বিবৃতি
গ্রাম বাংলার কৃষক ও গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জরুরি দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি
ddd

মাননীয়া,
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,
মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

মহাশয়া,

করোনা লকডাউনের পরিস্থিতিতে রাজ্যের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের চরম অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। লকডাউন শুরু হওয়ার পর অন্তত ১২-১৫ দিন কৃষি পণ্যের কোনোরকম পরিবহন ব্যবস্থা ছিলো না। বিকল্প ব্যবস্থা না করেই গ্রামীণ হাটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষকরা নামমাত্র দামে বিপুল লোকসানে ফসল বিক্রি করেছে। অথচ শহর ও গঞ্জে সেই ফসলই বিক্রি হয়েছে ৪-৬ গুণ বেশি দামে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চাষীরা রাস্তায় ফসল ফেলে দিয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরি। সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে বোরো ধান, সব্জি, ফল, ফুল, ভুট্টা, গম, পানচাষ, দুধ সরবরাহ, উদ্যান পালন প্রভৃতি ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত কৃষিজীবী মানুষেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শস্যবীমার আওতায় থাকুক বা না থাকুক এই সমস্ত কৃষি উৎপাদকদের, বিশেষত ভাগ-চুক্তি চাষীদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণের দাবি আজ গ্রাম বাংলা থেকে উঠে আসছে। বর্তমানে বোরো ধান কাটার কাজ শুরু হয়েছে বা কিছু জায়গায় শুরু হতে চলেছে। এই ধান কাটার সাথে ১০০ দিনের কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের কাজকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ইতিমধ্যে আপনি বলেছেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করা একান্ত প্রয়োজন। লকডাউনে কর্মহীন গ্রামীণ শ্রমজীবীরা রেশনে স্বল্প পরিমান খাদ্যদ্রব্য পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এদের স্বার্থে অবিলম্বে কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প চালু করতে পঞ্চায়েত দপ্তরের যুদ্ধকালীন তৎপর ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি। ভিন্ন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা অনেকেই গ্রামে ফিরে আসছে। আমাদেরই ভাই-বন্ধু-স্বজন এই মেহনতি মানুষদের আমরা স্বাগত জানাই। এদের শ্রমে গ্রামাঞ্চলের কৃষি পরিকাঠামোর প্রভূত উন্নয়ন করা সম্ভব। গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষিনির্ভর ব্যাপক মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে আশাকরি এই পদক্ষেপগুলি আপনি গ্রহণ করবেন। অন্নদাতা কৃৃষক ও গ্রামীণ শ্রমজীবীরা যাতে নতুন করে ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য না হন সেই লক্ষ্যে আপনি যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন, এই আবেদন জানাচ্ছি। করোনাকে কাজে লাগিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এর বিরুদ্ধে আমরা কড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের আবেদন আপনি এই বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের কৃষক সংগঠনগুলির সাথে আলোচনার জন্য সাক্ষাতের সময় দেবেন অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনার ব্যবস্থা করবেন।

আমাদের দাবি --

)  করোনা লকডাউনের ফলে এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ধান, সব্জি, ফল, ফুল, ভুট্টা, গম, পানচাষ, দুধ উৎপাদন ও সরবরাহ, উদ্যান পালন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত কৃষিজীবী মানুষদের  উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভাগ-চুক্তি চাষিরাও যাতে এই ক্ষতিপূরণ পায় তার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।

২)  কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে সার, বীজ, বিদ্যুৎ ও ডিজেল সরবরাহ করতে হবে।

৩)  গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারী দরে সমস্ত রকম ফসল কিনতে হবে, ধান কেনায় রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত বোনাস দিতে হবে।

৪)  কাজ না পাওয়ার কারণে ভর্তুকি বাবদ প্রতিটি জবকার্ডে ১০ হাজার টাকা জমা করতে হবে। অবিলম্বে কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পর কাজ চালু করতে হবে। ধান কাটা সহ কৃষিকাজকে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, জেসিপি ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।

৫)  রেশনে সমস্ত গ্রামীণ গরিব মানুষদের মাথাপিছু ১৫ কেজি চাল/গম, ডাল, ভোজ্য তেল, আলু ও মশলা সরবরাহ করতে হবে।

৬)  কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনে করে এরাজ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিটি পরিযায়ী শ্রমিককে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭)  করোনা মোকাবিলা ও গ্রামীণ চিকিৎসার উন্নতির জন্য জেলা ও ব্লকস্তরে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি জেলায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।

ধন্যবাদান্তে,
সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি (এআইকেএসসিসি)
পশ্চিমবঙ্গ শাখার অন্তর্ভুক্ত ২১টি কৃষক সংগঠনের পক্ষে

অমল হালদার (আহ্বায়ক)

কার্তিক পাল (সাংগঠনিক সম্পাদক)

খণ্ড-27