আবেদন
সামাজিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখুন – পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক খেলা
H1

কোভিড-১৯ সংক্রমণ আটকাতে অবিবেচনাপ্রসূত ও অপরিকল্পিত লকডাউন ঘোষণার ফলে ১২ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিবারবর্গের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কাজ হারা এই শ্রমিক ও তাদের পরিবার পরিজন যখন চরম আর্থিক দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছে, তখন তাদের পাশে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি কোনো সরকার। কেন্দ্রের সরকার রাজ্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে, রাজ্যের সরকার “ওরা আমাদের কেউ নয়” বলে দায় এড়িয়ে ছিল। এমনকি তাঁরা যাতে নিজের নিজের রাজ্যে ফিরতে না পারে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে যোগসাজশে পুঁজিপতি ও নিয়োগ কর্তারা আটকে রাখার চেষ্টা চালায়। দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও আন্দোলনের পর পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে, ইতিমধ্যে কত শ্রমিক ও তাদের সন্তান-সন্ততির প্রাণ চলে গেছে, ইতিহাস তার সাক্ষী থাকল।

আমাদের রাজ্যের ১২ থেকে ১৩ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের মানুষেরা ঘরে ফিরবেন, আজ না হোক কাল এ তথ্যও সকলের জানা। আড়াই-তিন মাস ধরে রাজ্য জুড়ে এ নিয়ে চর্চা চলছে। যেহেতু এই শ্রমিকদের অধিকাংশই কোভিড-১৯ সংক্রমণের শীর্ষে থাকা রাজ্যগুলি যথা মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, দিল্লি, তামিলনাড়ু থেকেই আসবেন, ফলে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দীর্ঘপথে একটু খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, সংক্রমণ এড়াবার জন্য শারীরিক দূরত্ব ও মাস্কের ন্যূনতম ব্যবস্থা করা যায় তা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আগেই দায় ঝেড়ে ফেলেছে, চেষ্টা করেছিল ট্রেন ভাড়াটাও আদায় করে নেওয়ার।

আড়াই-তিন মাস সময় পেয়েও রাজ্য সরকারও কোনো ব্যবস্থা প্রস্তুত করেনি। কত ভিডিও কনফারেন্স, কত চিঠিপত্রের আদান প্রদান, জল একবিন্দু এগোয়নি। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন খেলা শুরু হয়েছে। রাজ্যের সরকারগুলির সাথে বিন্দুমাত্র আলাপ আলোচনা ও পরিকল্পনা না করে ট্রেনে পরিযায়ীদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

road

 

ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে, সরকারী কোয়ারাইন্টিন ব্যবস্থাকে লাটে তুলে দিয়ে পরিযায়ীরা ঘরে ফিরছেন। যার ঘর আমপান বিধ্বংসী ঝড়ে উড়ে চলে গেছে, তিনি কোথায় নিভৃতবাসে থাকবেন তা কেউ জানে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এরফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা যেমন করছেন, গ্রাম-শহরে জনগণের মধ্যে বিবাদ তৈরির খেলায় নেমেছে স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন শক্তি। একে কী করে বৈরী দ্বন্দ্বে পরিণত করা যায় তারও চেষ্টা চলছে, চলবে।

আমরা রাজ্যের বিবেকবান, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল জনগণের কাছে আবেদন জানাই, আসুন আমরা চরম সংকটগ্রস্ত বাংলায় কোনো বিভেদকামী শক্তি যাতে এ সুযোগ না পায়, তার জন্য সচেষ্ট হই। রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় পরিযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও জীবন-জীবিকার দায়িত্ব পালনের নীতি ও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে হবে।

ধন্যবাদান্তে
পার্থ ঘোষ
রাজ্য সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি, সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন

খণ্ড-27