
৬) শিবনগর সমবায় ৭০ জন কৃষকের থেকে কিনেছে ১,৭০০ কুইন্টাল ধান।

(যাবতীয় তথ্য ১৭ জানুয়ারি ২০২২ অবধি সংগৃহীত)

তাহলে হিসেব বলছে, এযাবৎ ২,৬৯৪ জন চাষির থেকে ধান কেনা হয়েছে এবং সংখ্যাটি হল ব্লকের মোট কৃষকের ১০.৭৭ শতাংশ মাত্র। সরকারি ধান সংগ্রহের পরিমাণ অবশ্যই গতবছরের তুলনায় কম। পান্ডুয়া নিয়ন্ত্রিত বাজারের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বলছেন, “এখনও পর্যন্ত এই কেন্দ্রে যে পরিমাণ ধান কেনা হয়েছে তা গতবছরের পরিমাণের অর্ধেক মাত্র। যদিও তখন একটিই সিপিসি ছিল। এবার আর একটি সিপিসি (রামেশ্বরপুর) থেকেও ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে।” রামেশ্বরপুরের সংগৃহীত ধানের পরিমাণকে ‘পান্ডুয়া নিয়ন্ত্রিত বাজারের’ কেনা ধানের সঙ্গে যোগ করলেও পরিমাণটা গতবছরের থেকে প্রায় ৩৯ শতাংশ নিচে।

Paddy collection a fragment

এবছর ধান কেনার পরিমাণ এমন কম হওয়ার একটা কারণ, ধানের বাজারদর গতবছরের তুলনায় এবার অনেকটা ভালো। বেশ কয়েকদিন ৯৬০ টাকা বস্তা দরেও ধান বিক্রি হয়েছে — যা গতবছরের তুলনায় ৫০-৬০ টাকা বেশি। সরকারকে ধান দেওয়ার ক্ষেত্রে চাষিকে বেশ কিছু ঝক্কি সামলাতে হয়। প্রথমত গ্রাম থেকে অনেক দূরে ক্রয়কেন্দ্র। সেখান থেকে টোকেন পাওয়া গেলেও, নির্দেশিত রাইসমিলে অন্তত ২০ দিনের আগে ওই ধান দেওয়া যাবে না। এর ওপর, সরকারি নিয়মে; আর্দ্রতার পরিমাণ অনুযায়ী কুইন্টাল প্রতি ৭ কেজি ধান বেশি দিতে হবে (আসলে মিল মালিক ৬০ কেজি বস্তার বদলে ৬৫-৬৬ কেজিও নিয়ে নেয়)। এছাড়া টাকা পাওয়ার জন্য আর একবার ক্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে। একজন চাষি তো সাফ বলে দিলেন, “সবদিক হিসেব করে দেখেছি, সরকারকে ধান দিলে বস্তা পিছু খুব জোর ১২০ টাকা বেশি পাওয়া যাবে। দু’তিন দিন দৌড়োদৌড়ির চেয়ে, ঘরে বসে সঙ্গে সঙ্গে নগদ যা পাওয়া যায় সেটাই ভালো।” এখানে উল্লেখ্য, চাষি ইচ্ছা করলে রাইস মিলের পরিবর্তে সিপিসি’তেও ধান সরবরাহ করতে পারেন। কিন্তু সিপিসি’তে ট্রাক্টরশুদ্ধ ওজন করার ব্যবস্থা না থাকার ফলে ধান ওজনের জন্য কৃষককে সারাদিন বসে থাকতে হয়। সেজন্য অনেকেই রাইস মিলে ধান দেওয়ার জন্য টোকেন নেন।

এবছর সরকারি ধান সংগ্রহের পরিমাণ কম হওয়ার আর একটা কারণ, এবার ধানের ফলন হয়েছে কম। একজন আদিবাসী বর্গাদার জানালেন, তিনি গতবছর সরকারকে (এফপিও) ১০০ বস্তা ধান বেচেছিলেন আর এবার বেচেছেন ৬৬ বস্তা। ফলন মার খাওয়ায় এবার তিনি সরকারকে কম ধান দিতে পেরেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওই বর্গাদার প্রত্যক্ষ সরকারি কেন্দ্রে ধান দিতে গিয়ে নাকাল হয়ে শেষে এফপিও’র দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি নিজেও এফপিও’টির শেয়ার হোল্ডার। এধরনের এফপিও ১৫০ থেকে ২০০ কৃষককে নিয়ে গঠিত অংশীদারী সংস্থা, যেখানে প্রত্যেক চাষি এককালীন এক হাজার টাকা দেন, সংস্থার অংশীদার হন এবং সংস্থার মূলধন গড়ে  ওঠে। এফপিও’টির পরিচালন পদ্ধতি মন্দ নয়। যে কারণে বর্গাদারটিকে কোথাও যেতে হয়নি। তার বাড়ি থেকেই এফপিও’র নিজস্ব গাড়ি এসে ধান বয়ে নিয়ে গেছে।

সংগ্রহ কেন্দ্রের অপ্রতুলতা, দিনের দিনই ধান সংগ্রহ না করে ‘লম্বা তারিখ দেওয়া’, আর্দ্রতার অজুহাতে বেশি ধান নেওয়া এবং সর্বোপরি নিজস্ব নামে জমির পর্চা না থাকায় অনেক চাষীই সরকারকে ধান দিতে পারেন না। তথাপি কিছু ক্ষুদ্র কৃষকও সরকারকে ধান দিতে পারছেন। কিন্তু সরকারকে ধান বেচার বেশিরভাগ ফায়দাটা নিচ্ছে কিছু ধুরন্ধর চাষি ও মধ্যসত্বভোগী। দু’একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হতে পারে। একজন কৃষক তাঁর জমির পরিমাণ অনুযায়ী যত বস্তার টোকেন পাওয়ার কথা তার থেকে বেশি বস্তার টোকেন ম্যানেজ করে নিলেন। এরপর নিজের গোলার ধানকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ না করে বাজার থেকে সস্তায় ধান কিনে সেই ধান সরকারকে বেচে দিয়ে বস্তাপিছু দুশো-সওয়া দুশো টাকা লাভ তুলে নিলেন। পরে ধানের বাজার চড়া হলে গোলায় সঞ্চিত ধান বিক্রি করে আবার বেশ কিছু টাকা কামালেন। এছাড়া ‘১০০ দিনের কাজের’ মতো ফড়েদের কারচুপি তো আছেই। ‘১০০ দিনের কাজ’ না করেও যেমন অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যায় এবং সুপারভাইজার বা শাসক দলের দাদা কমিশন পেয়ে যান, তেমনি ফড়ে বা ব্যবসাদার ‘বিশ্বস্ত’ চাষির পর্চা; আধারকার্ড ইত্যাদি দেখিয়ে সস্তায় কেনা ধান সরকারকে সাপ্লাই করে, আর চাষি কিছু কমিশনের বিনিময়ে ব্যবসাদারকে টাকা তুলে দেয়। এই মোটা দাগের দুর্নীতি মানুষের গা-সওয়া। তবে সরকার যখন দেখে, লক্ষ্যমাত্রার থেকে সংগ্রহের পরিমাণ অনেক কম তখন সব নিয়ম কানুন শিথিল হয়ে যায়। আগে একবার যিনি টোকেন পেয়েছিলেন, তিনি অবলীলায় পুনরায় টোকেন তুলে আনেন। আর বলা বাহুল্য, ততদিনে গরিবের ঘরে আর ধান নেই। ধান যাঁর গোলায় বাঁধা থাকে তিনিই বেশি ধান বিক্রির সুযোগটার ‘সদ্ব্যবহার’ করেন।  

- মুকুল কুমার

modern art and labor

সম্প্রতি কলকাতায় ‘স্যুইগি’র ডেলিভারি কর্মীরা কিলোমিটার প্রতি কমিশন বাড়ানোর দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন। গতবছর পুজোর সময়ে ‘আর্বান কোম্পানি’র বিউটিশিয়ানরাও বেশ কিছুদিন কর্মবিরতি করেছিলেন। নানা প্রশ্নে ক্যাব চালকদের আন্দোলনের কথাও আজকাল হরদম শোনা যায়। সব মিলিয়ে, যাদের আমরা ‘গিগ শ্রমিক’ বলি, তাদের আন্দোলন ও দাবি-দাওয়া ক্রমেই এদেশে ও সারা বিশ্বে এক জোরালো প্রবণতা হয়ে উঠছে।

অনুমান, ভারতে গিগ শ্রমিকদের বর্তমান সংখ্যা দেড় কোটিরও অধিক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত রাজনৈতিক-অর্থনীতির দ্রুত বিকাশে এই সংখ্যা অচিরেই বহুগুণ বর্ধিত হবে। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু গিগ শ্রমিকদের মধ্যে ট্রেড ইউনিয়নও গঠিত হয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে বিষয়টি শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিককে আলোকিত করতে চাইছে। বুঝতে হবে, অদূর ভবিষ্যতে এই গিগ শ্রমিকেরাই শ্রমবাহিনীর সংখ্যাধিক্য অংশ হয়ে উঠবে এবং এদের কেন্দ্র করেই হয়তো শ্রমিক আন্দোলনের নতুন উত্থান হতে পারে। এদের কাজকর্মের আঙ্গিক এমনই যে কাজের সর্বোচ্চ ঘন্টা, ন্যূনতম মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি যে অধিকারগুলি শ্রমিক আন্দোলন গত শতকে অর্জন করেছিল, তা আর তেমনভাবে প্রাসঙ্গিক থাকছে না। কাজের ধরনটাই হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এমন এক অ্যালগরিদম-নির্ভর ব্যবস্থাপনা যেখানে বেশি সময়ের কাজের ওপর বেশি আয়ের সম্ভাবনা নিহিত আছে। তদুপরি, এই বেশি সময় ধরে কাজের বোঝাটাও আপাতদৃষ্টিতে ‘কোম্পানি কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া’ নয়, বরং ব্যক্তি শ্রমিকের ‘স্বইচ্ছায় স্বতঃপ্রণোদিত’। গত ২০১৯ সালে জুলাই থেকে নভেম্বর জুড়ে ‘ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ অ্যাপ-বেসড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স’ (আইএফএটি) এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন’ (আইটিএফ) ভারতবর্ষের ছ’টি রাজ্যে ‘ওলা ও উবের’এ কর্মরত ড্রাইভারদের ওপর এক সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় প্রকাশ, ড্রাইভাররা প্রতিদিন গড়ে ১৬ থেকে ২০ ঘন্টা গাড়িতেই কাটান এবং ৮৯.৮ শতাংশ ড্রাইভার দৈনিক ৬ ঘন্টারও কম সময় ঘুমোতে পারেন। উপরন্তু, ৯৫.৩ শতাংশ ড্রাইভার জানিয়েছেন যে তাঁদের দুর্ঘটনা-জনিত অথবা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও ধরনের বীমার ব্যবস্থাই কোম্পানি করে না।

একই অবস্থা অন্যান্য অ্যাপ-বেসড (জোম্যাটো, স্যুইগি, আর্বান কোম্পানি প্রভৃতি) কর্মীদের ক্ষেত্রেও। যেহেতু এঁরা কোম্পানির পার্টনার হিসেবে কাজ করেন এবং ব্যক্তিগত স্তরে এঁদের নিজস্ব পরিকাঠামো থাকাটা বাঞ্ছনীয় (যেমন বাইক অথবা গাড়ি ও তার আনুষঙ্গিক খরচাপাতি), সেইহেতু অধিকাংশ সময়েই এই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে তাঁদের বাজার থেকে ঋণ করতে হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, গিগ শ্রমিকদের ৬৫.৭ শতাংশই এই ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে দ্বিতীয় ঋণের পথে পা বাড়ান, প্রথম ঋণটি শোধ করার জন্য। এইভাবে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়াও তাঁদের নিয়তি এবং অবস্থা বিশেষে ঋণ পরিশোধে মরীয়া হয়ে দৈনিক ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা কাজ করতেও (বিশেষত গভীর রাতে কারণ তখন ইনসেন্টিভের হার বেশি) তাঁদের বাধে না। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে প্রাথমিকভাবে বেরনোর জন্য আইএফএটি’র তরফে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিআইএল করে কর্মীদের কোম্পানির পার্টনারের বদলে কর্মচারীর স্বীকৃতির অধিকার চাওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ইউকে’তে গিগ শ্রমিকেরা কোম্পানির ‘শ্রমিক’এর মর্যাদা অর্জন করেছেন এবং সামাজিক সুরক্ষা লাভেরও অধিকারী হয়েছেন।

কিন্তু সমস্যাটা আরও গভীরে নিমজ্জিত। একদিকে সাবেক শিল্পগুলি উৎপাদনশীলতার দৌড়ে মজুরি খরচে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ও মুনাফার পড়তি হারের কারণে যখন ধীরে ধীরে অর্থনীতির মানচিত্র থেকে বিদায় নিচ্ছে, তখন স্বভাবতই নতুন যে ক্ষেত্রগুলির উদ্ভব হচ্ছে সেখানে উন্নততর প্রযুক্তির সহায়তায় মজুরি খরচ কমিয়ে কাজের যে রীতি বা আঙ্গিকটি নির্মিত হচ্ছে তা ভিন্নতর। যেভাবে আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের দুনিয়া অতিক্রম করে পা রেখেছি পরিষেবা শিল্পের বর্ধিত দুনিয়ায়, অথবা তার পরবর্তীকালে তথ্যপ্রযুক্তির জগতে এবং গত দু’দশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এক নবতর পরিসরে, সেখানে স্বাভাবিক যে চিরায়ত শিল্পের আধারটি আর বলবৎ থাকছে না। বরং, আগুয়ান ও দুরন্ত প্রযুক্তির অভিষেকে আমরা শিল্পের এমন এমন আঙ্গিক পাচ্ছি যা শ্রম সম্পর্কের পুরনো রীতিগুলিকে বদলে দিতে চাইছে। যেমন,

১) অফুরন্ত ডিজিটাল বিপ্লবের কারণে কাজের সুবাদে মানুষে মানুষে শারীরিক নৈকট্যের প্রয়োজন যেহেতু অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে, অতএব, দূরবর্তী প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত অ্যালগরিদমই এখন কাজের প্রধান চালক
হিসেবে আবির্ভূত।

২) পাশাপাশি, উপযোগিতার নানা ধরনের নতুন নতুন ক্ষেত্র উদ্ভবের ফলে এমন সব কাজের পরিসর তৈরি হয়েছে, যা আগে কখনও কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। যেমন, এই যে ঘরে-অফিসে খাবার কিংবা যে কোনও পণ্যের ডেলিভারির এক সর্বজনীন ব্যবস্থা বা উপযোগিতা আজ নতুনভাবে উদগত হওয়ায় একদিকে কাজের নতুন পরিসর নির্মিত হয়েছে, অন্যদিকে এই ডেলিভারি ব্যবস্থাপনাটাই এক নতুনতর শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। ভবিষ্যতে এই ডেলিভারির কাজ যখন সার্বিকভাবে ড্রোন-ব্যবস্থার হাতে চলে যাবে, তখন হয়তো এত কর্মীকুলের (ডেলিভারি বয়) আর কোনও প্রয়োজন থাকবে না। একইভাবে চালক-বিহীন গাড়ির সর্বজনীন প্রচলনে এত এত ড্রাইভার-কর্মীদেরও আর কোনও দরকার পড়বেনা। কিন্তু, এই সূত্রেই কর্মের হয়তো আবারও আপাত নতুন কোনও জগৎ তৈরি হবে যেখানে মনুষ্যশ্রমের চাহিদা বাড়বে।

৩) সার্বিকভাবে, গোটা বিশ্বেই শ্রমের বাজারে মনুষ্য নিয়োগের হার কমে আসবে। অন্যথায়, গড় মজুরি কমতে থাকবে। কোনও বিশেষ পরিস্থিতি বাদ দিলে, এই প্রবণতাই বরাবর বজায় থেকেছে। মাঝে দুটি বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংস ও ফলত নবনির্মাণের অভিঘাতে এই প্রবণতায় একটা ছেদ পড়েছিল।

আসলে, এইভাবেই প্রযুক্তির উদ্ভাবনের প্রেক্ষিতে বদলে যাচ্ছে কর্মের জগৎ ও শিল্পের আঙ্গিক। বলাই বাহুল্য, গত ৪০-৫০ বছরে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গতিতে এক অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এসেছে। বিশেষত গত শতকের ৯০’র দশকে তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়া ও ইন্টারনেটের যুগপৎ আবাহনে এক ব্যতিক্রমী গতিতে শিল্পের আঙ্গিক ও রাজনৈতিক-অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটে চলেছে। সেইসঙ্গে তৈরি হচ্ছে শ্রম সম্পর্কের নতুন ভূমি। এই যে কর্মরত অ্যাপ-বেসড কর্মীকুল এদের কোম্পানির পার্টনার থেকে কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি কি আদপে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের এক বড় জয় বলে মান্য হবে? মনে রাখতে হবে, অতীতে কারখানাভিত্তিক শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের যে অনুশীলন তা অনেক বেশি স্থিতিশীল ছিল; চালু কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে মালিকের লোকসান। কারণ, একটি ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প গড়ে তোলার খরচ ও সময় এতটাই দীর্ঘ ছিল যে এক শিল্প থেকে অপর শিল্পে স্থানান্তর বেশ কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া। এই আপেক্ষিক স্থায়িত্ব একটি চালু কারখানাকে শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেও রসদ জুগিয়েছিল এই অর্থে যে দীর্ঘদিন অবধি লড়াই চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার অবকাশ সেখানে ছিল। আজ সে দিন গিয়েছে। আজ পরিষেবা, তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল ভুবনের শিল্পসমূহ ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পকে ছাপিয়ে প্রধান সড়ক অধিকার করেছে, সমাজ-অর্থনীতিতে মূল্যপ্রাপ্তি ও মূল্যযোগেও অধিকাংশ জায়গা করায়ত্ত করেছে, ফলে অনস্বীকার্য যে, এই আধুনিক শিল্প-অর্থনীতি সময়ের গতিকে দাসানুদাসে পরিণত করেছে। পুঁজি ও কর্মপরিসর আজ এতটাই নমনীয় যে নিমেষের মধ্যে এক ক্ষেত্র থেকে আরেক ক্ষেত্রে যাতায়াত চোখের পলকের চেয়েও দ্রুততর। শ্রমিক আন্দোলনের সেই দীর্ঘস্থায়ী অবকাশও, অতএব, বিলুপ্ত। আজ পরিস্থিতি এমনই যে, কোনও কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক আন্দোলন দানা বাঁধতে না বাঁধতেই পুঁজি সেখান থেকে অপসৃত হচ্ছে, কাজ গুটিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপস-মীমাংসার জন্য শ্রমিক বা কর্মরতদের সঙ্গে যে আলাপ-আলোচনা চলছে না, তা নয়, কিন্তু ওই পর্যন্তই; বেশি দীর্ঘস্থায়ী হলেই পুঁজি পাততাড়ি গোটাতে তৎপর। বিপ্রতীপে, শ্রমিক বা কর্মীরাও পুঁজির নমনীয়তাকে অনুসরণ করে গড়ে উঠতে থাকা অন্যান্য কর্মজগতে (হয়তো কোনও স্টার্ট-আপ) বেশি সুবিধা, মজুরি, কমিশন ইত্যাদির টানে ধাবিত হচ্ছে। এই প্রবণতা ইদানিং বেশ শক্তিশালী, যা সারা বিশ্ব জুড়েই ‘গ্রেট রেজিগনেশন’ হিসেবে সুবিদিত হয়েছে, যেখানে দলে দলে কর্মীরা তাঁদের পুরনো কাজ ছেড়ে নতুন কোথাও যোগ দিচ্ছেন অথবা নিজেদের কোনও উদ্যোগ গড়ে তুলছেন।

world of modern art and labor

এই পরিপ্রেক্ষিতে ন্যূনতম মজুরি, সর্বোচ্চ কাজের ঘন্টা, সামাজিক সুরক্ষা — এইসব দাবিদাওয়ায় আজকের অ্যাপ-বেসড ও অন্যান্য আধুনিক কোম্পানিগুলি কতটা দায়বদ্ধ হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। কারণ, এইসব পুরোপুরি মানতে গেলে তাদের বাণিজ্য-রীতির অ্যালগরিদম’টাই যে বিফলে যাবে! হয়তো, চালু বাণিজ্যের স্বার্থে কিছুটা তারা আপস করবে কিন্তু সবটাই কখনও নয়। এমনিতেই দেখা যাচ্ছে, শিল্পের অন্যান্য শাখাগুলিতেও শ্রমিক আন্দোলন বেশ দুর্বল এবং কতকটা সমঝোতা করেই শ্রমিকদের দিন গুজরান হচ্ছে। তারমধ্যে কোভিড পরিস্থিতি গোটা বিষয়টাকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং ইতোমধ্যেই নীরবে-নির্জনে বহু শ্রমিকের কাজও চলে গেছে। এই সার্বিক দুরবস্থা যেহেতু এক সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করে, তাই, উদারবাদী সরকার ও রাষ্ট্রকে বাধ্যত কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়াতেও দেখা যাচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষার বিষয়গুলি ক্রমেই সরকারের দায়িত্বে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে সমাজের দুর্বল অংশগুলিকে ন্যূনতম আয় জোগানোর কাজটিও সরকারের ঘাড়ে এসে পড়ছে। আমাদের দেশের বহু রাজ্যে কৃষকদের ‘ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট’এ সরকারের তরফে অর্থ জমা পড়া তেমনই একটি উদ্যোগ; পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ ও ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’কেও তেমনই কোনও উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

মোদ্দা কথায়, শ্রম বাজার এখন দাঁড়িয়ে আছে এমন এক সন্ধিক্ষণের মুহূর্তে যেখানে ট্রেড ইউনিয়ন ধারণার সামনে কিছু জরুরি প্রশ্ন এসে হাজির হয়েছে। আধুনিক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকেরা পার্টনার থেকে শ্রমিকের অধিকার অর্জনের লড়াই চালাবে নাকি গিগ অর্থনীতির নমনীয়তায় সুযোগ পেলে অন্যত্র ভালো অফারে কাজে যোগ দিয়ে ‘গ্রেট রেজিগনেশন’এর নবতর প্রবণতাকে মজবুত করবে, তা এখন কোটি ডলারের প্রশ্ন। কিন্তু আজকের সময়ে এসে এটুকু অন্তত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের ভালো-মন্দ কোনওভাবেই আর সমাজ-সরকার-রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটমান বিষয় নয়, কারণ, দ্রুত পরিবর্তনের আবহে সমস্ত নাগরিকের ন্যূনতম আয় ও সামাজিক সুরক্ষার দায়িত্ব আজ রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। আন্দোলনের বর্শামুখকেও সেদিকপানে রাখাটা জরুরি। কারণ, পুঁজির বিনিয়োগ ও পলায়ন আজ এতটাই নমনীয় যে কতকটা ‘এই আছি এই নেই’এর ইতিবৃত্তে সামাজিক অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কার পারদ অতি উচ্চগ্রামে স্থির হয়ে গিয়েছে।

- অনিন্দ্য ভট্টাচার্য

Tapan Dighi and Atreyi river

সম্প্রতি ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন’এর পক্ষ থেকে রাজ‍্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দু’টি চিঠিতে দক্ষিণ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক তপন দীঘিকে পুনরুদ্ধার করা ও আত্রেয়ি নদীর অবিরল জলধারা রক্ষা করার আবেদন জানানো হয়েছে।

ঐতিহ্যশালী তপন দীঘি সংস্কার ও উন্নয়নের নামে ইট-কংক্রিটের পাঁচিল ও ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এরফলে দীঘির জলধারণ অঞ্চল চিরজীবনের জন্য সংকুচিত হচ্ছে। যেকোনো কংক্রিট জলজ জীব বৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকারক এবিষয়ে মহামান্য আদালত এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ জনসমক্ষে বর্তমান। সহস্র বছরের প্রাচীন তপন দীঘি পার্শ্ববর্তী অধিবাসী ও আদিবাসী মানুষের সংস্কৃতির যোগাযোগ এই জলাশয়ের সঙ্গে‌। উন্নয়নের অজুহাতে দীঘির সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা সমর্থন যোগ্য নয়‌। আবার দীর্ঘদিন ধরে দীঘি সংলগ্ন আদিবাসী অধ্যুষিত কাজিভাগ ও দ্বিনগর গ্রামের আদিবাসী কৃষকেরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচদপ্তর পরিচালিত পাম্পের মাধ্যমে এই দীঘি থেকে কৃষির জল পেয়ে থাকে‌। পাঁচিল দিয়ে দীঘি ঘিরে দেওয়ার ফলে বিগত তিনবছর ধরে সেই বৃষ্টির জলসেচের সুবন্দোবস্ত থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন যা ভারতীয় সংবিধানের ৪৬ নম্বর ধারা লংঘন করছে। এই বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে বাস্তুতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের সুবন্দোবস্ত ও প্রকৃতিকেন্দ্রিক সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে পাঁচিল দেওয়ার কাজ বন্ধ করতে হবে। এই বিষয়ে স্থানীয় অধিবাসীবৃন্দ এবং স্থানীয় সংগঠন ‘তপন দীঘি ও পরিবেশ সুরক্ষা সমিতি’র পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ইতিপূর্বেই একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে বলে জানান ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন’এর কর্মী তাপস দাস।

আত্রেয়ী নদীকে বাঁচানোর দাবিসম্বলিত চিঠিতে বলা হয়, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় আত্রেয়ী নদীর উপর দুই মিটার উঁচু একটি চেক-ড্যাম করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এটি একটি শুধুমাত্র অর্থ এবং শ্রমের অপচয়কারী পরিকল্পনা হবে। কারণ এই কথা বোঝা দরকার আত্রেয়ী কোনো সাধারণ ছোট নদী নয় যে অল্প কিছু জল কিছু সময়ের জন্য বয়ে নিয়ে চলে, আত্রেয়ী একটি অত্যন্ত জীবন্ত জীব বৈচিত্র্যেপূর্ণ পলি ও জল প্রবাহী নদী। এই নাতিদীর্ঘ বাঁধ নির্মাণের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁধের উজানের অংশ পলিতে ভরে যাবে। ফলে বাঁধ অকেজো হবে। ফলত নদীর জলধারণের ক্ষমতা আরও হ্রাস পাবে। উত্তরবঙ্গে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যার প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে এবং ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত আত্রেয়ী নদীর স্বাভাবিক গতি ও জীববৈচিত্র্য এবং নদী নির্ভর জনজীবনকে ভবিষ্যতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। সেই কারণে নদী বাঁচিয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে অবিলম্বে এই পরিকল্পনা বাতিল হোক।

‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও’ আন্দোলনের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে সাধারণের বা সর্বজনীন প্রাকৃতিক সম্পত্তিকে সাধারণ জ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করার সময় এসেছে। জীবনের সমস্ত কিছুকে অর্থ আর উন্নয়নের গতি দিয়ে বিচার করলে “আমাদের প্রিয় বসুন্ধরার জন্য, আমাদের জন্য, জীব বৈচিত্র্যের জন্য বিপদ ডেকে আনা হবে”। এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রসংঘ ঘোষণা করেছে যে আগামী একদশক বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের দশক। পুকুর, জঙ্গল, মরুভূমি, পাহাড়, নদী-খাল, ইত্যাদি সবই এক একটি বাস্তুতন্ত্র। এগুলোকে পুনরুদ্ধার করা বিশ্ব জুড়ে একান্ত জরুরি।

Manoranjan Biswas
Manoranjan Biswas passed away

নাট্যকার মনোরঞ্জন বিশ্বাসের জন্ম ১৯২৪ সালে পূর্ব বাংলার দর্শনায়। প্রয়াণ ২১ জানুয়ারি ২০২২। স্কুল পাশ করেন পশ্চিমবাংলার ‘রানাঘাট লালগোপাল পাল হাইস্কুল’ থেকে। তারপরে সেকালের রিপন, অধুনা সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ও কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে স্নাতক হন। স্নাতক হয়েই সংসার সংগ্রামে নেমে পড়তে হয়। জীবিকার জন্য ছিলেন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কর্মী। কিন্তু সে যদি পেশা হয়, আজীবন কলাচর্চা ছিল ধ্যানজ্ঞান।

কলেজের ছাত্র থাকাকালীন নাটক রচনার সূত্রপাত। প্রথম নাটক কর্মখালি। নাটক লিখেই প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন প্রখ্যাত নাট্য সমালোচক সাধন ভট্টাচার্য ও অজিতকুমার ঘোষের। নাট্যরচনা তো ছিলই, তারসঙ্গে চিত্রকলা ও সঙ্গীত সাধনা ছিল সঙ্গী। পাশাপাশি বাম মতাদর্শের রাজনীতি, কৃষক আন্দোলন, সেইসূত্রে জেলখাটা।

ভিতরের বামপন্থী দর্শন আর শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতায় নেমেছিলেন কৃষকের সঙ্গে মাঠে, আন্দোলনে, জমি ও ধানের লড়াইয়ে। সেই লড়াইকে তিনি মাঠ থেকে পৌঁছে দিলেন মঞ্চে। মঞ্চ থেকে মানুষের মধ্যে। একই সঙ্গে রাজনীতি, আন্দোলন ও সংস্কৃতিচর্চা। পটভূমি হল রাজারহাট থানা ও বাগুইআটি অঞ্চল। ‘চলতিবাসর’ সংস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শুরু হল সংস্কৃতি-যাত্রা। সময়টা পাঁচের দশকের গোড়ার কথা। হলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ধরলেন কলম। শুরু হল একের পর এক নাটক রচনা। একে একে লিখলেন — আমার মাটি, আবাদ, ঝড়ের কাছাকাছি, পদাতিক, রণক্ষেত্রে আছি, সারা আকাশ লাল, কমিউনার্ড, নিষিদ্ধ ভাত নিষিদ্ধ অস্ত্র, সব যুদ্ধ থেমে গেলে, সাদা অন্ধকার, দাদন, আসন্ন যুদ্ধের সামনে, ভাসান, জননী, ভাঙা কাস্তের গান, বেঁচে থাকার দরজা, প্রতিদিন মে দিবস, একমাত্র অস্ত্র, খাস দখল, কাছেই সমুদ্র, লাল নীল মাছ-এর মতো প্রায় অর্ধশতাধিক মঞ্চ ও শ্রুতি নাটক। মনোরঞ্জন বিশ্বাস বাংলা নাট্যসাহিত্যের এক নিভৃত সেবক। বড়ো নিভৃতচারী শিল্পী। বড়ো অভিমানী তাঁর হৃদয়। মতাদর্শের সামান্যতম ক্ষয় দেখলেই তিনি সরে আসতেন নিজের মনের কাছে। একাকীত্বে। নাটক রচনার পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসও লিখেছেন। তবে মনে প্রাণে তিনি নাটকের কাছে যেন দায়বদ্ধ। করেছিলেন সম্পাদকের কাজও। নন্দন সাহিত্য পত্রিকার আত্মপ্রকাশ পর্বের সম্পাদক। কিন্তু আদর্শের সঙ্গে কোনো আপস না করার কারণে আদর্শের দ্বন্দ্বে বারে বারে নতুন নতুন পত্রিকায় করেছেন আত্মপ্রকাশ। কার্টেন, চারণ, সপর্য্যা, পূর্বদেশ, সবশেষে আরণিক — একের পর এক পত্রিকা বেরিয়েছে তাঁর হাত দিয়ে। তবু শতাব্দী ছুঁই ছুঁই মানুষটির চিন্তায় ও কলমে সময়ের ক্লান্তি কোন জং ধরাতে পারেনি।

গত অক্টোবরে বেরিয়েছিল আরণিকের আপাত বর্তমান সংখ্যা। স্বপ্ন ছিল ধর্ম-দর্শন ও রাজনীতি নিয়ে আরণিকের পরের সংখ্যা করা। স্বপ্নের লাটাইটা আমাদের হাতে দিয়ে চলে গেলেন।

Painter Wasim Kapoor
Painter Wasim Kapoor has passed away

হঠাৎই প্রয়াত হলেন চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ২৪ জানুয়ারি ২০২২ কলকাতার বাড়িতেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে প্রয়াত হন তিনি। শিল্পীর জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৫১, লক্ষ্নৌতে। লক্ষ্নৌয়ে জন্ম হলেও কলকাতা ছিল শিল্পীর কর্মভূমি। একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, নিজের ছবির মাধ্যমে মানুষের গভীর আবেগের কথা ফুটিয়ে তোলাই তাঁর ছবি আঁকার উদ্দেশ্য। বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরও ছবি এঁকেছিলেন তিনি। যত সময় গিয়েছে, কলকাতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছেন ওয়াসিম। প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটের একটি ছিমছাম বাড়িতেই থাকতেন শেষদিন পর্যন্ত। বাংলার শিল্পীমহলে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। শৈশবকাল আর পাঁচটা শিশুর মতো কাটেনি ওয়াসিম কাপুরের। মাত্র ৬ মাস বয়সে খাট থেকে পড়ে চোট পান তিনি, এরপর বারো বছর বিছানাতেই দিন কেটেছে। জানালা দিয়ে শুয়ে শুয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতেন, মনের খাতায় সেগুলো প্রথমে ফ্রেমবন্দী করতেন, তারপর সেগুলো খাতায় আঁকতেন। ছেলের এই ঝোঁক দেখে বাড়িতে আঁকার শিক্ষক রাখেন ওয়াসিম কাপুরের বাবা। সেই শুরু। শৈশবের শিক্ষক অমর নন্দনই তাঁকে ভর্তি করান আর্ট কলেজে, সেই প্রথম বাইরের জগতের সঙ্গে সরাসরি পরিচয়। ক্রাচে ভর দিয়ে কলেজ যেতেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনও দিন তাঁর ভাবনায় দেওয়াল তুলতে পারেনি। তাঁর স্বপ্নের ক্যানভাস ডানা মেলে উড়ত। এরপর দেবী প্রসাদ চৌধুরী, অতুল বসু, যামিনী রায়, মকবুল ফিদা হুসেন, পরিতোষ সেনদের মতো নামীদামী শিল্পীদের সান্নিধ্যলাভ করেন। কলেজের প্রথমবর্ষেই তাঁর আঁকা ছবি জায়গা করে নিয়েছিল প্রদর্শনীতে। এরপর দেশে-বিদেশে শুরু হয় তাঁর চিত্র প্রদর্শনী, সর্বত্রই সমাদৃত ওয়াসিম কাপুরের ভাবনা। ভারতের সংসদ ভবন, উর্দু অ্যাকাডেমি, ললিতকলা অ্যাকাডেমি সর্বত্র রয়েছে তাঁর আঁকা ছবি। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া বাংলার শিল্পী ও অনুরাগী মহলে।

Anup Mukherjee
Late poet and folk music artist Anup Mukherjee

শিল্পী অনুপ মুখোপাধ্যায় কোভিড আক্রান্ত হয়ে বাঙ্গুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০ জানুয়ারি ২০২২ তিনি প্রয়াত হয়েছেন।

২৫ মে ১৯৫২ কবি ও গণসঙ্গীত শিল্পী অনুপ মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায়। নার্সারি থেকে ক্লাস ফাইভে পড়েছেন দেশপ্রিয় পার্কের কাছে সেন্ট মেরীস্ কারমেল স্কুলে। এরপর কলকাতার চেতলা বয়েজ স্কুল থেকে পাশ করার পর নিউআলিপুর কলেজে কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে পড়েছেন।

অনুপ মুখোপাধ্যায়ের কর্মজীবন শুরু হয় ইণ্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের চাকরি দিয়ে ১৯৭৭ সালে। ওই ব্যাঙ্ক থেকেই তিনি ২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিল্পী ও গণসঙ্গীতকার। নিজের গান ছাড়াও অন্য কবির একাধিক লেখায় তিনি সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কবি দিনেশ দাস, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, কবি সমীর রায়, কবি রঞ্জিত গুপ্ত, কবি কর্ণ সেন প্রমুখ।

কবি নিয়মিত ফেসবুকে তাঁর কবিতা ও গান প্রকাশ করতেন।

সত্তর দশক থেকে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘ফুটবল’ (১৯৮৩), ‘এখন অন্ধকার’ (১৯৮৪), ‘খয়েরী ডায়েরী’ (১৯৮৭), ‘কোমল রেখাব’ (১৯৯৮), ‘সত্য’ (২০০৯)।

১৯৮৮ সালে ইনরেকো থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর নিজের সুরে, ভি বালসারার সঙ্গীতায়োজনে, তাঁরই গাওয়া নির্বাচিত গণসঙ্গীতের ক্যাসেট ‘কঁকিয়ে ওঠা কান্নাগুলো ভুলিয়ে দাও’। অন্যান্য কবিদের সঙ্গে তাঁর নিজের লেখা দুটি গানও ছিল এই ক্যাসেটে।

Ranjit Gupta

কবি রঞ্জিত গুপ্ত ২৬ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে পাটনায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা ছিলেন সত্যেন্দ্র কুমার গুপ্ত, মা মমতা গুপ্ত। কবি রঞ্জিত প্রয়াত হলেন ২২ জানুয়ারি ২০২২। তিনি যাদবপুর হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন, আশুতোষ কলেজ থেকে স্নাতক হন। পেশা হিসাবে গৃহশিক্ষকতাকে বেছে নেন। ২০ বছর বয়স থেকে বন্ধু সত্যেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর কবিতার মূল বিষয় ছিল সামাজিক সমস্যা ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রাম। এছাড়া তিনি প্রেম, প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবি বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন ও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।

কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নিষিদ্ধ বৃক্ষ’, দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ভিন্ন আকাশ’, তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মাটির লবন’ এবং ৪র্থ কাব্যগ্রন্থ ‘মায়াবী তন্তুজ’।  একলব্য, অনুষ্টুপ, অনীক, ডুলুং প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় কবির অনেক কবিতার সমালোচনা ও প্রশংসা বেরিয়েছিল। বীরেন্দ্র পুরস্কার পান ২০০০ সালে তাঁর ‘মায়াবী তন্তুজ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। তিনি স্পন্দন পত্রিকায় ১৯৭৫ সালে প্রগতিশীল বাংলা কবিতার অবস্থা সম্পর্কে একটি বিতর্কমূলক রচনার সূত্রপাত করেন এবং দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই বিতর্ক চলে। বিতর্কে পাঠক যেমন ছিলেন, তেমনি অংশগ্রহণ করেন সাগর চক্রবর্তী, সমীর রায়, অমিত দাস, পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যেন বন্দোপাধ্যায়, প্রমুখেরা।

আলোচনার বিষয় ছিল কবিতা লেখার ক্ষেত্রে, সমস্যার কথা বলে, শেষে সমস্যার সমাধানে যথার্থ ব্যবস্থা পাল্টানোর কথা বলা — এটা আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাধানের কথা অবশ্যই বলতে হবে তবে কোনো মতেই যান্ত্রিক হলে চলবে না। অথচ বরাবর এটা ঘটছে। এই আত্মসমালোচনা থেকে স্পষ্টতই প্রমাণ হয় যে সমাজসচেতন কবিকুল বিপ্লবী বিষয়বস্তুর উপস্থাপনার পাশাপাশি কবিতার শিল্পরূপ বিষয়েও প্রশ্নপরায়ণ ছিলেন।

Farewell poet Ranjit Gupta

শুধু পটে লিখা

- রঞ্জিত গুপ্ত

দিবসগুলি পালিত হয়
শপথগুলি নয়
নকল বুঁদির কেল্লা গড়ে
নকল শত্রু জয়

দিবস তুমি শুধুই ছবি
শুধু পটে লিখা
শপথগুলি হাওয়ায় হারায়
বিলীন জয়টিকা

বারোমাসে তেরো পার্বণ
তবুও বাংলাদেশ
বারোমাস্যার দুঃখিনী তুই
কেঁদে ভেজাস কেশ।
১৯৭৮

Mourning news

গত ১৯ জানুয়ারি ২০২২ বীরভূম জেলার রামপুরহাটের ১৫নং ওয়ার্ডের সিপিআই(এমএল) সদস্য সুখেন কুমার ভট্টাচার্য হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি একজন ব্যাংক কর্মচারী ছিলেন। ছিলেন দীর্ঘদিন পার্টির সদস্য। তিনি দুই পুত্র, পুত্রবধু ও নাতি-নাতনী রেখে গিয়েছেন। পার্টির বীরভূম জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এই কমরেডের মৃত্যুতে শোকঞ্জাপন করা হয়েছে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ও শুভানুধ্যায়ীদের সমবেদনা জানাচ্ছে।

কমরেড সুখেন ভট্টাচার্য লালসেলাম।

উড়িষ্যার ধিনকিয়ায় জমি গ্রাসের বিরুদ্ধে জনআন্দোলনের ওপর নবীন পট্টনায়েক সরকারের পুলিশী আক্রমণের

Repression On Protest Against Jindal Land Grab

 

খণ্ড-29
সংখ্যা-4