ত্রিপুরায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে গোমতী জেলার নির্বাচনী আধিকারিক ও জেলাশাসকের কাছে গত ১ নভেম্বর এক ডেপুটেশনে দাবি করা হয় আগে সাংবিধানিক গণতন্ত্র ও আইন শৃঙ্খলার পরিবেশ ফেরাতে হবে, যতদিন তা না হবে ততদিন পৌর ও নগর সংস্থাগুলিতে নির্বাচন বন্ধ রাখার দাবি থাকবে। কারণ গোমতী জেলায় সুষ্ঠু-স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো বাস্তবে কোনও পরিবেশ নেই। গত সেপ্টেম্বর থেকে বিরোধীদের উপর সংঘটিত ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ সন্ত্রাসের ফলে জনজীবনে তীব্র আতঙ্ক ও ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যে প্রায় সবকয়টি প্যাকস্, ল্যাম্পস্, অন্যান্য সমবায় সমিতি ও সুখ সাগর জলা শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর নির্বাচনে সন্ত্রাসের আবহে বিরোধীদের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহে ও প্রতিটি পর্যায়ে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং জোরপূর্বক বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসক দল বিজেপি জয়ী হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অমানবিক বর্বর ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এ রাজ্যে ও এ জেলায় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে সঞ্চারিত অজানা ভীতি ও আতঙ্ক এখনো কাটেনি। তার আগে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দল বিজেপি-র ৯৫ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ তাই প্রমাণ করে। গত পৌর ও নগর সংস্থাগুলিতে জবরদস্তি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভয় দেখিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা এবং পুননির্বাচনের নামে সম্পূর্ণ প্রহসন অনুষ্ঠিত করার মাধ্যমে জোর জবরদস্তি এগুলোকে দখল করে। এগুলো সংবিধান সম্মত বিধি দ্বারা নির্মিত স্বায়ত্ব শাসিত সংস্থা। এগুলোর নির্বাচন প্রক্রিয়াও সংবিধান প্রদত্ত অধিনিয়ম ও বিধি দ্বারা পরিচালিত। আর আইন শৃঙ্খলার গ্যারান্টি সহ সুষ্ঠ, স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যে কোনও নির্বাচনের প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু এর কোনোটাই সমগ্র রাজ্যে ও এই জেলায় নেই।
তাছাড়া, গত প্রায় ৪ বছর ধরে সমগ্র রাজ্যে ও এই জেলায় বিরোধী দলের মিছিল মিটিং করা ও রাজনৈতিক কাজকর্ম করার কোনও অধিকার নেই। সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে বারবার বিরোধী দলের নেতা, কর্মী ও এমএলএ-রা আক্রান্ত হয়েছেন। পার্টি অফিস, বাড়িঘর, দোকানপাট, সহায় সম্পদ হয় ভাঙচুর করে নষ্ট করা হয়েছে। নয় আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে। পুলিশ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ফলে আইন শৃংখলা ভেঙ্গে পড়েছে। সংবিধান ও গণতন্ত্র আজ বিপন্ন। তাছাড়া এই পৌর সংস্থার নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন আধিকারিক, রিটার্নিং অফিসারগণ সব দলকে ডেকে মিটিং করছেন না। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনকে কোনও মিটিং-এ ডাকা হয়নি। অস্বাভাবিক পরিবেশকে স্বাভাবিক করার জন্য প্রশাসন কোনও ভূমিকা গ্রহণ করেনি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের বাড়িতে বেছে বেছে হামলা করা হচ্ছে। উদয়পুর রাজারবাগে ১৫ নং ওয়ার্ডে রুশো বিবি আক্রান্ত হয়েছেন।
এমতাবস্থায়, অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই পৌর সংস্থাগুলির নির্বাচন সম্পূর্ণ প্রহসনে পরিণত হতে বাধ্য। তাই, সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি দাবি করছে যে —
(১) সবার প্রথমে রাজ্যে ও এই জেলায় সংবিধান প্রদত্ত গণতন্ত্র, আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
(২) নির্বাচন হওয়ার মতো সুষ্ঠ, স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে সমস্ত দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা নির্ভয়চিত্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং নির্বাচকমন্ডলী সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ও নির্ভয়চিত্তে তাদের পবিত্র ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
(৩) সব দলের প্রার্থীদের, তাদের পরিবারের সদস্যদের ও তাদের জান মালের উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
(৪) এগুলো বাস্তবে সম্ভব না হওয়া পর্যন্ত এই পৌর সংস্থাসমূহের নির্বাচন বন্ধ রাখতে হবে। এপ্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। সরকারকে সংবিধান প্রদত্ত গণতন্ত্র ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যক্ষেত্রে দায়বদ্ধ হতে হবে।
ডেপুটেশনের প্রতিলিপি দেওয়া হয় উদয়পুর পৌর পরিষদ নির্বাচনী রিটার্নিং অফিসার এবং ত্রিপুরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে।