জেলায় জেলায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
women's-day

হুগলি

শুরুতে, ৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে পালিত হত আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস হিসেবে। ক্রমশ নারী আন্দোলনের পরিসর ব্যাপকতর হয়েছে। তাই শুধুমাত্র শ্রমজীবী নারীদের মধ্যে একে গণ্ডিবদ্ধ না রেখে এই দিনটিকে বৃহত্তর অর্থে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বলা হয়। তবে এর মেরুদন্ড কিন্তু আজও শ্রমজীবী মেয়েরাই। হুগলি জেলায় আমরা সেটাই দেখলাম।

৮ মার্চ ২০২৩ হোলি থাকার জন্য ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ‘নারী বিদ্বেষী ফ্যাসিস্ট বিজেপির বিরুদ্ধে নারী আন্দোলন’ এই মর্মে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয় হুগলির ব্যান্ডেলের দূর্গা লজে। এখানে উপস্থিত অধিকাংশই ছিলেন স্কিম ওয়ার্কার ও কৃষি শ্রমিক। তাঁদের জীবনের আর্থিক দাবি দাওয়া জরুরি হলেও বৃহত্তর নারী আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই ছিল এই সভা। এবং তাঁরাও বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে এতে অংশ নিয়েছিলেন।

শুরুতে শ্রমজীবী নারী আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন জেলা সম্পাদিকা শিপ্রা চ্যাটার্জী এবং ফ্যাসিস্ট বিজেপি নারীদের ওপর নামিয়ে আনা নানা রূপে হামলার ব্যাখ্যা করেন এবং তার বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামকে জোরদার করার কথা বলেন জেলা সহ‌সভানেত্রী সুদীপ্তা বসু। আসন্ন পঞ্চায়েত ও ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মেয়েদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে এবং অধিকারের দাবিগুলি তুলে ধরার আহ্বান রাখেন জেলা সভানেত্রী শোভা ব্যানার্জি। রিতা ব্যানার্জি বলেন, গার্হস্থ্য হিংসা ও পরিবারে মেয়েদের দাবিয়ে রাখার বিরুদ্ধে লড়াই নিজের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। অন্যান্য কর্মীরাও আলোচনায় উৎসাহের সঙ্গে অংশ নেন এবং নিজের নিজের কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার কথা বলেন।

পার্টির ও জেলা এআইসিসিটিইউ’র নেতা ভিয়েত ব্যানার্জি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসের ইতিহাস কেউ স্বীকার করতে চায় না, পুঁজিপতি, ব্যাবসায়ীরা আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে মেয়েদের শাড়ি গয়নার ছাড় দিয়ে বিজ্ঞাপিত করে মেয়েদের ছোট করে দেখাতে চায়। অথচ শাহিনবাগ, দিল্লীর কৃষক আন্দোলনের মতো বিভিন্ন বড় বড় আন্দোলনে মেয়েদের অসামান্য ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তিনি আরো বলেন, শ্রমজীবী নারীদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে এআইসিসিটিইউ’র সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। চৈতালি সেন বলেন, শ্রমজীবী নারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে খন্ড খন্ড আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সমস্ত শ্রমজীবী নারীকে একসাথে বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হতে হবে এবং নারী আন্দোলন ও শ্রমজীবী আন্দোলনকে সমন্বয় করে এগোতে হবে।

শেষ পর্যায়ে অঞ্জনা ভৌমিক, চন্দ্রানী ব্যানার্জি, শুক্লা ব্যানার্জি এবং ভিয়েত ব্যানার্জির মনোগ্রাহী কবিতা পাঠ এবং রিতা ব্যানার্জির সংগীত পরিবেশনায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সভা। শেষে প্রত্যেকে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ নেন এবং আন্তর্জাতিক সংগীত পরিবেশনা ও স্লোগানের মধ্যে দিয়ে বৈচিত্রময় সভার সমাপ্তি ঘটে।

কলকাতা

গত ১১ মার্চ, ফ্যাসিবাদী সময়ের প্রেক্ষাপটে শ্রমজীবী নারী দিবস উপলক্ষ্যে, ত্রিপুরা হিতসাধিনি সভাগৃহে আইসা'র উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় এবং 'দ্য ওয়ার্ল্ড বিফোর হার' নামক একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এস.এস. জালান গার্লস কলেজের অধ্যাপক কমরেড মধুরিমা বক্সী।

উত্তর ২৪ পরগণা

৮ই মার্চ ২০২৩ উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় বিভিন্ন অঞ্চলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়।

নৈহাটিতে বক্তব্যে, গানে, কবিতায় নারী দিবসকে স্মরণ করা হয়। আবৃত্তি পরিবেশন করে তনুরিমা ভট্টাচার্য ও প্রিয়াশা চক্রবর্তী। গান পরিবেশন করে মেহুলি চক্রবর্তী। বক্তব্য রাখেন আইপোয়ার জেলা সভানেত্রী অর্চনা ঘটক, তপতী চক্রবর্তী, প্রণতি নাথ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন মন্দিরা মুখার্জি, সুমেলি চক্রবর্তী সহ গরিফা অঞ্চলের মহিলারা, যাদের বড় অংশ‌ই একদম নতুন মুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আইপোয়ার রাজ্য নেত্রী মিঠু চক্রবর্তী।

অশোকনগরে গান এবং ঘরোয়া আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অঞ্চলের মেয়েদের নিয়ে নারী দিবস পালন করা হয়। জেলা নেত্রী রীনা মজুমদার ও মেঘনা সমগ্র অনুষ্ঠানটা পরিচালনা করেন।

বারাসাতে দে গঙ্গায় রাজ্য নেত্রী জয়শ্রী দাসের উদ্যোগে মিড-ডে-মিলের কর্মীদের নিয়ে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন হয়। উপস্থিত ছিলেন রন্ধনকর্মী আন্দোলনের ব্লক নেত্রী নিলুফার বেগম।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস শ্রমজীবী মহিলাদের লড়াইয়ের এক মহান ঐতিহ্যকে বহন করে। যে লড়াই করে মেয়েরা ছিনিয়ে এনেছিলেন ৮ ঘন্টা কাজের অধিকার, ভোটের অধিকার। আজ ভারতবর্ষে বিজেপির শাসনে ভীষণভাবে আক্রান্ত শ্রমজীবী মহিলাদের অধিকার। তাই এই মুহূর্তে স্বাধীকার ও সমতার লড়াইয়ে জোটবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

এই অঙ্গীকার নিয়েই অত্যন্ত প্রাণবন্ত পরিবেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কর্মসূচি পালন হয়। যা আগামী দিনে মহিলা সংগঠনকে শক্তিশালী করার আশা জাগায়।

স্মরণ সভা সবাইকে আমন্ত্রণ। আজীবন বামপন্থী, বর্ষীয়ান সাংবাদিক, লেখক, সমালোচক, সবার আপনজন প্রয়াত শ্রদ্ধেয় শঙ্কর রায় এর স্মরণ সভা। ২৩ মার্চ২০২৩, বিএম পিইইউ হল ( জর্জ ভবন, শিয়ালদা ডেন্টাল কলেজের পাশের গলি), সময় বিকেল সাড়ে ৫টা। শ্রদ্ধা জানাবেন – দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, শোভনলাল দত্ত গুপ্ত, অনাথবন্ধু দে, নব দত্ত প্রমুখ। আয়োজক – এআইসিসিটিইউ ,দিগন্ত বলয় পত্রিকা উই, দ্য পিপল অফ ইন্ডিয়া

খণ্ড-30
সংখ্যা-6