আদিবাসীদের জন্য ‘সারনা’ স্বীকৃতি ঝাড়খণ্ড বিধানসভায়
add

স্বাধীনতার এত বছর পরেও ভারতের মূল নিবাসীদের নিজ ধর্মবিশ্বাসের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা মেলেনি! ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ গল্পকাররাই বারংবার হুমকি দিচ্ছে আদিবাসীদের আত্ম জাতির পরিচয় কেড়ে নেওয়ার।

ভারতের জনগণনায় ছটি ধর্মছাড়া আর কোন ধর্মবিশ্বাসকে স্বীকৃতি বা মর্যাদা দেওয়া হয় না। তাই আশির দশক থেকেই ভারতের প্রায় সব রাজ্যের আদিবাসীরা নিজের জাতির আত্মপরিচয়ের জন্য লড়ছেন।

২০১১-র আদমশুমারি অনুসারে গোটা দেশে ৫০ লক্ষ আদিবাসী তাদের ধর্মহিসেবে ‘সারনা’ নথিভূক্ত করে।

সারনা ধর্মের অনুগামীরা প্রকৃতিতে বিশ্বাসী, তারা জল-জঙ্গল-জমিনকে নিজের ঈশ্বর মনে করেন, বনাঞ্চল রক্ষা করাই তাদের কাছে পবিত্রতা। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই আদিবাসীদের এই বিশ্বাস পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় মুনাফার লোভে বনাঞ্চল কেটে কারখানা বানানো পুঁজিপতিদের। তাদের তাঁবেদাররা চাইবে এই বিশ্বাসকে মুছে ফেলতে। তাই আরএসএস উঠে পড়ে লেগেছে আদিবাসীদের হিন্দুতে কনভার্ট করার জন্য!

দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফলে ঝাড়খন্ড বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে ‘সারনা আদিবাসী ধর্মকোড’ প্রস্তাব পাশ হলো। “আদিবাসীরা হিন্দুনয়” বললেন ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। এই প্রস্তাবের বৃহত্তম দাবী হল ২০২১ সালের আদমশুমারির সময় আদিবাসীদের ধর্মের কলামে ‘হিন্দু’র পরিবর্তে পৃথক ধর্মের কোড লেখার বিকল্প দেওয়া। ঝাড়খন্ড বিধানসভায় আনা এই বিলে সারনা ধর্মের কোডের দাবি করা হয়েছে।

জনগণনায় আদিবাসীদের জন্য আলাদা কলাম রাখার দাবিতে ১৮ জানুয়ারী দিল্লিতে সংসদের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ভারতের ১টি রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁরা দাবি তোলেন হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। জোর করে হিন্দুহিসেবে নথিভূক্ত করানোর ফলে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাই তাঁরা পথে নেমেছেন।

অথচ আদিবাসীদের এই দাবিকে অগ্রাহ্য করে আরএসএস এক সুরে বলে যাচ্ছে তারা আদিবাসীদের হিন্দু হিসেবেই নথিভুক্ত করাবে! তাদের মধ্যে হিন্দুত্ববাদের প্রচার করবে।

দেশজুড়ে যখন নাগরিকত্ব হননকারী আইনগুলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে তখন আদিবাসী সমাজের মানুষও ধরতে পেরেছে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত, তাইতো তাঁরা ছত্রিশগড় ঝাড়খন্ড সহ সমস্ত আদিবাসী প্রধান অঞ্চলে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। এই আন্দোলনকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করতেই ভোপালে আরএসএসের কো-অর্ডিনেশন মিটিং সংগঠিত হয়। এই মিটিংয়ে মোহন ভাগবত বলেন আদিবাসীদের মধ্যে হিন্দুত্বের প্রচার করতে হবে, পাশাপাশি তাদের মধ্যে এনপিআর নিয়ে প্রচার করবে আরএসএস।

ভারতের বহুত্বের ঐক্যকে ভাঙতেই বিজেপি আরএসএস-এর ওয়ান নেশন থিওরি। তাই সমস্ত জাতিসত্তার উপর নখ দাঁত ফোটাচ্ছে ওরা।

- আমন শেখ    

খণ্ড-27
সংখ্যা-43