তোষা-মোদী শিল্পকলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর
protest-voice-against-art

ডক্টর সন্দীপ কে লুইস চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। বিষয়টা রাজনৈতিক। গত ১৫ মে ২০২৩ তিনি যে ফেসবুক পোস্ট করেন তার শাস্তি হিসেবেই তাঁর ওপর এই আঘাত। এই পোস্টে তিনি দেশের বেশ কিছু অগ্রগণ্য চিত্রশিল্পীদের সমালোচনা করেছিলেন কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট সরকারের একসারি প্রচার কর্মসূচিতে তাঁদের যোগ দেওয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রধানমন্ত্রীর মাসিক মন-কি-বাত সম্প্রচারকে সেলিব্রেট করতে দিল্লীস্থিত সরকারি ‘ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট (এনজিএমএ)’তে ‘জনশক্তি’ শিরোনামে আয়োজিত এক শিল্প প্রদর্শনীর মূল পরামর্শদাতা ছিলেন কিরণ নাদার, যিনি দিল্লীর বিখ্যাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘কিরণ নাদার মিউজিয়াম অব আর্ট (কেএনএমএ)’এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পকলামহলে একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী নাম। সন্দীপ একজন শিল্পালোচক, গবেষক ও শিক্ষক। তিনি আম্বেদকর ও অ্যামিটি ইউনিভার্সিটি-সহ আরও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আংশিক সময়ের শিক্ষকতার কাজ করেছেন। এবং এই সমালোচনা লেখার সময়কালে তিনি কিরণ নাদার আর্ট মিউজিয়ামে একজন গবেষক কর্মী হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। সন্দীপ তাঁর পোস্টে কিরণের সমালোচনা করেছিলেন। সন্দীপের এই সমালোচনা কয়েকটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে, অনেকেই সহমত জ্ঞাপন করতে থাকেন।

কাফিলা ডট অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সন্দীপের লেখাটি ভাষান্তর করে আমরা এখানে দিচ্ছি।

“কিছুদিন যাবৎ নির্দিষ্ট কিছু ভিডিও ও ফটো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। সেগুলিতে বিশ্বের এক-ষষ্ঠাংশ জনসংখ‍্যার দেশের সর্বোচ্চ স্বৈরতান্ত্রিক শাসক নরেন্দ্র মোদীকে দেখা যাচ্ছে এনজিএমএ’তে ‘জনশক্তিঃ এ কালেকটিভ পাওয়ার’ শিরোনামের নতুন প্রদর্শনী দেখতে আসছেন, যে প্রদর্শনীকে উৎসর্গ করা হয়েছে তাঁরই প্রচারসর্বস্ব রেডিও সম্প্রচার ‘মন-কি-বাত’এর উদযাপনে।

সপ্তাহ খানেক আগে যখন অলকা পাণ্ডের অতিথি-তত্ত্বাবধায়কতায় এই প্রদর্শনীটি জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে একটা জনরোল ছড়িয়ে পড়েছিল। জনরোলের কারণ, উদ্ঘাটন কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়েছিলেন ভারতের শিল্পকলা জগতের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বদের কয়েকজন। তাঁদের নামগুলি এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, কারণ ইতিহাসের নির্লজ্জ নামজাদাদের কলঙ্ক তালিকায় নথিভুক্ত থাকবে এই নামগুলি — অতুল দোদিয়া, বিভা গলহোত্রা, রিয়াস কমু, অসীম পুরকায়স্থ, জি আর ইরানা, টুকরাল ও টাগ্রা, মঞ্জুনাথ কামাত, জগন্নাথ পাণ্ডা এবং ‘পরামর্শদাতা’ ভূমিকায় থাকা কিরণ নাদার। এইসব আলোকদাতা বা ‘টপ আর্টিস্টরা’ (যেভাবে খবরে বলা বা লেখা হয়) প্রায় সকলেই পুনরায় আবির্ভূত হন যখন প্রধানমন্ত্রী এই প্রদর্শনী দেখতে আসেন তখন এবং গর্বের সাথে পোজ দেন তাঁর সাথে ফটোশেসনে।

কেউ কেউ চিহ্নিত করে দেখিয়েছেন যে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া প্রত্যেক শিল্পীর কাজের থিম নির্দিষ্ট করা হয়েছিল বর্তমান সরকারের মতাদর্গত দিশা এবং তার বিবিধ প্রশাসনিক স্কিম তুলে ধরার দিকে লক্ষ্য রেখে এবং এইভাবে এই শিল্পীরা একটি সংখ্যাগুরুবাদী রাষ্ট্রের মতাদর্শগত দিশাকে কার্যত মহিমান্বিত করেছেন। এই ধরণের পর্যবেক্ষণকে সমর্থন জানিয়েই আমি বর্তমানের প্রতিচ্ছবিতে একটা ভিন্নতর চিত্র হাজির করতে চাই।

বর্তমানে শিল্পকলা জগতের যেকোনো ধরনের ক্রিয়াকর্মে অপরিহার্য হয়ে ওঠা তথা শিল্পসেবায় নিবেদিত ব্যক্তিত্ব বা ‘দ্য আর্ট ফিলানথ্রোফিস্ট’এর ওপর এবং তার চারপাশে জমে থাকে বা সেই ব্যক্তিত্বকে সমর্থ করে যে শ্রম নামক ‘ডার্ক ম্যাটার’ তার ওপর নজর কেন্দ্রীভূত করে আমি এই চিত্র হাজির করতে চাই। ‘চিত্তাকর্ষক ফ্যাসিবাদ’এর সর্বগ্রাসী ক্ষমতার বিপ্রতীপে সবকিছুই খণ্ডিত, ক্লান্তিকর রকম সাময়িক ও গতানুগতিক।

এইভাবে ফোকাস সরিয়ে আনাটা কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ শিল্পকলা জগতের আমরা সকলেই এখনও কোনও না কোনওভাবে একটা ‘সিন্ডলার্স লিস্ট’এ বিশ্বাস রাখি — ঝাপসা কিন্তু মোলায়েম এক ঘুমপারানি গল্পে, যেখানে এক ধূর্ত কিন্তু ভালো শিল্পপতি তাঁর পছন্দের মানুষদের একটা তালিকা বানিয়ে রাখছেন যাদের তিনি আসন্ন জনহত্যার (সাংস্কৃতিক বা অন্যরকম) হাত থেকে রক্ষা করবেন। এখানে সেই সিন্ডলারটি হলেন নাদার। কিন্তু তিনি হতে পারতেন কোনো এক টাটা, বদেরা, আম্বানি বা এমনকি আদানি (শেষজন দৃশ্যতই দিল্লীতে সমাগত সেরেন্ডিপিটি কমপ্লেক্সের ট্রাস্টি)। এবং অরিজিনাল সিন্ডলারের মতো একা এক দুঃসাহসীর বদলে এখন এই ব্যক্তিত্বকে বুঝতে হবে এক সম্মিলিত সত্ত্বা হিসেবে — কেবল এক পারিবারিক নাম পদবি বা তার প্রচারে লিপ্ত একটা পরিবারকে দিয়ে নয়, বরং বিভিন্ন পরিবার ও এন্টারপ্রাইজের মধ্যেকার অন্তর্জালের গ্রন্থি হিসেবেও বুঝতে হবে, যেখানে আপোসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার থেকে সহ-অস্তিত্ব ও সহ-বিবর্তন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দায়বদ্ধতার ব্যবস্থাপনা একদম নীচের তলা থেকে স্থাপন না করা পর্যন্ত লব্ধি মেগা-প্রতিষ্ঠানগুলি এই উপমহাদেশীয় শিল্প দশায় নতুন অলিগার্কির শুরুয়াৎ হয়ে উঠতে পারে। তাদের সমঝোতা করে নেওয়ার প্রতিটি দৃষ্টান্তকে, তা সে এনজিএমএ প্রদর্শনী হোক বা মুম্বাইয়ের গালায় নিতা মুকেশ আম্বানি কালচারাল সেন্টার ‘এনএমএসিসি’এ হিন্দু সাধুদের হাজিরাই হোক, দেখা যেতে পারে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক জরুরি প্রয়োজনবাদ ও কূটনীতি হিসেবে যার তাৎক্ষণিক কুফলকে পরবর্তী দীর্ঘ সময় ধরে মেরামত করা বা ঘুরিয়ে নেওয়া যাবে। অথবা, কেউ এই অস্বস্তিকর সিদ্ধান্তেও পৌঁছতে পারে যে যা আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা আসলে ভারতীয় শিল্পকলায় নয়া উদারবাদের যে লং মার্চ তারই শেষ লপ্ত, যা এখন তার চূড়ান্ত দশায় পৌঁছাচ্ছে ক্ষমতার একচেটিয়াকরণ/কেন্দ্রীভূতকরণে — যে ক্ষমতা আকাধারে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক।

কিন্তু ক্ষমতার এই নতুন দৃশ্যপট, এনএমএসিসি উদ্ঘাটনে সবচেয়ে কদর্য রূপে যা সামনে এল, এহ বাহ‍্য। এই কেন্দ্রীভূত/একচেটিয়া ক্ষমতার ছবির নীচে আমরা যা পাই তা হল ভেঙেচুরে যাওয়ার আর অস্থিরতার সংকেত — খোলা মনে গ্রহণ করতে পারে এমন যৌথতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অনুশীলনকারীদের ফেস করা সমস‍্যা, কর্মক্ষেত্রে ইউনিয়ন গড়ে তুলতে পারার অক্ষমতা, নিঃশঙ্ক চিত্তে আইডিয়া ও তথ্য আদানপ্রদানযোগ্য মুক্ত জনমঞ্চের অনুপস্থিতি, শ্রম ও যৌনশোষণ আলোচনায় আনার যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব, ইত্যাদি। এই হল শিল্প জগতের নিঃশেষিত ও দলিত ‘ডার্ক ম্যাটার’ (গ্রেগরি শোলেটের অভিব্যক্তি টেনে বললে), ভেতরে থেকে অদৃশ্যভাবে এই শিল্পদুনিয়ার চকচকে জেল্লার দৃশ্যপটকে সমর্থন যুগিয়ে চলা।

এনজিএমএ’তে আমরা যা দেখলাম তা এই সময়কার চলতি ভারতীয় শিল্পকলা জগতের এক বিস্ফোরক সংকোচন যেখানে টুকরাল ও টাগ্রা, দোদিয়া, ও কামু নামগুলি, যারা তাঁদের ‘সাবভার্সিভ’ আর্টের জন্য সমালোচনাখ্যাত, এবারে ‘সুপারফিসিয়াল’ পরেশ মাইতি, অঞ্জলি এলা মেনন ও অলকা পাণ্ডেদের সাথে এক সারিতে চলে আসবে। এটাই সমকালীন শিল্পের সমকালীনতা যেখানে প্রত্যেকেই, নিন্দিত ও নন্দিত উভয়েই, একই স্থান ও কাল ভাগ করে নেয় কোনও ফারাক না রেখে, এক কল্পিত চতুর্মাত্রিক স্থান-কাল ঘনক যার উপরিতল ও গভীরতার কোনও সহজ ভেদ নাই। তাঁদের বিশ্বাসঘাতকতার (অথবা হতে পারে, শেষ পর্যন্ত নিজেদের পশ্চাদগামী রাজনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে আসার ধৃষ্টতা) পেছনের কারণটা খুব সহজ। মহাপ্রলয় ও সাফাই-ধোলাইয়ের কালপর্ব যেহেতু এগিয়ে আসছে, কেউ কেউ মরিয়া হয়ে সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে নয়া শিল্প দুনিয়ার অলিগার্কদের বানানো পছন্দের তালিকায় জায়গা পেয়ে যেকোনো মূল‍্যে মোদীর নৌকায় ওঠার। যারা পেছনে পড়ে থাকবে তারা হয়তো চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে। না কি, আমাদের নিজেদের ছোটো ছোটো ডিঙিনৌকাগুলো বানাতে হবে, যত বেশি বেশি সম্ভব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ঘুমপারানি গল্পের সিন্ডলারই হয়ত প্রকৃত জুজু।”

সন্দীপের লড়াই অগ্রণী শিল্পীদের জগতে ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘গোদি মিডিয়ার পর কি এবার তাহলে গোদি আর্ট’? সন্দীপের পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক শত শিল্পী, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। তীব্র ধিক্কার জানিয়ে কেএনএমএ’তে সন্দীপের পুনর্বহাল দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে,

“… প্রদর্শনীটি কার্যত শিল্পী ও শিল্পকে হাতিয়ার করেছে আমাদের সময়ের ভূমিস্তরের বাস্তবতাকে আড়াল করার কাজে। একজন গবেষক আর শিল্পালোচক হিসেবে ব্যক্তিগত অধিকারে সন্দীপ সামাজিক মাধ্যমে চলমান আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। মিউজিয়মের চাকুরে হিসেবে নয়, একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে, যিনি আধিপত্য ও শোষণের ব্যবস্থাকে দেখতে ও দেখাতে পারেন, যে ব্যবস্থা শিল্প ও রাজনীতিতে ব্যক্তিগত ধনসম্পত্তি ও তার সৃষ্ট মিথ্যার জালে জড়ানো। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্দীপকে শোকজ নোটিশ ধরানো হয় এবং শেষে সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ কায়দায় সেই মিউজিয়াম থেকে বরখাস্ত করা হয় যেখানে তিনি চাকরি করতেন...।

… একথা উল্লেখ করাও জরুরি যে মিস নাদার যে সাংস্কৃতিক পুঁজি সঞ্চিত করেছেন তা তাঁর নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান ‘কিরণ নাদার মিউজিয়ম অব আর্টস’এ দৃষ্টির আড়ালে কাজ করে চলা বহু ব্যক্তিবর্গের কঠোর শ্রমের মধ্যে দিয়েই এসেছে…।

বর্তমানে যখন আমরা এক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যেখানে সরকার চালিত শিল্পকলা প্রতিষ্ঠানগুলি সমালোচনামূলক মননকেন্দ্র হওয়ার বদলে রাষ্ট্র নির্দেশিত প্রচারণার হাতিয়ারে পর্যবসিত হয়েছে, তখন এটা আরও জরুরি হয়ে ওঠে যে এক জীবন্ত প্রাণবন্ত শিল্পজগৎকে শক্তি জোগানোর সামর্থ যাদের আছে তাঁরা শিল্পকে বরাবরের মতো নিছক আরেকটা ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে না দেখে বরং তার পরিবর্তনকারী ক্ষমতাকে অনুধাবন করবেন। আমরা তাই এমনকি প্রাইভেট মিউজিয়মগুলির কাছেও প্রত্যাশা করি যে তারা ধনকুবেরদের ব্যক্তিগত জায়গিরে পর্যবসিত না হয়ে জনতার স্বার্থবাহী সংস্থারূপে কাজ করবে...।”

এইসব শিল্পীরা যখন সরকারকে খুশি করার ছবি এঁকে মন-কি-বাতের শততম শো’তে প্রদর্শিত করছেন তখন এই ফরমানি প্রদর্শনীর পাশাপাশি সাক্ষী দেবে সেইসব সত্য ঘটনার নিদর্শনগুলিও যেখানে সরকারের অবহেলায় যমুনা নদী দূষণে ধুঁকছে, হাথরাসে ধর্ষিত মেয়েটিকে পুলিশ জ্বালিয়ে দিচ্ছে, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক পথ হাঁটছে হাজার মাইল, তাদের উপর নির্বিচারে স্প্রে করা হচ্ছে কীটনাশক, স্বচ্ছ ভারতের নামে দিল্লীর শ্রমিক বস্তির উপর চলছে মোদী-যোগীর বুলডোজার। এই সরকারের কর্মকাণ্ডের জেরে যোশীমঠ সমেত আরও অসংখ্য পরিবেশ ধ্বংসের ঘটনা, কৃষক আত্মহত্যার কথা, কৃষক আন্দোলনের কথা, ক্রমবর্ধমান জাতিবিদ্বেষ মূলক ঘটনার কথা, রামদেব থেকে শুরু করে এই সময়ের ভন্ড গুরুদের কথা, একের পর এক গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে রিসার্চ ফান্ডিং’এর অভাব ও ব্রাহ্মণ্যবাদী নিপীড়নে গবেষকদের মৃত্যুর কথা, সরকারের এমন অসংখ্য অত্যাচার ও হিংস্রতার কথা রয়ে যাবে। থাকবে স্ট্যানস্বামীকে জেলে হত্যার ঘটনা। বিনা বিচারে রাজনৈতিক বন্দীদের আটকে রাখার কথা। ইতিহাসে থাকবে ধর্ম আর জাতির নামে এই সময়কালের হীনতার সব থেকে নির্মম ঘটনাগুলি, সমস্ত জনমাধ্যম দখল করে নিয়ে দিবারাত্রি প্রোপাগান্ডা চালিয়ে সমগ্র দেশের মস্তিষ্কে ঘৃণা আর বিদ্বেষের বীজ বপন করার একের পর এক নমুনাগুলি।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার ও চিত্রশিল্পী শহিদুল আলম প্রতিবাদে সামিল হয়ে কিরণ নাদাল মিউজিয়মে তাঁর আসন্ন প্রদর্শনী বয়কট করে নাম তুলে নিয়েছেন।

ডক্টর সন্দীপ লুইস শিল্পী মহলে মোটামুটি পরিচিত নাম, তাই তাঁর অন্তত এটুকু লড়াইয়ের জায়গা আছে যে তিনি নিজের ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন’ ও ‘রাইট টু ওয়ার্ক’এর বিষয়ে আওয়াজ তুলতে সক্ষম। এইসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন কত অসংখ্য মানুষকে কাজ হারাতে হয়, যাদের কাজের নিরাপত্তা তো দূরের কথা, স্বাধীন অভিব্যক্তির ন্যূনতম জায়গাটুকুও নেই। সন্দীপের হয়ে কিছু সচেতন শিল্পী ও শিক্ষা জগতের মানুষ এগিয়ে এসেছেন একটা বড় প্রশ্নকে সামনে রেখে — এত সহজেই কারোর চাকরি কেড়ে নেওয়া যায় না, দেশের সাংবিধানিক অধিকারের জায়গা থেকে অন্তত। এটা হয়তো একটা অসম লড়াই; এটুকু অন্তত প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া, যে এই রাষ্ট্রে অভিব্যক্তির কারণে কাজ খোয়ানো আসলে এক ধরণের ফ্যাসিবাদী দমন। বৃহত্তর এই গণতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্রীয় ও অর্থ ক্ষমতায় বলিয়ান মানুষেরা যা খুশি তাই করতে পারে না। ক্ষমতার বিরুদ্ধে অনেক ভাষা উঠে আসবেই নানা রূপে, নানান স্তর থেকে। আর এই ছোট ছোট লড়াইগুলোও ক্রমে একসাথে দানা বেঁধে একদিন নিশ্চয় এই ফ্যাসিস্ট মানসিকতার বদল আনবে।

- আনখ সমুদ্দুর ও মলয় তেওয়ারি

খণ্ড-30
সংখ্যা-24