প্রতিবেদন
খসড়া আইনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক
the draft law

* আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী কৃষকদের ও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করতে এবং কৃষিকাজকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত করতে রাজ্য সরকার বাধ্য। জীবন যাপনের অধিকারকে বাস্তবায়িত করা ও জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নীতি নির্ধারণ এবং উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও লাগু করে কৃষকদের দুর্দশা রোধ করাও রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক কর্তব্য।

* জাতীয় কৃষি কমিশন লাভজনক মূল্যের যে নীতি সুপারিশ করেছে যাতে পরিষ্কার বলা আছে যে সব খরচ ধরে উৎপাদন ব্যয়ের সাথে কমপক্ষে তার ৫০ শতাংশ যোগ করে ফসলের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করতে হবে।

* কৃষিক্ষেত্রের দুরবস্থা দূর করতে ও সাংবিধানিক কর্তব্য পালন তথা জাতীয় কৃষি কমিশনের সুপারিশকে বাস্তবায়িত করতে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কৃষককের অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে।

* কৃষক, অর্থাৎ যারা নিজ মালিকানার জমিতে বা অন্যের জমিতে অর্থনৈতিক কারণে এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষি কার্যকলাপে নিযুক্ত এবং ফসল উৎপাদন বা অন্যান্য প্রাথমিক কৃষি উৎপাদন করেন এবং কৃষিকাজের যে কোন ধারায় কাজ করছে এমন ব্যাক্তি, চাষী, কৃষি শ্রমিক, ভাগচাষী, জমি লিজ নিয়ে চাষ করা ব্যাক্তি, হাঁস-মুরগি ও পশুপালনকারী, মৎস্যজীবী, মৌমাছি পালনকারী, পশু চারণকারী, কর্পোরেট নয় এমন বাগান জোতমালিক এবং বাগিচা শ্রমিক, বনজ উৎপাদন সংগ্রহকারী, মহিলা কৃষক, সম্মিলিতভাবে চাষ করছে এমন কৃষক গোষ্ঠী, উৎপাদনকারী সমবায়, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ইত্যাদি।

* সমস্ত কৃষিজাত উৎপাদন অর্থাৎ সমস্ত রকম শস্য, সমস্ত জোয়ার জাতীয় পণ্য, সমস্ত রকম ডাল, তৈলবীজ, সমস্ত রকম ফাইবার ফসল, ফল ও সবজি, বাগানজাত ফসল, সমস্ত মসলা ফসল, কন্দ ফসল, ওষধি গাছ, সব ধরনের দুধ, ক্ষুদ্র বনজ উৎপাদন, ফুলের চাষ, ঘাস, পশুখাদ্য ঘাস ও গাছের উৎপাদন, নার্সারি উৎপাদন, সমস্ত বাগিচা উৎপাদন, সমস্ত গবাদি পশু এবং পশুজাত দ্রব্য যেমন মাংস, ডিম এবং পোলট্রি, গেঁড়ি-গুগলি ঝিনুক, সামুদ্রিক মাছ সহ সমস্ত মৎস্যজাত উৎপাদন, মিষ্টি জলের জলজ উৎপাদন, মধু, রেশম গুটিপোকা এবং অন্যান্য সমস্ত প্রাথমিক কৃষিজাত উৎপাদন ও তার সহজাত দ্রব্যগুলি।

সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় নির্ধারিত হবে নিম্নলিখিত দিকগুলিকে ধরে।
    • মজুর ভাড়া — পশু ও কৃষি যন্ত্রপাতিসহ,
    • পশু ও কৃষি যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ,
    • কৃষি উপকরণের খরচ, যথা বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ইত্যাদি,
    • জমির খাজনা ও কর বাবদ খরচ,
    • জমির ভাড়া বাবদ খরচ,
    • ঋণের সুদ বাবদ খরচ,
    • শস্যবীমার প্রিমিয়াম বাবদ খরচ,
    • শস্য প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের খরচ,
    • পারিবারিক শ্রমের মজুরি সহ অন্যান্য দিকগুলি।

* সরকার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে পর্যাপ্ত সংখ্যায় ফসল ক্রয়কেন্দ্র তৈরি করবে। তাৎক্ষণিক ভাবে এবং ফসল ক্রয় করার দিনই নগদে দাম পরিশোধ করতে হবে। ফসল কেনা সম্পর্কে এলাকায় আগাম পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রচার করতে হবে।

* ফসলের অভাবী বিক্রি রোধ করতে কার্যকরি ব্যবস্থা রাখতে হবে। এজন্য ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প খরচে ফসল সংরক্ষণ তথা হিমঘরের ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।

* সরকারকে যথেষ্ট পরিমাণে তহবিল গঠন করতে হবে যাতে করে কৃষকদের ফসল কেনার গ্যারান্টি সুনিশ্চিত করা যায়।

* সরকারকে চাষের খরচ কমানোর জন্য ভর্তুকি দিয়ে সার, বীজ, কীটনাশক, বিদ্যুৎ, ডিজেল গরিব চাষীদের সরবরাহ করতে হবে।

* সরকারকে ব্লক স্তরে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে যারা চাষীর ফসলের দাম কমে যাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারী রাখবে। কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলে যে পরিমাণে দাম কম পেয়েছে, চাষীকে তার দেড়গুণ দাম ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেবে। এটা অগ্রাহ্য করলে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসার এক মাসের বেতনের সমপরিমান অর্থ জরিমানা দিতে বাধ্য থাকবেন। অন্যথায় ৬ মাস পর্যন্ত কারাবাসের শাস্তি ভোগ করবেন।

* সরকারি সংস্থা বা ব্যবসায়ীদের কাছে ফসল বিক্রি করে তার দাম না পেলে চাষী ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য অর্থের ১৫ শতাংশ বেশি পাবে।

* প্রতিটি ব্লকে তিন সদস্যর অভিযোগ নিস্পত্তি কমিটি গঠিত হবে। যাতে থাকবেন ব্লক স্তরের কৃষি দপ্তর ও কৃষি বিপণন দপ্তরের একজন করে সরকারি আধিকারিক এবং কৃষকদের উপযুক্ত প্রতিনিধি। এই কমিটি অভিযোগ পাওয়ার একমাসের মধ্যে সেটা নিস্পত্তি করতে বাধ্য থাকবে। এজন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করতে হবে।

এআইকেএসসিসি দাবি জানিয়েছে অবিলম্বে রাজ্যের সমস্ত কৃষকদের সমস্ত ধরনের ফসলের জন্য ঐ আইন বিধানসভায় পাশ করিয়ে দ্রুত রাজ্যে চালু করতে হবে। অন্যথায় রাজ্যে কৃষকরা জোরালো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-35