বরুণ দাশগুপ্ত ছিলেন নির্ভীক নিরপেক্ষ প্রাজ্ঞ
Barun Dasgupta

মহাত্মা গান্ধীর ‘বাবুয়া’বা বরুণ দাশগুপ্ত সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৯ ডিসেম্বর। তাঁর কৈশোর এবং যৌবনে জ্যাঠামশায় সতীশচন্দ্র দাশগুপ্তের সোদপুর গান্ধী আশ্রমের পরিমন্ডলে শিক্ষা ও বড় হয়ে ওঠা, পিতা ক্ষিতীশ দাশগুপ্ত ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাবধারার অনুসারী, পরবর্তী সময়ে মার্কসীয় দর্শনে আকৃষ্ট হয়ে, সেই রাজনৈতিক পরিচয়ে ছয় দশক ধরে এক আদর্শ সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন, এভাবেই স্মৃতিচারণা করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক শঙ্কর রায়। তিনি বলেন, মনে পড়ছে ৩০ জুলাই ২০১৯এ নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সিপিআই(এমএল)-এর চারু মজুমদার জন্মশতবর্ষ সমাবেশে বরুণদা, তপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমি ছিলাম। মার্ক্স-চর্চাবিদ ও সাহিত্যশিল্পকলাবিদগ্ধ তপন, আমার মতো যার মার্ক্স-লেনিনপাঠ নরহরি কবিরাজ ও সত্যেন্দ্র নারায়ণ মজুমদারের কাছে। কিশোর বয়সে চারুবাবু, সৌরেন বসু প্রভৃতিদের বিপ্লবী কাজকর্মে আইডল ছিলেন শিলিগুড়িবাসী সত্যেনদা, আন্দামানে সেলুলার জেলে দীর্ঘতম নির্বাসিতদের একজন, যে কারণে তিনি কমিউনিস্ট কনসলিডেশনে যোগদানকারীদের মধ্যে সবশেষে ছাড়া পেয়ে অবিভক্ত সিপিআই’এ যোগ দিয়েছিলেন। তপন ছিল বরুণদার অতি প্রিয়, যদিও ওদের বারদশেকের বেশি মুখোমুখি মোলাকাত হয়নি, দূরভাষে কখনো কখনো কথা হত। সেদিন ছিল দুজনের শেষ দেখা। নিত্যানন্দ ঘোষ ও দিলীপ সেনের উদ্যোগে সেদিন গাড়ী করে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। সেদিন দুজনেই (আমিও) সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ভাষণ শুনে খুব তৃপ্ত হয়েছিলাম। ভারতে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি ও দৌরাত্ম্যের বিষময়তার কথা দীপঙ্করের বক্তব্যে ফুটে উঠেছিল। তিনি আরও বলেন, বরুণদা ছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শ্রম বিষয়ক সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ ছিলেন রণনীতি ও বিদেশনীতি বিষয়ে। অসম বিষয়ে তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। শেষের দিকে শ্রীলঙ্কা নিয়েও অনেক লিখেছেন।

কবি মনোতোষ চক্রবর্তী ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন। অধ্যাপক নিত্যানন্দ ঘোষ ঘনিষ্ঠ দু’দশকের স্মৃতিচারণায় বলেন, বরুণদাকে দেখে কেউ বুঝতে পারতেন না তাঁর কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা, অথচ যেকোনো বিষয়ে তাঁর ছিল গভীর বোধ। অসমে কর্মজীবনের প্রথমদিকে তিনি কমলা মজুমদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন এবং কমলা মজুমদার তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি শুধু বড় পত্রিকাতেই লিখতেন তা নয়, ছোট পত্রিকাতেও লিখেছেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ‘সপ্তাহ’ পত্রিকার দিলীপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, প্যারেলালের গান্ধীর জীবনচরিত রচনার সময় তাঁর লাইব্রেরীতে মার্ক্সীয় দর্শনের একটি বই তাকে আকৃষ্ট করে। এরপর পান্নালাল দাশগুপ্তের প্রভাবে যুক্ত হন কমিউনিস্ট আন্দোলনে। ‘সপ্তাহ’ পত্রিকা শুরুর সময় থেকেই তিনি ছিলেন। এমন নির্ভীক নিরপেক্ষ সাংবাদিক পাওয়া কঠিন।

- দীপা জোয়ারদার

খণ্ড-28
সংখ্যা-45