খবরা-খবর
আয়ারলার জাতীয় সম্মেলন জাহানাবাদে

ঊনিশ-কুড়ি নভেম্বর বিহারের জাহানাবাদে অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠিত হল সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের মূল আহ্বান ছিল মনুবাদীদের হটিয়ে ভগৎ সিং, আম্বেদকরের স্বপ্নের ভারত প্রতিষ্ঠার। ১৯ নভেম্বর জাহানাবাদের গান্ধী ময়দানে হাজার হাজার গ্রামীণ মেহনতীর “বিজেপি হটাও, গ্রামীণ গরীব বাঁচাও” সমাবেশে যার সূচনা ঘটে। প্রধান বক্তা ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ও আয়ারলা সম্পাদক ধীরেন্দ্র ঝা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্বদেশ ভট্টাচার্য, অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ প্রমুখ। সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন যে আয়ারলা যেভাবে একদিকে সংস্কার আন্দোলন অন্যদিকে বিপ্লব-এই দুই অ্যাজেন্ডাকেই গুরুত্ব দিয়ে পাশাপাশি এগিয়ে নিয়ে চলেছে,তাতে তিনি মুগ্ধ,অভিভূত। জাতীয় কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে কর্পোরেট সেক্টর এই প্রকল্পের ঘোর বিরোধী। এনআরইজিএ-তে হস্তক্ষেপ বাড়ানোর আহ্বান জানান দ্রেজ। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেএনইউ-র প্রাক্তন জিএস চিন্টু কুমারী। এই অধ্যাপিকা দিল্লিতে আয়ারলা কাজের সাথে যুক্ত হলেন। সিপিআই প্রভাবিত সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সম্পাদক জানকী পাশোয়ান দ্বিতীয় দিন বক্তব্য রাখেন। তিনিও “বিজেপি হটাও” ডাক দেন ।

এগারোশো প্রতিনিধির এই সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন চুয়াল্লিশ জন। খসড়ার উপর দ্বিতীয় দিন বক্তব্য রাখেন বাংলার তিন প্রতিনিধি স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পাগান মুর্মু ও নবকুমার বিশ্বাস। স্নেহাশিস বিজেপি হটানোর কেন্দ্রীয় কাজের পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জির টিএমসির স্বৈরাচারে বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিপজ্জনক রাজনীতির কথা তিনি সবিস্তারে বর্ণনা করেন। আদিবাসী মঞ্চের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক পাগান মুর্মু পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী আন্দোলন ও আদিবাসী মঞ্চের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। নবকুমার বিশ্বাস গ্রামীন মেহনতিদের ন্যূনতম মজুরি কমপক্ষে সাতশো টাকা করতে হবে, এই দাবি খসড়াতে উল্লেখের আহ্বান জানান। সংখ্যালঘু প্রশ্নে বিশেষ উল্লেখেরও দাবি করেন। তিনি কৃষিমজুরদের জন্য ওয়েজ সাবসিডি চালু করার দাবি তোলেন।

সম্মেলন কক্ষ ছিল সুসজ্জিত। শ্লোগানগুলি ছিল বর্ণময়। ভারত ও ভারতের বাইরে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়ন; সবার জন্য রেশন, কাজ ও পেনশনের নিশ্চয়তা; নিজ গৃহের অধিকারকে মৌলিক অধিকারভুক্ত করা; গৃহহীন জমিহীনদের রাষ্ট্রীয় তালিকা প্রণয়ন; সকল শিশুদের জন্য উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান ইত্যাদি দাবি ছিল উচ্চকিত। প্রেসিডিয়ামে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল বাংলার আয়ারলা নেত্রী দেবযানী গোস্বামীর। সঞ্চালক কমিটিতে ছিলেন সজল অধিকারী। জবাবী ভাষণে ধীরেন্দ্র ঝা স্মরণ করিয়ে দেন যে যেখানেই গ্রামের মেহনতিদের, কৃষকদের আন্দোলন চলছে, সেখানেই আরএসএস-ওয়ালারা বিপদে পড়ছে। তিনি সংগঠন বিস্তারের বিশেষ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, বিগত কনফারেন্স থেকে ষষ্ঠ সম্মেলনের মাঝে সংগঠনের বিস্তার ঘটেছে জম্মু, গুজরাত সহ কয়েকটি রাজ্যে।

সম্মেলনের শেষে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য অর্থনীতিবিদ দ্রেজের বক্তব্যকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি জনধন, স্বচ্ছ ভারত, উজলা ভারতের ভাঁওতাবাজির কথা তুলে ধরেন ।বিজেপি হটানোর কেন্দ্রীয় কর্তব্যকে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সম্মেলন শেষে ২৬১ জনের জাতীয় কাউন্সিল গঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাউন্সিলররা হলেন -- (১) দেবযানী গোস্বামী (২) নবকুমার বিশ্বাস (৩) নবীন সামন্ত (৪) শৈলেন মাইতি (৫) বাবলু ব্যানার্জি (৬) রামনিবাস বাস্কে (৭) সজল পাল (৮) আনসারুল আমান মন্ডল (৯) স্নেহাশিস চক্রবর্তী (১০) সজল অধিকারী (১১) নিরঞ্জন বাগ (১২) শ্যামল ভৌমিক (১৩) শরত সিংহ (১৪) প্রজাপতি দাস। সম্মেলন কক্ষের পিছনের মাঠে জাতীয় কাউন্সিলের প্রথম বৈঠকে ৬১ জনের জাতীয় কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।সর্বভারতীয় সম্পাদক পদে ধীরেন্দ্র ঝা পুনর্নির্বাচিত হন। সভাপতি শ্রীরাম চৌধুরী; সম্মানিত সভাপতি রামেশ্বর প্রসাদ। পশ্চিমবঙ্গের ৬ জন এক্সিকিউটিভে অন্তর্ভূত হলেন।এরা হলেন সজল পাল, বাবলু ব্যানার্জি, প্রদীপ দত্তগুপ্ত, সজল অধিকারী, শ্যামল ভৌমিক ও দেবযানী গোস্বামী ।

কমরেড শাহচাঁদ নগর, বীরেন্দ্র বিদ্রোহী সভাঘর ও কমরেড মঞ্জুদেবী মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল এই মহাসম্মেলন। সুবিশাল এই মহাসম্মেলনের সফলতা তুলে ধরে আয়ারলার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে। জাহানাবাদের মাটিতে পার্টির সুপ্রোথিত ভিত্তিকেও তুলে ধরে এই সম্মেলন।

খণ্ড-25
সংখ্যা-36