ত্রিপুরায় পৌর ও নগর সংস্থার নির্বাচনে ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে পরাস্ত করার আহ্বান
defeat of fascist BJP

ত্রিপুরায় শহর এলাকায় আগরতলা পৌর নিগম সহ ১৩টি পৌরসভা ও ৬টি নগর পঞ্চায়েতের মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডে আগামী ২৫ নভেম্বর নির্বাচন। রাজ্যে আইন শৃংখলা নেই, গণতন্ত্র বিপন্ন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। কিন্তু তা আজ বাস্তবে শাসক দলের কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। তখন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া কোনোভাবেই সম্পন্ন হতে পারেনা। কারণ শাসক দল বিজেপি কোনো বিরোধী দলকে সহ্য করছে না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে আগ্রাসী। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৯৫ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে, পৌর ও নগর সংস্থার উপনির্বাচন ও ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল, সমবায় সমিতির নির্বাচনে যে কোনো উপায়ে জোরপূর্বক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কব্জা করেছে। আসন্ন পৌর ও নগর সংস্থার নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বিজেপির বেআইনি দুর্বৃত্তবাহিনী রিটার্নিং অফিসারের অফিস দখল করে রেখেছে। যাতে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে না পারে। যারা তা প্রতিহত করে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছেন, তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দিচ্ছে; প্রার্থীর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রস্তাবকের উপর দৈহিক আক্রমণ ও হামলা অব্যাহত। উপরতলার নির্দেশে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করেছে। ফলে সর্বমোট ৩৩৪টির মধ্যে ১১২টি ওয়ার্ডে তথা ৩৪ শতাংশ আসন বিজেপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল পেয়েছে। অর্থাৎ ভোট হবে ২২২টি ওয়ার্ডে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এই প্রশ্নে কোনো ভূমিকা নেই। বিরোধী প্রার্থীরা প্রচার কর্মসূচিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের বাড়িঘরে আক্রমণ সমানে চলছে। ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের নিরাপত্তা, অবাধে প্রচার করার অধিকার, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন নিশ্চিত করার প্রশ্নে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে। অথচ ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এই নির্দেশ অসত্য তথ্য নির্ভর বলে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। ১২ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিজেপির এক দলীয় কর্মসূচিতে বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত সরাসরি বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রচার করতে দেখলেই তাড়া করার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ছাপ্পা ভোট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী নীরব। বিধায়কের এই বেআইনী ও অসাংবিধানিক বক্তব্য সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখনো কিছুই করেনি।

এমতাবস্থায় নির্বাচক মন্ডলীর কাছে সংবিধান প্রদত্ত আইনশৃঙ্খলা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সহ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে আরো বেশি করে গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সিপিআই(এমএল) লিবারেশন আহ্বান জানাচ্ছে। বিজেপির ফ্যাসিবাদের বিপদকে যথোচিত গুরুত্ব না দিয়ে লঘু করে দেখার ফলে ত্রিপুরার সিপিআই(এম) তথা বামফ্রন্ট ভুল রণকৌশল গ্রহণ করেছে। ফলে বামপন্থীদের উদ্যোগ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই প্রশ্নে বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের সংকীর্ণতার স্থান থাকা উচিত নয়। প্রথমে বামপন্থীদের মধ্যে ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে হবে এবং তারপর বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের ঐক্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখানে বামপন্থীরা যেহেতু প্রধান বিরোধী পক্ষ, তাই দায়বদ্ধতার সাথে বামপন্থীদের এগিয়ে এসে এই কাজটি করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ ফ্যাসিবাদের আক্রমণের হাত থেকে আধুনিক ভারতের সংবিধান, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আইনের পরিকাঠামো, কৃষ্টি সংস্কৃতিকে সবাইকে মিলে রক্ষা করতে হবে।

অন্যদিকে শহর এলাকার উন্নয়নে বিজেপির ভিশন ডকুমেন্টে প্রদত্ত ১২টি প্রতিশ্রুতি নিয়ে গত চার বছরে জনগণের মধ্যে বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে। বর্ষার সময়ে উপযুক্ত জল নিষ্কাশনে নালা ব্যবস্থা নির্মাণ, ১০০ শতাংশ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা, পানীয় জল, রাস্তাঘাট, সরকারি স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধার প্রশ্নে এবং স্বাধীনতা উত্তর ৭৫ বছরে সর্বোচ্চ ভোগ্যপণ্য মূল্যবৃদ্ধি ও কর্মহীনতায় শহরের সাধারণ নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জনগণ এই দুরবস্থার হাত থেকে বাঁচতে চাইছেন। বিজেপি ত্রিপুরা রাজ্যকে বিভেদের ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্বের মডেল রাজ্য বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে।

তাই ত্রিপুরার নির্বাচকমন্ডলীর কাছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের আবেদন, ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে পরাস্ত করুন। বামপন্থী প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়ী করুন। যেখানে বামপন্থী প্রার্থী নেই, সেখানে বিজেপিকে পরাস্ত করতে পারে এমন বিরোধী প্রার্থীদের ভোট দিন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামকে আরো জোরদার করুন।

খণ্ড-28
সংখ্যা-40