নদীয়ায় রন্ধন কর্মীদের সম্মেলন
culinary-workers-in-nadia

ওরা এসেছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। সাথে নিয়ে একরাশ বঞ্চনা বোধ। পরম মাতৃস্নেহে যারা বিদ্যালয়ে শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেন, অথচ নিজের ঘরের শিশুদের খাদ্য যোগাড় করতে পারেন না। এমনই এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে নদীয়া জেলা রন্ধন কর্মী মিড ডে মিল ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো গত ১২ মার্চ ধুবুলিয়ার দেশবন্ধু স্কুলে। উপস্থিত ছিলেন প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক মহিলা। সম্মেলনে কোহিনুর মল্লিক, সাধনা ঘোষ, ভারতী দাস, সাহেরা বিবি সহ ১৩ জন প্রতিনিধিদের বক্তব্যে উঠে এলো চরম বিপন্নতা। ওদের প্রশ্ন আমাদের মজুরি আর বাড়বে কবে? সরকার তো রন্ধনকর্মীদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। বছরের পর বছর চলে যায়, আমাদের এক পয়সাও বেতন বাড়ে না। মাত্র ৫০০ টাকার লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়ে সরকার আমাদের খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার স্বপ্নটাকে চুরমার করে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা চাই কর্মচারী স্বীকৃতি। সরকার সেই অধিকারটাকে কেড়ে নিয়েছে। তাই আমাদেরও পাল্টা জবাব দিতে হবে, একসাথে জোট বেঁধে এগিয়ে যেতে হবে আন্দোলনের পথে। এভাবেই সংগ্রামী চেতনায় টানটান ছিল রন্ধনকর্মীদের অনুভব। তাঁরা বলেন, লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করলেও তো তিন হাজার টাকা বেতন দেয়। আমরা সেটুকুও পাই না। ইস্কুলে বাচ্চাদের খাওয়াতে হয়, তাঁদের হাত মুখ ধুইয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে দিতে হয়। শিশুরা লেখাপড়া শিখে বড় হবে এ জন্যই তো আমরা এতো পরিশ্রম করি। কিন্তু আমরা পাই দৈনিক মাত্র ৫০ টাকা! গোষ্ঠীর মাধ্যমে রান্না করে আরও কম! সরকার নির্ধারিত ন্যুনতম মজুরিটুকুও আমরা পাই না। আমাদের বছরে দশ মাসের বেতন দেওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা যদি ১২ মাসের মাইনে পায় তাহলে আমরা তেমনটা পাবো না কেন?

ইউনিয়নের প্রসঙ্গে তারা বলেন, যখন আমরা দেখি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে অনেক বোনেরা এগিয়ে চলেছে তখন আমাদের একসাথে চলার মনোভাব বেড়ে যায়। দাবি আদায় করতে গেলে সরকারের কানে জল ঢোকাতে হবে। সম্মেলন থেকে নির্বাচিত সম্পাদিকা চায়না সেখ বলেন, আমাদের পায়ের তলার মাটিকে শক্ত করতে হবে, এ জন্যই ইউনিয়নকে ধরে রাখতে হবে। এক দিন না এক দিন ন্যায্য দাবি আদায় হবেই হবে।

শুরুতে এআইসিসিটিইউ রাজ্য সম্পাদক বাসুদেব বসু বলেন, দেশে প্রকল্প কর্মীরা শ্রমিক শ্রেণীর একটা বড় অংশ। এদের অধিকারের লড়াই সারা দেশ জুড়ে এগিয়ে চলেছে, সামনের সারিতে রয়েছে। প্রতিবেদন পেশ করে সংগঠনের সভাপতি কৃষ্ণ গোপাল দাস বলেন লকডাউনের সময় বেতন আদায় করা, কেন্দ্রীয় সরকারের কারসাজিতে মিড-ডে মিল প্রকল্পকে এনজিওদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্তকে আমরা আন্দোলনের চাপে বন্ধ করতে পেরেছি। এ রাজ্যের সরকার চরম মিথ্যাচার করে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা জয়শ্রী দাস বলেন, ইউনিয়ন আমাদের মান সম্মান দিয়েছে। এখন কাউকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের লড়াইয়ের ফলে সরকার এই নির্দেশিকা জারি করেছে। জীবনের সর্বক্ষেত্রেই আমরা আশা নিয়ে বেঁচে থাকি। না পারলে আবারও চেষ্টা করি। তাই নিরাশার কোনও জায়গা নেই। হরিনঘাটা এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই সংগঠনের নেতা অমিতাভ রায় বলেন, মাসের বেতন মাসে দেওয়া চালু এবং কর্মীদের রান্নার কাজ ছাড়া স্কুলের অন্যান্য কাজে লাগানোকে আমরা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বন্ধ করতে পেরেছি। তাই ইউনিয়নকে শক্তিশালী করতেই হবে। অ্যাপোয়ার নেত্রী বেলা নন্দী বলেন মেয়েরা তাঁদের সমস্ত কর্মক্ষেত্রেই বঞ্চিত। শ্রমজীবী মহিলাদের এক হয়ে লড়তে হবে। সম্মেলন থেকে ১৫ জনের কার্যকরী কমিটি নির্বাচিত হয়। বিগত সভাপতি ও সম্পাদিকা অপরিবর্তিত থাকেন। সহ সভাপতি হন বিজয় সাহা। সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন অমল তরফদার। সম্মেলনের শেষে রন্ধনকর্মীরা এবং অ্যাপোয়ার কর্মী ও নেতৃবৃন্দ এক মিছিল সহকারে পার্শ্ববর্তী নেতাজি পার্কে সমবেত হন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শ্রমজীবী মহিলাদের আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা তুলে ধরেন। অংশগ্রহণ করেন এ্যাপোয়ার রাজ্য নেত্রী ইন্দ্রানী দত্ত, জেলা সম্পাদিকা অপু কবিরাজ প্রমুখ।

খণ্ড-30
সংখ্যা-6