করোনা-যোদ্ধা আশা কর্মীদের উপর নিগ্রহ কবে বন্ধ হবে?
asa

ভারতবর্ষে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যত বাড়ছে তত বেশি বেশি করে চ্যালেঞ্জের সুন্মুখীন হচ্ছেন স্বাস্থ্যপরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষেরা। ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ক্লিনার, গ্রামে গ্রামে আশা কর্মীরা প্রত্যেকদিন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা যুদ্ধে সামিল হচ্ছেন। সংক্রমণের শুরু থেকেই সবার জন্য মাস্ক, গাউন, গ্লাভস এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের (পিপিই) অভাব এবং কোভিড-১৯ টেস্টিং সরঞ্জাম ও শ্বাসযন্ত্রের মেশিনের (ভেন্টিলেটর) অপ্রতুলতা নিয়ে দেশ জুড়েই স্বাস্থ্যপরিষেবার সাথে যুক্ত ব্যাক্তিরা সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের নিরাপত্তার কথা সরকার কতটুকুই বা ভাবছেন? উপরন্তু মাস্ক, পিপিই নিয়ে অভিযোগ জানানোয় ডাক্তার সুধাকর রাওকে বিশাখাপটনাম শহরের পুলিশ মারধোর করে মানসিক রোগি প্রমাণ করার চেষ্টায় জোর করে মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে।

করোনা এবং তার সংক্রমণ নিয়ে উপযুক্ত শিক্ষা এবং সচেতনতার অভাব এবং সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো প্রচারের ফলে মানুষের মনে অন্য মানুষের প্রতি নানা সন্দেহ ও অস্পৃশ্যতার মনোভাব দেখা দিচ্ছে। আর এর শিকার হচ্ছেন যেমন গরিব মানুষেরা তেমনি নানা জায়গায় আক্রান্ত হচ্ছেন স্বাস্থ্যপরিষেবার সাথে যুক্ত ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মীরা। নাগপুরের আশা কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে সমীক্ষা ও দেখাশোনার সময় ক্রুদ্ধ জনতা তাদের উদ্দেশে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে।

asha

 

এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফিরছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা। প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গ্রামের দিকে আশা কর্মীদের অঞ্চলে অঞ্চলে গিয়ে সেই সেন্টারগুলি পরিদর্শন এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু সেই কাজে প্রায়ই নানারকম অপমান ও হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে আশা কর্মীদের। হাওড়ার পাঁচলা থানার অন্তর্গত দেউলপুরগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্লক প্রশাসন থেকে কুশডাঙা গ্রামের গার্লস প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করে আগত শ্রমিকদের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। গত ২৯ মে সেই সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিদর্শনে যান কুশডাঙা সাব-সেন্টারে কর্মরত আশা কর্মী মিঠু দাস সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্মী ও অন্যান্য স্বাস্থকর্মীরা। তখন সেইখানের স্থানীয় বাসিন্দারা কেন ওই অঞ্চলে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছে বলে বচসা শুরু করেন এবং মিঠু দাস ও দু’জন এএনএম (অক্সিলিয়ারি নার্সিং মিডওয়াই) কর্মীর উপর হামলা করেন, তাদের প্রচণ্ডভাবে শারীরিক হেনস্থা ও অত্যাচার করা হয়। এটা শুধু একটা ঘটনা নয় সমগ্র হাওড়া জুড়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এরকম নানা হামলার খবর আসছে। আশা কর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তাই হাওড়ার পাঁচলা ব্লকের আশা কর্মীরা পয়লা জুন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে একটি ডেপুটেশন জমা দেন। ডেপুটেশনে বলা হয় মিঠু দাস ও এএনএম কর্মীদের উপর যারা শারীরিক হেনস্থা করেছে তাদের অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় ব্লকের সমস্ত আশা কর্মীরা কাজে আসা বন্ধ করে দেবেন। কুশডাঙা গ্রামে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় বলে তারা জানিয়েছেন। প্রয়োজনে দেউলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শ্রমিকদের পরিষেবা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। সমগ্র পাঁচলা ব্লক জুড়ে আশা কর্মী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং যারা তাদের উপর আক্রমণ করছেন তাদের শাস্তি দিতে হবে। উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি কাজে যাতায়াতের জন্য আশা কর্মীদের গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় না। এই ডেপুটেশনে আশা কর্মীরা দাবি রেখেছেন সরকারি কাজে পাঠালে তাদের গাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে করতে হবে এবং করোনা ভাইরাসের সাথে এই যুদ্ধে সবার আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুস্থ্ থাকা প্রয়োজন। তাই গ্রামে গ্রামে আশা কর্মীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এই ডেপুটেশন গ্রহণ করেন এবং মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাঁচলা ব্লকের আশা কর্মিরা আপাতত ২রা এবং ৩রা জুন কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন, তাদের দাবি মানা না হলে পরবর্তীকালে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

-- মিতালি বিশ্বাস 

খণ্ড-27