এআইকেএম’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক জয়তু দেশমুখ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম এক জাতীয় স্তরের কৃষক আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সারা দেশ। মোদী সরকারকে শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে যত দিন যাচ্ছে দিল্লীর কৃষক আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে চলেছে। নতুন নতুন রাজ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সংগ্রামী শক্তি এতে যোগদান করছে। এই আন্দোলন জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ও উদ্দীপনা তুলে ধরেছে। মোদী সরকার নৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। ২৬ মে দিল্লীর কিষাণ আন্দোলনের ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে আসমুদ্র হিমাচল কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-যুব-মহিলা, সমাজকর্মী, নাগরিক সমাজ পথে নেমে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কালা দিবস পালন করলেন। আন্দোলনের মঞ্চ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা এই আহ্বান জানিয়েছিল। কোভিড বিধি মেনে, দূরত্ব বজায় রেখে হাতে শ্লোগান প্ল্যাকার্ড নিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানী থেকে শুরু করে জেলায় জেলায়, গ্রামে গঞ্জে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়। পুড়লো মোদীর কুশপুতুল, কালা কৃষি আইনের প্রতিলিপি। প্রমাণিত হল এ লড়াই কেবল দুই একটি রাজ্যের নয়, এটা সমগ্র দেশের মানুষের লড়াই, দেশ বাঁচানোর লড়াই।
অন্নদাতাদের অস্তিত্ব রক্ষার এই জীবনপণ লড়াইয়ের প্রধান বিষয় হল কৃষিক্ষেত্রে চাপিয়ে দেওয়া কোম্পানিরাজ তথা বেসরকারীকরণ নীতি। দেখা গেল কৃষি-শিল্প-স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রভৃতি দেশের সমস্ত ক্ষেত্রে কর্পোরেট দখলদারির বিরুদ্ধে আজ গড়ে উঠেছে সর্বস্তরের মেহনতী জনগণের সংহতি। যেমন বর্তমানে জ্বলন্ত সংকট রূপে হাজির হয়েছে করোনা প্রতিরোধে সরকারের চরম ব্যর্থতা, যা গণহত্যা বলে অভিহিত হচ্ছে। এটা সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসকারী বেসরকারীকরণ নীতিকে হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিচ্ছে। তাই ৭ বছর পূর্ণ করা মোদী রাজ আর নয় - দিকে দিকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে এই আওয়াজ।
দিল্লীর কিষাণ আন্দোলন দীর্ঘদিনের উপেক্ষিত কৃষকের দাবিগুলিকে অনেকটাই দেশের রাজনীতির কেন্দ্রে এনে হাজির করেছে। সেগুলি মেহনতী জনগণের দাবিগুলির সাথে একীকৃত হয়ে উঠেছে। যথা, কৃষিপণ্যের সরকারী ক্রয় বন্ধ করে দেওয়া, রেশন ব্যবস্থা, মিড-ডে-মিলের শিশুখাদ্য ব্যবস্থাকে বিলোপ করে দেবে৷ নয়া পণ্য আইন কালোবাজারী, মজুতদারি, মূল্যবৃদ্ধি তীব্র করে করবে। চুক্তিচাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ধ্বংস করবে। এই সমস্ত দিকগুলি ব্যপক মানুষকে কৃষকদের পাশে ঐক্যবদ্ধ করেছে। ফ্যাসিষ্ট দমননীতি চালিয়ে কৃষকের আন্দোলনকে আর সহজে ভেঙে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ধর্মীয় মেরুকরণ সৃষ্টির অপচেষ্টাকে গরিব শ্রেণীগুলির একতা বহুলাংশেই অকার্যকর করে দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী গণরায় এই দিকগুলিকে সামনে নিয়ে এসেছে। ২৬ মে’র কালা দিবসে এই রাজনৈতিক প্রচার তুলে ধরা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের বুকে ২৬ মে দিনটিতে ছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের দাপট। বেশ কয়েকটি জেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন, ঘরবাড়ি-জমি-গবাদি পশুর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। করোনা লকডাউন জনজীবনকে অস্বাভাবিক করে দিয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাত, ঝোড়ো হাওয়া সহ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও বিভিন্ন জেলায় ব্লক শহর, গঞ্জ এবং বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে প্রতিবাদ কর্মসূচী সংগঠিত হয়েছে। সারা ভারত কিষাণ মহাসভার পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন গণসংগঠনের যৌথ উদ্যোগে রাজ্যের বহু স্থানে কালা দিবস পালিত হয়েছে।
নদীয়া জেলার রিপোর্ট
নদীয়া জেলার নাকাশীপাড়া ব্লকের পাটপুকুর গ্রামে সকাল সাড়ে ৮টার সময় গ্রামের কৃষক কর্মীরা সমবেত হন। তখন হাল্কা বৃষ্টি চলছে, বৃষ্টির খানিক বিরতি হলেই স্থানীয় স্কুলের পার্শ্ববর্তী স্থানে কালা দিবসের কর্মসূচী শুরু করা হয়। মোদী সরকারের নয়া কৃষিনীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তোলা হয়। কর্মীদের হাতে হাতে ছিলো কালো পতাকা, বিভিন্ন দাবি সম্বলিত পোস্টার। যাতে লেখা ছিলো কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম গ্যারান্টি আইন চালু করা, সকলের জন্য করোনা টিকার ব্যবস্থা করা প্রভৃতি। এছাড়া সার ডিজেল ভর্তুকি দিয়ে সূলভে সরবরাহ, সরকারী দরে ‘দুয়ারে দুয়ারে’ ধান কেনার জ্বলন্ত দাবিও তুলে ধরা হয়। উল্লেখ্য ১,৮৬৫ টাকা কুইঃ সরকারী দর থাকা স্বত্বেও ব্লক কৃষি দপ্তর ধান কেনার কোন ব্যাবস্থাপনা গড়ে তোলেনি। ফলে ১,২৫০-১,৩০০ টাকায় চাষীরা লোকসানে মহাজনদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কর্মসূচীতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জয়তু দেশমুখ। উপস্থিত ছিলেন সেলিম মন্ডল, হবিবুর রহমান সেখ, রাজীবুদ্দিন সেখ প্রমূখ। খারাপ আবহাওয়া স্বত্বেও এই কর্মসূচী এলাকার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
-- জয়তু দেশমুখ