আবেদন
৬ জানুয়ারি ২০২২ সিউড়ি চলো!
Seuri on January 6

ডেউচা-পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকার এখন পর্যন্ত যেভাবে এগিয়েছে তা চরম অগণতান্ত্রিক ও আইনবিরুদ্ধ। জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের প্রশ্নে ২০১৩ সালের আইনকে অমান‍্য করা হচ্ছে। প্রকল্পের সামাজিক প্রভাব ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সর্বসমক্ষে হাজির করা, প্রকল্প এলাকার মানুষকে অবহিত করে জনশুনানি করা এবং পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী, অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া আবশ‍্যক। এইসব প্রক্রিয়াকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাজ্য সরকার আগেভাগে ক্ষতিপূরণের একটা প্যাকেজ ঘোষণা করে দিয়েছে। এখন বীরভূম জেলা প্রশাসন স্থানীয় মানুষের উপর চাপ সৃষ্টি করে জমি অধিগ্রহণের সম্মতি আদায় করে নিতে চাইছে। স্থানীয় জনগণ এবং বিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে, শুরু হয়ে গেছে পুলিশি দমন-নিপীড়ন। এই পরিস্থিতিতে সম্মিলিত ঐক‍্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।

এই কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে আপত্তির আরও কারণ রয়েছে। এলাকার চার হাজারের উপর পরিবার উচ্ছেদ হবে, যাদের অধিকাংশই আদিবাসী-জনজাতি এবং সংখ্যালঘু। প্রকল্প এলাকার চারপাশের বহু গ্রাম, গঞ্জ ও শহরের আকাশ-বাতাস ও জনস্বাস্থ‍্য বিপর্যস্ত হবে এবং সামাজিক জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। দ্বারকা নদী এবং প্রকল্পের বহু দূর পর্যন্ত কৃষিক্ষেত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সর্বোপরি, নতুন করে আরও দুশো কোটি টন কয়লা পোড়ালে যে বিপুল কার্বন নিঃসরণ ঘটবে তা বিশ্ব উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করবে। সুন্দরবন সহ দুই চব্বিশ পরগণা ও পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আগামী কয়েক দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে জলের তলায় তলিয়ে যাওয়ার বিপদসীমায় দাঁড়িয়ে আছে। জলবায়ু সঙ্কটের ধাক্কা ঘনঘন সমুদ্রঝড়ের মাধ‍্যমে আমরা খানিকটা প্রত‍্যক্ষ করতেও শুরু করেছি। কিন্তু রাজ্য সরকার এইসবের কোনো তোয়াক্কা করছে না।

পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু সঙ্কটের প্রেক্ষিতে আগামী ১০০ বছর কয়লার যোগান দেওয়ার জন্য আরেকটা নতুন কয়লা খনির আদপেও কি কোনো প্রয়োজন আছে? এতে বাড়তি কর্মসংস্থান কতই বা হবে এবং কিসের বিনিময়ে? বিশ্বজুড়ে যখন কয়লা এবং খনিজ তেলের বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে, ভারত বা পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই রাস্তায় হাঁটছে না কেন? এই সমস্ত প্রশ্নে রাজ্যজুড়ে গণবিতর্কের প্রয়োজন আছে।

দেওয়ানগঞ্জ-হরিণসিঙা অঞ্চলে বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণ রুখতে, স্থানীয় মানুষের জমি-জীবন-জীবিকার অধিকার রক্ষার্থে এবং কয়লা চালিত বিদ্যুতের বিকল্প, পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাবিতে আগামী ৬ জানুয়ারি, বেলা ১২টায় সিউড়ি জেলাশাসক দপ্তরে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের সকল প্রগতিশীল, গণতন্ত্রপ্রিয় শক্তি এবং ব্যক্তিদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সবান্ধবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাতে উদ্যোগী হয়েছেন নানা বিশিষ্টজন।

খণ্ড-28
সংখ্যা-46